খালেদা জিয়াকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। ডিভিশন দেওয়া হলেও বিছানা-বালিশ ও আসবাবপত্র অত্যন্ত নিম্নমানের। একজন অসুস্থ মানুষ হিসেবে তার খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কেউ তার এই বন্দি অবস্থাকে বীভৎস নির্যাতনের প্রতীক কনসানট্রেশন ক্যাম্পের সঙ্গে তুলনীয় বলে মনে করছেন।খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে এ প্রশ্ন তোলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক সমাজ।সোমবার (৯ এপ্রিল) বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোল টেবিল হলরুমে বিশিষ্ট চিকিৎসক সমাজের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।এতে লিখিত বক্তব্য দেন বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসক প্রফেসর ডা. সাইফুল ইসলাম।মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার ‘মামুলী’ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি সমর্থক চিকিৎসকরা।

বিএসএমএমইউতে কয়েকজন চিকিৎসক বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখার দুদিন পর সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘বিশিষ্ট চিকিৎসক সমাজ’ ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান মিয়া, অধ্যাপক একেএম আজিজুল হক, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক গোলাম মঈনউদ্দিন, অধ্যাপক মো. সাহাবুদ্দিন, অধ্যাপক শাহিদুর রহমান, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, অধ্যাপক মোস্তাক রহিম, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক এম এ সালাম।দুর্নীতির মামলায় দন্ড নিয়ে বন্দি খালেদা জিয়ার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে, যা নিয়ে বিএনপির অনাস্থা জানানোর মধ্যে বিএসএসএমইউতে তার ‘পছন্দের’ তিনি চিকিৎসককে তাকে দেখতে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

অধ্যাপক সাইফুল বলেন, সরকারের পছন্দের নতুন চিকিৎসক দল প্রাথমিক অনুসন্ধানে সমর্থ কিছু মামুলী এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন। এই সকল মামুলী পরীক্ষা বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান অগ্রসর রোগ অবস্থা ও অতি সুক্ষ্ন সমস্যাগুলো কোনো ক্রমেরই নির্ণয় করতে পারবে না।সিটি স্ক্যান, এমআরআই ইত্যাদি আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ এক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় ও উপশমে কার্য্কর ভুমিকা রাখতে পারে। তাই আমরা অবিলম্বে বেগম জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হওয়ার পর গত ৮ ফেব্র“য়ারি থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খখালেদাকে রাখাহয়েছে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে।সম্প্রতি খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে তার চিকিৎসায় কারা কর্তৃপক্ষের আহ্বানে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন,অনেকেরই বিশ্বাস যে, বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রশাসনিক তৎপরতার বিষয়টি যে এক রকম লোক দেখানো, হঠকারিতামূলক ও জনবিভ্রান্তি সৃষ্টির সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা।স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময়ে বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকগণ যথাস্থানে উপস্থিত থাকলেও তাদেরকে মামুলী সৌজন্য বিনিময়ের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে কোনো শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়নি।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সমস্যা নির্ণয়ে যে পরীক্ষাগুচ্ছ সম্পন্ন করার কথা, তা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেনন অধ্যাপক সাইফুল।তার লিভার, কিডনি, ফুসফুস, হৃদপিন্ড, অস্থির শক্তি নির্ণয় ইত্যাদি জীবন ও সুস্থতার সম্বন্ধীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না হওয়াটা একজন চিকিৎসক হিসাবে রোগীকে ‘অবহেলা না করা’ আচরণের নমুনা হিসেবে গ্রহণ করা যায় না।