দেশের ৭ম মেট্রোপলিটন পুলিশ হিসেবে রোববার থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করলো গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ( জিএমপি)। রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার গণভবন থেকে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জিএমপি’র আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে গাজীপুর জেলা পুলিশ লাইনস ময়দানে বর্ণিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পুলিশ বাহিনী যাতে মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আজকে আমরা মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠন করেছি। আমরা চাই মানুষ খুব দ্রুত তার সেবাটা পাক। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখে গাজীপুর ও রংপুরে মেট্রোপলিটন পুলিশ গড়ে তুলেছি। তিনি তাঁর সরকারের আমলে পুলিশকে দেয়া নানা সুযোগ সুবিধার কথা উল্লেখ্য করে বলেন, আমরা পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য রাজারবাগে হাসপাতাল তৈরী করে দিয়েছি। আবাসনের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করে দিয়েছি। আমি চেষ্টা করেছি যে, এ বাহিনীকে শক্তিশালী ও উন্নত করতে। তারা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেন মানুষের সেবা করে যেতে পারে। সেদিকেও দৃষ্টি রেখে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, দেশের উন্নতি করতে হলে দেশের শান্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। তিনি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নাশকতা প্রতিরোধ, মাদক নির্মূলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে পুলিশের সফলতার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন পোশাক শ্রমিকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। পোশাক শ্রমিক লিপি আক্তার প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, গাজীপুরে আমাদের লক্ষ লক্ষ মহিলা গার্মেন্টস কর্মী রয়েছে। আপনি তাদের বেতন ভাতা বৃদ্ধিসহ সকল ধরণের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমরা আপনার নিকট চির কৃতজ্ঞ। আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় আপনাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবো।

অনুষ্ঠানে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের নতুন কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, দেশের অন্যতম শিল্প নগরী গাজীপুরের জনগণের জান ও মালের সার্বিক নিরাপত্তাসহ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন, মাদকমুক্ত গাজীপুর গঠন এবং জাতির পিতার সোনারবাংলা গঠনে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিটি সদস্য আজ অঙ্গীকারাবদ্ধ রয়েছে।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন গঠণের প্রায় চার বছর পর ২০১৭ সালের অক্টোবরে গঠিত হয় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)। এর প্রায় ১০ মাস পরে ২০১৮সালের ৯সেপ্টেম্বর জিএমপি লোগো চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর আগে ১৯এপ্রিল জাতীয় সংসদে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন-২০১৮ জাতীয় সংসদে পাশ হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, গাজীপুর সিটি মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী মোঃ আতিকুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগর আওয়মীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমতউল্লাহ খান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. হারুন অর রশিদসহ সরকারি, বেসরকারী পর্যায়ের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

পরে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি ঢাকা- গাজীপুর সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র‌্যালিতে পুলিশ সদস্য, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।

এদিকে জিএমপি’র উদ্বোধন উপলক্ষ্যে গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা জাগ্রত চৌরঙ্গী মোড় ও সড়ক দীপগুলো ডিজিটাল ব্যানার দিয়ে বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত করা হয়। ব্যানারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি’র ছবি এবং পুলিশের নানা সেবার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জিএমপি’র প্রধান কার্যালয়টি আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। সন্ধ্যায় দেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের নিয়ে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে জিএমপিতে ১ হাজার ১৫২জনের লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া তাদের পদায়ন, আটটি থানার জন্য ভবন ভাড়াসহ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। একই সঙ্গে সিটি কর্পোশেনের আওতাভূক্ত আটটি থানার আয়তন নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

জিএমপির নতুন থানা ও এর অধিভূক্ত এলাকা সমূহ হলো (১) সদর থানা- (বর্তমান জয়দেবপুর থানা)- এর অধিভূক্ত সিটির ওয়ার্ডগুলো হলো-১৯, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ নং ওয়ার্ড। (২) বাসন থানা (ভোগড়া বাইপাস)-এর অধিভূক্ত ওয়ার্ড হলো- ১৩, ১৪, ১৫, ১৬,১৭, ১৮, ২০, ২১ ও ২২নং ওয়ার্ড। (৩) কোনাবাড়ি থানা (কোনাবাড়ি)-এর অধিভূক্ত ওয়ার্ডগুলো হলো- ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২নং ওয়ার্ড। (৪) কাশিমপুর থানা (সারদাগঞ্জ পুকুর পাড়)-এর অধিভূক্ত ওয়ার্ডগুলো হলো- ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ড। (৫) গাছা থানা (মালেকের বাড়ি)-এর অধিভূক্ত ওয়ার্ডগুলো হলো- ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫,৩৬, ৩৭ ও ৩৮ নং ওয়ার্ড। (৬) পূবাইল থানা (মীরের বাজার রেলক্রসিং সংলগ্ন)-এর অধিভূক্ত ওয়ার্ডগুলো হলো- ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নং ওয়ার্ড। (৭) টঙ্গী পূর্ব থানা (বর্তমান টঙ্গী থানা)-এর অধিভূক্ত ওয়ার্ডগুলো হলো- ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭ নং ওয়ার্ড (শালিক চূড়া পূর্ণ ও গাজীপুরা পূর্ণ),৪৮,৪৯, ৫০ (আংশিক), ৫৫ (আংশিক), ৫৬, ও ৫৭ (আংশিক) নং ওয়ার্ড এবং (৮) টঙ্গী পশ্চিম থানা (খাঁপাড়া রোড)- সিটির ৫০ (আংশিক), ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৪, ৫৫ (আংশিক) ও ৫৭ (আংশিক)।