অ্যাচিভমেন্ট বা কৃতিত্ব কী এবং কীভাবে তার প্রতিফলন হতে পারে? কোন ধরণের কৃতিত্ব সেরা প্রশংসা যোগ্য এবং কেন? সংগ্রামী জীবনে ত্যাগ এবং ভোগের সমন্বয় এক সংগে ঘটে না। দেওয়া নেওয়াটা জীবনের প্রথম চ্যালেঞ্জ যা শিখতে কিছু মানুষের সারা জীবন কেটেছে। তবুও তারা শুধু নিতে শিখেছে, দিতে নয়। আবার কারো জন্মই হয়েছে শুধু দেবার জন্য, আছে কি তেমন উদাহরণ ? দেওয়া- নেওয়ার সমন্বয়ে মনুষ্যত্বের বেস্ট প্রাকটিস অব্যহত রাখা মানবজাতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ । এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে গিয়ে হাজারো বাঁধা-বিঘ্নের সম্মুখীন হতে হয়, আর তার প্রতিফলনকেই বলতে পারি অ্যাচিভমেন্ট।

এই অ্যাচিভমেন্ট হতে পারে মানবজাতির জন্য ভালো বা মন্দ। মাছ স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটে, একটি ডিমের ভিতরে নতুন জীবনের সূচনা ঘটে, পরে বাইরের জটিলতা ভেঙ্গে বের হয় ছোট মুরগীর বাচ্চা হয়ে।ছোট্ট একটি বীজ মাটি ভেদ করে হাজারো সমস্যার সম্মুখীন হয়ে বেড়ে ওঠে। মানব জাতির ক্ষেত্রে সাধারণত একই ঘটনা ঘটে। বীজ থেকে যেমন গাছ হয়, পরে ফুল এবং ফল হয়, ঠিক একই ভাবে মানব জাতির জন্ম থেকে তার কৈশোর, পরে যৌবন এবং শেষ জীবনের পুরো সময়টুকু যদি বিশ্লেষণ করি তবে নিশ্চিত দেখতে পাবো প্রতিটি মানুষের জীবনের অ্যাচিভমেন্ট। কৃতিত্ব পেতে হলে হয় কঠিন পরিশ্রম বা সাধনা করতে হবে অথবা জন্মগত ভাবে সুযোগ সুবিধার সমন্বয় ঘটাতে হবে। যেমন রাজার পরিবারে জন্ম গ্রহন করা এবং সব ধরণের সুযোগ সুবিধা উপভোগ করা এটাকে কৃতিত্ব বললে ঠিক হবে কি? এখানে আমরা ভাগ্যের বিষয়টিকে চিন্তা করতে পারি। কিন্তু জন্ম থেকে যাদের প্রতিটি পদক্ষেপে সংগ্রাম করে জীবনকে মর্যাদা সম্পন্ন করে গড়ে তোলার জন্য সব ধরণের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয় এবং সে জীবন যদি পরিপুর্ণতা লাভ করে, তখন নিশ্চিন্তে অ্যাচিভমেন্টের প্রতিফলন হয়েছে বলতে পারি। আমি আমাকে দিয়ে দেখি কীভাবে জীবন যুদ্ধে নানা ধরণের বাধা-বিঘ্নের মোকাবেলা করেছি। বাংলাদেশের সুযোগ সুবিধা বা অসুবিধা এর থেকে বেছে নিয়েছিলাম বিদেশের সুযোগ সুবিধা বা অসুবিধাগুলো। বাংলাদেশে আমার সামনের বাধা-বিঘ্ন বা সুযোগ সুবিধাগুলো কী তা আমি মোটামুটি জানতাম, কিন্তু সুইডেনের কিছুই জানতাম না। শুধু আশা এবং সম্ভবনার উপর ভিত্তি করে বাড়িয়েছিলাম একমাত্র মানষিক শক্তি। এখানে আসার পর এখানকার শিক্ষা, সংস্কৃতি, ভাষা, ওয়েদার এত সব বাধা-বিঘ্ন নিঃসন্দেহে একজন সাধারণ সুইডিসের তুলনায় আমার জন্য ছিল অসাধারণ বলতে হবে, তা সত্ত্বেও যদি আমি তাদের সমমানের পারফরমেন্স করতে সক্ষম হই তখন বলতে পারি আমার কৃতিত্ব প্রশংসানীয়। খেলাধুলোর ক্ষেত্রে কৃতিত্বটা বেশ সহজে যেমন দেখা যায়, তেমনটি জানা যায় না কী পরিমান শ্রম জড়িত রয়েছে এই কৃতিত্বের পিছনে। সবাই আশা করে সাফল্য কিন্তু অনেকেই জানে না এই সাফল্যের পিছনে কী পরিমান ত্যাগ, কর্ম, ডেডিকেশন এবং মোটিভেশন জড়িত রয়েছে। ডিজাইনের ক্ষেত্রে পরিস্কার যে একটি নতুন শার্ট কপি করে তৈরি করা, আর শার্টটি সম্পূর্ণ নতুন করে, নতুন ডিজাইনে তৈরি করা, কার কৃতিত্ব বেশি এখানে? নতুনত্বের বিকাশ সব সময়ই প্রশংসনীয়। যা নেই বা আগে ছিল না তাকে যখন মানব কল্যানে ব্যবহারের উপযোগী করা হয় এবং যারা এমন কাজে তাদের সময়কে উৎসর্গ করতে সক্ষম হয় তাদের কর্মের প্রতিফলনই অ্যাচিভমেন্ট।

অ্যাচিভমেন্ট হতে পারে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক বা সর্বজনীন। একজন ছাত্র যখন তার মৌলিক কাজকর্মের প্রতিফলনকে ভৌগোলিক পর্যায়ে উপনীত করতে সক্ষম হয় এবং তা যদি ‘ ক্রিয়েট ভ্যালু ফর হিম এন্ড আদারস’ সঙ্গে যদি নতুনত্বের সমন্বয় ঘটাতে পারে তখন তার অ্যাচিভমেন্ট রেওয়ার্ড হিসাবে নবেল পুরস্কার পেতে পারে, যা বাংলাদেশের সন্তান ড. মুহম্মদ ইউনুস প্রমান করেছেন। এই নবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পুনরাবৃত্তি আবারও হতে পারে আমাদের বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে দিয়ে। কারণ তাঁর শাসন আমলে রহিঙ্গা ইস্যুর ক্রিটিক্যাল সময় বাংলাদেশ এতবড় একটি দায়িত্ব নিয়েছে যা নিঃসন্দেহে হতে পারে শেখ হাসিনার জীবনের সবচেয়ে বড় অ্যাচিভমেন্ট। প্রসঙ্গতঃ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও, হত্যার হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের দিকে ঢল ছুটেছিল সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর। গত বছরের আগস্টের ওই সহিংসতায় সীমান্ত উন্মুক্ত করে বাংলাদেশে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যমে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন প্রজন্মের গোলস এন্ড অবজেকটিভস হোক সুশিক্ষার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহন করা, তাহলে তাদের অ্যাচিভমেন্ট হবে মানবকল্যাণের জন্য এক বিরাট প্রাপ্য।

এমনটি প্রত্যাশায় আমি রহমান মৃধা দূরপরবাস সুইডেন থেকে।