ফেনীতে শিশু হত্যা ও লাশ গুমের সাড়ে তিন বছর পর আদালতে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন তৌহিদুল ইসলাম জনি নামে এক ব্যক্তি। বুধবার বিকেলে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসাইনের আদালতে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেন। মূলত শিশুটির বাবার সাথে আসামীর মাদক ব্যবসার বিরোধের জের ধরেই শিশু পুত্রকে হত্যা ও লাশ গুম করে প্রতিশোধ নেয়া হয়।

আদালত সূত্র জানায়, গত ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর ফেনী পৌরসভার মাষ্টার পাড়ার অধিবাসী জসিম হাজারীর তিন বছরের শিশু পুত্র শহিদুল ইসলাম আবিরকে মুখে গামছা, জিআই তার দিয়ে হাত ও পা বেঁধে হত্যার পর লাশ পাশের একটি ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল। হত্যাকান্ডের পর ওই বছর ২৪ অক্টোবর শিশুর বাবা জসিম হাজারী বাদি হয়ে ফেনী সদর মডেল থানায় দন্ডবিধির ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৬৬, তাং ২৪/১০/১৫)। ফেনী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেন দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২৫/৮/১৬ ইং আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। কিন্তু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসাইন মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে ২৬/১০/১৭ ইং মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দিয়ে সিআইডি পুলিশের নিকট হস্তান্তরের নির্দেশ দেন।

সিআইডি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাহাব উদ্দিন মজুমদার তদন্তের এক পর্যায়ে গত ২৫/২/১৯ তারিখ আসামী তৌহিদুল ইসলাম জনিকে গ্রেপ্তার করেন। ২৭/২/১৯ তারিখ আসামীকে আদালতে উপস্থাপন করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেন। ৪/৩/১৯ তারিখ রিমান্ড আদেশের শুনানী শেষে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বুধবার আসামী তৌহিদুল ইসলাম জনিকে আদালতে উপস্থিত করা হলে তিনি শিশু আবিরকে হত্যার দায় স্বীকার করে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন।

আসামী তৌহিদুল ইসলাম জনি বলেন, তাঁর সাথে ওই শিশু আবিরের বাবা জসিম হাজারীর ইয়াবা ও মাদক ব্যবসা সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। তারা দুইজন একই এলাকার বাসিন্দা ও প্রতিবেশী। ওই বিরোধের প্রতিশোধ নিতে গত ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর সকালে বাড়ির উঠানে শিশু আবিরকে একা পেয়ে ধরে জোর করে পাশের ভুট্টু মিয়ার নির্মাণাধীন একটি বাড়ির ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে শিশু আবিরকে গামছা দিয়ে মুখ, জিআই তার দিয়ে দুই পা ও দুই হাত বেঁধে রেখে দেওয়া হয়। তৌহিদুল রাত ৮টার দিকে আবার ওই ছাদে গিয়ে শিশু আবিরকে দেখে আসেন। তখনও আবির জীবিত ছিল। পরদিন ২৩ অক্টোবর ভোর ৪টায় গিয়ে দেখতে পায় শিশুটি মারা গেছে। ওই দিন রাতে শিশুর মৃতদেহ গোপন করার উদ্দেশ্যে পাশের জনৈক সামছুল হকের একটি ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, তিনি মাদকাসক্ত হওয়ায় উক্ত শিশু হত্যার বিষয়ে তাঁর মধ্যে ওই দিন কোন প্রতিক্রিয়া ছিল না। শুধুমাত্র জসিম হাজারীর উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য শিশু আবিরকে হত্যা করা হয়।

তৌহিদুল তাঁর জবানবন্দীতে আদালতকে জানায়, তিনি শিশুর লাশ উদ্ধারের পর তার জানাযার নামাজে অংশ নেন।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাহাব উদ্দিন মজুমদার জানায়, আসামী তৌহিদুল ইসলাম জনির বিরুদ্ধে শিশু হত্যার মামলা ছাড়াও অস্ত্র ও মাদকের দুটি মামলা রয়েছে।