ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের মানুষের প্রধান পেশা হচ্ছে লিচু চাষ। সলিমপুরের লিচু এ এলাকার মানুষকে এনে দিয়েছে সুখ আর সমৃদ্ধি। প্রসিদ্ধ এ লিচুর কদর এখন দেশ জুড়ে। লিচুর আয়েই চলে এলাকার মানুষের সারা বছরের ভরণ-পোষণ।ঈশ্বরদীর লিচুবাগানগুলোতে এখন বিপুল কর্মচাঞ্চল্য। এখানে আঁটির গাছের দেশি লিচু এবং কলম করে বোম্বাই লিচুর চাষ হয়। লিচুগাছগুলোর মাথায় বাঁশে করে তোলা হয়েছে সাদা কাপড়ের নিশান।এর কোনো কোনোটির সঙ্গে আছে বৈদ্যুতিক বাল্ব। চরমিরকামারী গ্রামের লিচু চাষি আলম সরদার বললেন, এটা হলো বাদুড় তাড়ানোর ব্যবস্থা। আগে তারা গাছের মগডালে কেরোসিন টিনের ঘন্টা বেঁধে তার সঙ্গে থাকা লম্বা দড়ি টেনে আওয়াজ করে বাদুড় তাড়াতেন।

বাড়ির বাইরে কেউ কেউ বাঁশের মাচান তৈরি করে তার ওপর চাটাইয়ের ছাউনি দিয়ে টং তৈরি করেছেন। সেখানে রাতভর আড্ডা জমে। বড় বড় সাউন্ড বক্স বসিয়ে বাজানো হয় জনপ্রিয় বাংলা-হিন্দি গান। বাগানগুলোও সব গায়ে গায়ে লাগানো। সারা রাত থাকে লোক চলাচল। ইদানিং লিচুর বাগান ভাঙার আগে আগে মেয়ে-জামাই বা দূরের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকেও দাওয়াত দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন অনেকে। বাগানেই চুলা করে রান্নাবান্না। ফলে বাদুড় আর সাহস পায় না লিচুবাগানে হানা দেওয়ার।সলিমপুর গ্রামের সফল চাষি হাসেম উদ্দিন। লিচুর আয় থেকে সংসার চালিয়েও ২ মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করে বিয়ে দিয়েছেন। মানুষ করেছেন, ২ ছেলেকেও। এখন তার চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি। তিনি একজন সুখী মানুষ। বর্তমানে তার মালিকানায় রয়েছে বিশালাকৃতির ৬৫টি লিচু গাছ। প্রতি মৌসুমে ৫ থেকে ৮ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেন। তিনি জানালেন, লিচু গাছগুলো তার ছেলের চেয়েও বেশি উপকারি। লিচু চাষ করে তার যে আয় হয় তা বছরে ১০ একর জমিতে উৎপাদিত ধানের চেয়ে বেশি।মানিকনগর গ্রামের মোঃ হাফিজুর রহমান মুকুলের এবার দুই শতাধিক লিচু গাছ রয়েছে। তিনি দির্ঘ ২০ বছর ধরে সফল ভাবে লিচু চাষ করে আসছেন। মুকুল বলেন, এবার শিলাবৃষ্টির কারণে লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই এবার তিনি অন্তত ৩ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার লিচু বিক্রি করবেন বলে আশাবাদি।

দির্ঘ দিন ধরে লিচুর ব্যবসা করছেন মোঃ মোবারক হোসেন। তিনি জানান, এবার তারা ৩’শ গাছ কিনেছেন। এসব গাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছেন তিনি।এমন সফলতার খোঁজ মেলে ঈশ্বরদী উপজেলার আনাচে-কানাচে। সবচেয়ে বেশি লিচুবাগান পৌর এলাকা, সলিমপুর, সাহাপুর, লক্ষ্মিকুন্ডা, দাশুড়িয়া, সাঁড়া, মুলাডুলি, জয়নগর, মানিকনগর, মিরকামারি, চরমিরকামারি, আওতাপাড়া, বড়ইচড়া, বাঁশেরবাদা, কামালপুর চর এলাকায়। বড় আকৃতি, ছোট বীজ, রসে ভরপুর এবং সুস্বাদু হওয়ায় এ লিচুর কদর সবখানে। এখন লিচুর ভরা মৌসুম। আর তাই ঈশ্বরদীর গ্রামে চলছে উৎসবের আমেজ। গাছ থেকে লিচু পেড়ে গাছের নিচেই প্যাকেট করে সেখান থেকে পাঠানো হচ্ছে ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। বাগান থেকেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বেশির ভাগ লিচু।লিচুর ব্যবসা মাত্র তিন সপ্তাহের। জ্যৈষ্ঠের প্রথম থেকে ২০-২২ তারিখ পর্যন্ত। এখন ভরা মৌসুম। প্রতিদিন বিশাল লিচুর হাট বসছে জয়নগর, শিমুলতলা, দাশুড়িয়া, আওতাপাড়া মোড়, সিলিমপুর মোড়। হাজার হাজার ঝুড়িতে ভরা হচ্ছে লাল টুকটুকে লিচু। তোলা হচ্ছে ট্রাকে। ঈশ্বরদীর লিচু যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।