কারাগারে হামলা করে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান নেতা জসিম উদ্দিন রহমানীকে মুক্ত করে আনার পরিকল্পনাকারী ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব)-১ এর একটি বিশেষ দল। এছাড়াও গ্রেফতারকৃতরা সাংবাদিক ও অনলাইন একটিভিস্টদের হত্যার পরিকল্পনাও করেছিলো বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিং করে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান।

গ্রেফতারকৃত এবিটির সদস্যরা হলো– মো. শাহরিয়ার নাফিস ওরফে মো. আম্মার হোসেন (২০), মো. রাসেল ওরফে সাজেদুল ইসলাম গিফারী (২৪), মো. রবিউল ইসলাম ওরফে নুরুল ইসলাম (২৪), মো. আবদুল মালেক (৩১)। গত ২৮ জানুয়ারি আশুলিয়া থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য মো আবদুস ছোবহান ওরফে হাবিব (২৮) নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়ে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে মুফতি মাহমুদ বলেন, বিভিন্নভাবে সংগঠনকে উজ্জীবিত করার কাজ করে যাওয়া এবিটির এই সদস্যদের অন্যতম পরিকল্পনা হলো তাদের সংগঠনের প্রধান জসিম উদ্দিনকে জামিনে মুক্ত করা। যদি আইনি প্রক্রিয়াতে মুক্ত করতে না পারে তবে কারাগারে হামলা করে তাকে মুক্ত করার পরিকল্পনা করেছিলো এই সদস্যরা। নেতাকে মুক্ত করতে সংগ্রহ করা অর্থের একাংশ গ্রেফতারকৃত রাসেলের কাছে জমা ছিলো বলেও জানান তিনি।

সাংবাদিক হত্যার পরিকল্পনার ব্যাপারে জানিয়ে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, শুধুমাত্র নেতাকে মুক্ত করার মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলো না এই সদস্যরা। একটি জাতীয় পত্রিকায় জুলাই মাসের ২৮ তারিখে বিয়ে সংক্রান্ত একটি প্রবন্ধ প্রকাশের কারণে ওই পত্রিকার সম্পাদককে হত্যার পরিকল্পনাতেও ছিলো এবিটির এই সদস্যরা। এজন্য তারা গোপনে এবিটির মতাদর্শী সদস্যদের সুসংগঠিত করার চেষ্টাও করছিলো। তবে এই চেষ্টা সফল হওয়ার আগেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

অনলাইন একটিভিস্ট হত্যা পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়া শাহরিয়ার বগুড়ার ধুনট উপজেলার মাদরাসা থেকে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে। এর পরে ফেসবুকের মাধ্যমে সক্রিয় সদস্য আমানের মাধ্যমে এবিটিতে যোগ দেয়। আমানের নির্দেশে ৪-৫টি ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করে নিজেদের প্রচারণা চালাতো ও জঙ্গি সদস্য সংগ্রহের কাজ করতো। এবিটির টার্গেট কিলিং মিশনের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধু হয়ে অনলাইনে বিভিন্ন একটিভিস্টদের ওপরে নজরদারি রাখা শুরু করে। এই ধারাবাহিকতায় গ্রেফতারকৃতরা ছদ্মবেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিন্ন মতাদর্শের একটিভিস্ট গ্র“পে নজরদারি করে ও সংগঠনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সেই গ্র“পের এক সদস্যকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনাতে দায়িত্ব দেওয়া হয় গ্রেফতার শাহরিয়ার ও অপর দুই সদস্যকে। এ উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে একজন ধারালো অস্ত্রসহ এবং অপর একজন সদস্য বরগুনা থেকে বগুড়াতে যায়।অনলাইনে ফোন করে সেই সদস্যের সাথে সাক্ষাতের চেষ্টা করলেও সেই ব্যক্তি সাক্ষাৎ না দেওয়াতে তাদের মিশনটি সম্পন্ন হয়নি। পরে তারা নিজ নিজ স্থানে ফিরে যায়।

গ্রেফতারকৃত রাসেল ওরফে সাজেদুল ইসলামের পরিচয় জানিয়ে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ভোলার ফুলকাছিয়া গ্রাম থেকে ২০১৩ সালে এসএসসি পাস করে গার্মেন্টসে চাকরি নেয় রাসেল। সে সময় সে ফেসবুকে বিভিন্ন উগ্রবাদী পোস্ট ও ভিডিও দেখতো এবং অন্যদের সাথে আলোচনা করতো। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি ফেসবুকে এক গ্র“পের মাধ্যমে আমানের সাথে তার পরিচয় হয়। ছদ্মবেশে একটি কন্সট্রাকশন ফার্মে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলো। সে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সমন্বয়ক হিসেবে নিয়ন্ত্রকের নির্দেশনায় বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ ও তাদের কাছে অর্থ সংগ্রহ ও সংগঠনের জন্য নতুন সদস্য সংগ্রহ করতো।

আটক নুরুল ইসলাম এর পরিচয় জানিয়ে মুফতি মাহমুদ বলেন, ২০১০ সালে দাখিল পাস করে বগুড়া পলিটেকনিক্যাল থেকে ২০১৫ সালে সে ডিপ্লোমা ডিগ্রি সম্পন্ন করে। ২০১৮ সালে শাহরিয়ারের মাধ্যমে সে এবিটিতে যোগ দেয়। আটক মো: আবদুল মালেক পেশায় একজন প্রাইভেট গাড়ি চালক। সে ২০১৮ সালে রাসেলের মাধ্যমে এবিটিতে যোগ দেয়।গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান।