বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় মাত্র দুই মিনিটের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকাগুলো। ঝড়ে ভেঙে গেছে বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, বৈদ্যুতিক খুটি। উপড়ে পড়েছে গাছপালা। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৩৫জন।  আহতদের মধ্যে ২৩ জনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার আড়িয়া, আমরুল, মাঝিড়া, চোপীনগর ও খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে এই ঝড় বয়ে যায়। এতে বন্ধ হয়ে গেছে উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন, মাত্র ২মিনিটের এ ঝড়ে শাজাহানপুর উপজেলার সাজাপুর চকপাড়া এলাকায় বগুড়া সেনানিবাসের তত্বাবধানে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নির্মাণাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘প্রয়াস’ স্কুলটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে স্কুল চত্বরে নির্মাণ শ্রমিকদের থাকার জন্য ইটের তৈরি একচালা টিনসেড ঘরের দেয়াল ভেঙে পড়ে ২১ জন নির্মাণ শ্রমিক আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করেন। আহতদের মধ্যে ৫জনের অবস্থা গুরুতর। আহতরা গাইবান্ধা, রংপুর, লালমনিরহাট, মাগুরাসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।

উপজেলার মাঝিড়া ইউনিয়নের সাজাপুর দারিকামারি পাড়ায় একটি মুরগির খামারের ইটের প্রাচীর ও টিনসেড লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এ সময় খামারের মালিক রেজাউল ও তার ছেলে ইয়ালিদ হাসান আহত হন। তাদের খামারের ১৬ দিন বয়সের সাড়ে পাঁচ হাজার মুরগীর বাচ্চা মারা গেছে। আড়িয়া ইউনিয়নের রহিমাবাদ দক্ষিণপড়ার বাসিন্দা মনির উদ্দিনের বসতঘর, পার্শবর্তী ইউনিয়নের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একটি কড়ইগাছ উপড়ে পড়েছে। এতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রাচীর ও বসতঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মঝিড়া পশ্চিমপাড়ার বিধবা খাদিজা বেওয়া, সাজাপুর গিলেমারি পাড়ার লুৎফর রহমান, সাজাপুর পদ্মপুকুর পাড়ার ছলেমান আলী সরকার, খলিশাকান্দি মোন্নাপাড়ার মিলন মিয়া, রহিমাবাদ শালুকগাড়ী পাড়ার মাকসুদা বেওয়াসহ উপজেলার অনেকেই। এ ছাড়া আড়িয়া বাজার এলাকায় ফুল মাহমুদের গ্যারেজ, সাজাপুর একটেল টাওয়ারের সামনে জাফর আলমগীরের গ্যারেজ, মাঝিড়ার জব্বার হাইওয়ে হোটেলের ৫টি টিনসেডসহ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।

ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে ফসলি জমি ও মৌসুমী ফলের বাগান। খলিশাকান্দি গ্রামে এক বিঘা জমির কলাবাগান, রহিমাবাদ দক্ষিণপাড়ায় আমবাগান ও কাঁটাবাড়িয়া গ্রামের একটি লিচু বাগানেও ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। শাজাহানপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূরে আলম জানান, ঝড় কবলিত এলাকায় কলা, ভূট্টা ও শাক-সবজি মিলিয়ে প্রায় ১৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ফলেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আব্দুল কুদ্দুস জানান, ঝড় কবলিত এলাকায় ৯টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে এবং ৪০টি স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে। এ কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা ঝড়ের পর থেকেই মাঠে কাজ করছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাবাবিক করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফুয়ারা খাতুন জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ক্ষয় ক্ষতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। রাতেই ঝড়ে আহতদের চিকিৎসার দ্রত ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে পরবর্তী সহযোগিতার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।