দেশের উন্নয়নে প্রকৌশলীদের উদ্ভাবনী শক্তি আরও বেশি বৃদ্ধি করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর রমনায় আইইবি চত্ত্বরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ’র ৫৯তম কনভেশনের উদ্বোধনী অধিবেশেনের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে দেশের মাটি মানুষ, আবহাওয়া জলবায়ু; সবকিছুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ গ্রহণ করতে পারি, সে বিষয়ে আমাদের নিজেদেরই কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬; ২১টা বছর হারিয়ে যায়। যে উন্নয়নটা আমাদের হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, সেটা কিন্তু হয়নি। যদি সঠিক নেতৃত্বের হাতে পড়ত। জাতির পিতা যদি বেঁচে থাকতেন, বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বে একটা মর্যাদা পেত।

২১ বছর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার একটা সুযোগ পেল। আমরা সবসময় এই প্রচেষ্টাই নিয়েছি আমাদের দেশের লোকসংখ্যাকে বিবেচনা করে দেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করা, পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা, জীবনমান উন্নয়ন করা এবং তার জন্য সুন্দর পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার সৃষ্টি করা। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি এবং কাজ করেছি।

২০০১ সাালে বিএনপি-জামায়াত সরকারে এসে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, বোমাবাজি, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া থেকে শুরু করে দেশে একটা দুঃশাসন কায়েম করেছিল বলেও দাবি করেন তিনি।

পরবর্তীতে ৭ বছর পরে আবার পুনরায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার কথা তুলে ধরে বিগত মেয়াদে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও পরিকল্পনায় দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

এ বিষয়ে প্রকৌশলীদের অবদান ও সহায়তার কথা তুলে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এ কাজগুলো করে যাচ্ছি তাতে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন বলেই আমরা তা বাস্তবায়ন করে সাফল্য অর্জন করতে পাচ্ছি। আমরা আপনাদেরও বঞ্চিত করিনি। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের এই প্রায় ১০ বিঘা জমিটা আপনাদের প্রতীকী মূল্যে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছিলাম। এ ভবন তৈরির টাকাও কিন্তু আমরা দিয়েছি।

প্রকৌশলীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিজ্ঞান প্রযুক্তির যেমন বিস্তার ঘটছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ধাবন হচ্ছে। তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ করার ঘোষণা দিয়েছি। আমরা এখন সমগ্র বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড এবং আমাদের ডিজিটাল সিস্টেম চালু করেছি। সেটাকে আরও উন্নত করার পদক্ষেপ নিয়েছি। এরইমধ্যে আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। সেই সঙ্গে ই-গর্ভনেন্স চালু করতে চাই। যার জন্য এখন টেন্ডার বাক্স ছিনতাই আর শোনা যায়।

আমরা ধীরে ধীরে ই-টেন্ডারে চলে যাচ্ছি। কিছু কিছু মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে আছে। সেখানেও আমরা জোর দিয়েছি, সব জায়গায় ই- টেন্ডারের দিকে যেতে হবে। যাতে আমরা দুর্নীতি করে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারি সেই সঙ্গে আরও উন্নত ভাবে কাজ করতে পারি। মান যেন ঠিক থাক। সেই বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছি’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, যখনি আমরা কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করি, এটা মাথায় রাখতে হবে আমাদের ভূখন্ড খুব সীমিত, লোকসংখ্যা বিশাল। আমাদের সীমিত ভূমিতে আমাদের এখন যে ১৬ কোটির উপরে মানুষ, তাদের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে হবে। পুষ্টি নিরাপত্তা দিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবনমানের যাতে উন্নতি হয় সে উন্নয়নও আমাদের করতে হবে।

আর এই উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষাকে সবথেকে গুরুত্বের পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রকৌশলীদের দক্ষতা, মেধা ও অভিজ্ঞতার প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আমাদের অনেক ক্ষেত্রে এখন নিজেরাই কাজ করার সক্ষমতা অর্জন করছি। আমাদের উদ্ভাবনী শক্তিটা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজেই গবেষণাটা সবসময় প্রয়োজন। আপনাদের কাছেও আমরা চাইবো, ইঞ্জিনিয়ারিং খাতেও আমাদের গবেষণার দিকে আপনাদের আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত এবং গবেষণার মধ্য দিয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে আমাদের দেশের মাটি মানুষ, আবহাওয়া জলবায়ু; সবকিছুর সাথে সামঞ্জস্য রেখে কিভাবে আমরা উন্নয়ন কৌশলটা গ্রহণ করতে পারি, সেবিষয়ে আমাদের নিজেদেরই কাজ করতে হবে। কারণ আমাদের দেশের মানুষ অনেক মেধাবী।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীকে আইইবি কনভেনশনের ব্যাজ পরিয়ে দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন আইইবি ইঞ্জিনিয়ার্সের শিল্পীরা। এরপর কনভেশনের থিম সং পরিবেশিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আইইবি’র প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুর। বক্তব্য রাখেন আইইবি’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ। এছাড়াও আইইবির ঢাকা সেন্টারের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ওয়ালিউল্লাহ সিকদার বক্তব্য রাখেন এবং ধন্যবাদ প্রদান করে বক্তব্য রাখেন আইইবি ঢাকা কেন্দ্রে সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শাহাদাত হোসেন শিপলু।

অনুষ্ঠানে প্রকৌশলীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। পদকপ্রাপ্তরা হলেন প্রকৌশলী কবির আহমেদ ভুঁইয়া, প্রকৌশলী দীপক চন্দ্র দাস, মরহুম প্রকৌশলী খিজির খান। এছাড়াও শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র হিসাবে ঢাকা কেন্দ্র এবং পাবনা উপকেন্দ্র সনদপ্রাপ্ত হন। আর শ্রেষ্ঠ প্রকৌশল বিভাগ হিসাবে আইইবি’র কম্পিউটার বিভাগ নির্বাচিত হন।