তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে দায়ের করা মামলায় কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরের রিমান্ড ও জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিন ম্যাজিস্ট্রেট কেশব রায় চৌধুরী এ আদেশ দেন। এদিন আসিফকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক প্রলয় রায়। অপরদিকে আসামিপক্ষে রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করা হয়। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন ও রিমান্ড আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর ওই আদেশ দেন।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। মামলার ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন ও অপর আসামিদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা সংগ্রহের জন্য আসিফকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। অপরদিকে আসিফের পক্ষে আসাদুজ্জামান আসাদ, ফারুক মিয়াসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন শুনানি করেন। শুনানিতে তারা বলেন, আসিফ একজন সুপ্রতিষ্ঠিত কণ্ঠশিল্পী ও সুনামধন্য পরিবারের সন্তান। মামলায় তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। সারা দেশের মানুষ তাকে চেনেন। এ ছাড়া তিনি অসুস্থ।

যে কোনো শর্তে জামিন দিলে আসামি কোনো অবস্থাতেই পলাতক হবেন না। প্রয়োজনে প্রতি সপ্তাহেই তিনি আদালতে হাজিরা দেবেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে তেজগাঁও থানা পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই তাহেরা বেগম জামিনের বিরোধিতা করে রিমান্ড শুনানি করেন। এরপর বিচারক অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আসিফ বলেন, ২০০৮ সালে একটা চুক্তি হয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালে নতুন আইন হওয়ায় আগের চুক্তি মোতাবেক কেউই লাভবান হয়নি। আমার বিরুদ্ধে যারা মামলা করেছেন, তারাই আমার আগে ফেসবুকে কমেন্ট (কটূক্তি) করেছে। তারাই আমার মানহানি করেছে। কিন্তু আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করিনি। গত তিন বছর ধরে তারা এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করছে। বিষয়টি নিয়ে দুবার মোহাম্মদপুর থানায় গিয়েছিলাম।
২০১৪ সালে গ্রামীণফোন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হই। এ অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। ফেসবুকে আমি কোনো হুমকি দেইনি। আমার ভক্তরা দিতে পারেন। আদালতের ডকে (আসামি রাখার নির্ধারিত স্থান) দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সব সময়ই আসিফের মুখে হাসি ছিল।

এরপর আসিফের আইনজীবীরা ফের আদালতকে বলেন, সারা দেশের লোক আসিফকে চেনেন। তার পালানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রতিউত্তরে বিচারকও বলেন, আমিও তাকে চিনি। এরপর বিচারক আসিফের উদ্দেশে বলেন, আপনি মাঝে গান ছেড়ে রাজনীতি করেছেন। গান ধরে রাখলে রাজনীতি আরও ভালো করতে পারতেন। এরপর আসিফ বলেন, না আমি গান ছাড়িনি, এখনও ধরে রেখেছি। শুনানি শেষে আদালত আসিফের জামিন ও রিমান্ড আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গীতিকার, সুরকার ও গায়ক শফিক তুহিন সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মঙ্গলবার রাতে আসিফকে তার মগবাজারের অফিস থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলায় আসিফ ছাড়াও আরও অজ্ঞাত চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ১ জুন রাত ৯টার দিকে একটি বেসরকারি চ্যানেলের ‘সার্চ লাইট’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মামলার বাদী (শফিক তুহিন) জানতে পারেন, আসিফ অনুমতি ছাড়াই তার সংগীতকর্মসহ অন্য গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীদের ৬১৭টি গান সবার অজান্তে বিক্রি করেছেন।

পরে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, আসিফ তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আর্ব এন্টারটেইনমেন্টের চেয়ারম্যান হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গানগুলো ডিজিটাল রূপান্তর করে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন। এরপর মামলার বাদী ২ জুন রাতে অনুমোদন ছাড়া গান বিক্রির বিষয়টি উল্লেখ করে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট দেন। বাদীর ওই পাস্টের নিচে আসিফ অশালীন মন্তব্য ও হুমকি দেন। পরের দিন ১০টার দিকে আসিফ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভে আসেন। লাখ লাখ মানুষ তার লাইভে আসেন। লাইভে বাদীর বিরুদ্ধে অবমাননাকর, অশালীন ও মিথ্যা বক্তব্য দেন। আসিফ লাইভে বাদীকে শায়েস্তা করবেন বলেও হুমকি দেন। একই সঙ্গে ভক্তদের উদ্দেশে বলেন, শফিক তুহিনকে (বাদী) যেখানেই পাবেন, সেখানেই প্রতিহত করবেন। আসিফের ওই বক্তব্যের পর তার ভক্তরাও ফেসবুকে শফিক তুহিনকে হুমকি দেন।