বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, সময় কম, অল্প সময়ের মধ্যে এই সরকারের বাঁধ ভাঙতে হবে। মাঠে নামতে হবে যাতে সরকার আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মওদুদ বলেন, সরকার মনে করেছিল, খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করলে বিএনপি খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যাবে। বর্তমান বিএনপি আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ।জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকে সরকারকে আমরা বিচলিত দেখতে পাচ্ছি উল্লেখ করে মওদুদ বলেন, বিভিন্ন রকমের বক্তব্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন তারা ঐক্যফ্রন্টকে ভয় পান। এই ঐক্যের মাধ্যমে আমরা যে সঠিক কাজ করেছি সরকারের সমালোচনা শুনেই সেটা বুঝতে হবে। তাদের অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যে প্রমাণ হয়ে গেছে আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে পরাজিত হবে।

দেশের মানুষের মধ্যে একটা আশা তৈরি হয়েছে দাবি করে মওদুদ বলেন, আজকে গ্রামগঞ্জের মানুষ একটাই কথা বলে, ঐক্য হয়ে গেছে। মনে একটা আশা তৈরি হয়েছে। একটা আশার আলো দেখতে পারছেন দেশের মানুষ। নিজেদের মধ্যে একটা আস্থা ফিরে পেয়েছেন। মানুষ আশা দেখছেন আগামী নির্বাচনে নিজেদের ইচ্ছামতো ভোট দিতে পারবেন।সরকার এককভাবে নির্বাচন করতে চায় অভিযোগ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, দেশে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, বর্তমান মন্ত্রিসভার একজন মন্ত্রীও জিততে পারবেন না এবং তাই হবে। এই ভয়ে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চান না। আর তিন মাসও নেই, কিন্তু সরকারের আচরণ দেখে বোঝা যায় তারা আজকে কতটা ভীত। সরকারের উচিত ছিল নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা। কিন্তু উল্টো প্রমাণ করেছে, তারা একক নির্বাচন করতে চায়। শুধু এই লক্ষ্যে তারা কাজ করছে। সরকারই ইচ্ছেকৃতভাবে পরিবেশ নষ্ট করছে।

নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মওদুদ বলেন, ‘১ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে। এক একটি মামলায় ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে আজকে নেতাকর্মীদের আগাম জামিনের জন্য আসতে হচ্ছে ঢাকায়। সাড়ে তিন লাখ আসামি করেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। এটা কি নির্বাচনের পরিবেশ? ভুতুড়ে মামলা করে সব নেতাকর্মীদের নিক্রিয় করে দেওয়া হচ্ছে।সম্প্রতি পাশ করা আইনের সমালোচনা করে মওদুদ বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করে তারা আজকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। এটা সরাসরি সংবাদ মাধ্যমে হস্তক্ষেপ। সম্প্রচার আইন করা হয়েছে নির্বাচনের আগে সরকারের সমালোচনা যাতে না করতে পারে। গনমাধ্যমগুলোকে শুধু সরকারের উন্নয়নের গান গেতে হবে, কোনও সমালোচনা করা যাবে না।সরকারের জনপ্রিয়তা নিচে নেমে গেছে দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ঐক্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকারের আঁতে ঘা লেগেছে। সরকারের পরাজয় হবে সামনে। সিলেটে জনসভার জন্য পরশু দিন অনুমতি দেওয়া হলো, আবার নিয়ে নেওয়া হলে। এতে প্রমাণিত— সরকার জনপ্রিয়তায় কত নিচে নেমে গেছে। জনগণ তাদের সঙ্গে নেই এটাই তারা বারবার প্রমাণ করছেন।

বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতি করবে না উল্লেখ করে মওদুদ আরও বলেন, আমরা আগামীতে প্রমাণ করবো দেশের মানুষ বিএনপিকে পছন্দ করে। কঠিন কাজ একটি স্বৈরচার সরকারকে হটানো। তারাই আজকে বলছে সরকার ক্ষমতায় না থাকলে তিন লাখ লোক মারা যাবে। আপনারা যদি এতই ভালো কাজ করে থাকেন তাহলে ভয় কিসের? তারা অন্যায়-অত্যাচার, দুর্নীতি করেছে বলেই ভয় পাচ্ছে। তবে আমি বলে রাখতে চাই, আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করবো না।আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ, বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের উপদেষ্টা সাঈদ আহমেদ আসলাম, সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমান প্রমুখ।