বাজেট ঘোষণার পর থেকেই রাজধানীর বাজারগুলোতে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে প্রতিদিনই। ভ্যাট, ট্যাক্স আর আমদানিতে অগ্রিম কর আরোপের চাপ পড়েছে বাজারটিতে, বলছেন ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, বাজেট ঘোষণার পরপরই হঠাৎ লাফ দিয়ে বাড়তে শুরু করে চিনি এবং গুঁড়া দুধের দাম। পরের সপ্তাহ থেকে বেড়েছে পেঁয়াজ, রসুন, তেলসহ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম।খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিমের দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা। একই সঙ্গে পেঁয়াজের দামও কেজিতে বেড়েছে পাঁচ থেকে আট টাকা।

ডিম ও পেঁয়াজের দাম বাড়লেও কমেছে মুরগির মাংসের দাম। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে কমেছে পাঁচ থেকে ১০ টাকা। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে সবধরনের মুদিপণ্য, সবজি, মাছ, গরু ও খাসির মাংসের দাম।শুক্রবার (৫ জুলাই) রাজধানীর নয়াবাজার, সূত্রাপুর, রায়সাহেব বাজার, ধূপখোলা মাঠ, দয়াগঞ্জ, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে ঈদের পর বাজারগুলোতে নজরদারি কমে যাওয়ায় ডিম ও পেঁয়াজের দাম দফায় দফায় বাড়ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তারা বলেন, মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বাজার নজরদারির দুর্বলতার সুযোগ নয়ে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ জন্য ভুগতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের। তবে ডিম ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, ডিমের যে চাহিদা বাজারে সরবরাহ তার থেকে কম। বাজারে ডিমের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, খামারিরা তা সরবরাহ করতে পারছেন না। সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় ডিমের দাম বেড়েছে। আর পেঁয়াজের স্টক কমে আসছে। পাশাপাশি দেড় মাস পর ঈদুল আজহা। সবাই এখন পেঁয়াজ রেখে দিচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে, বাজারে প্রতি ডজন ডিম ১১৫-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও ডিমের ডজন বিক্রি করেছেন ১০৫-১১০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে মুদি দোকানে এক পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০-১১ টাকায়। আর হালি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকা। সে হিসাবে তারা প্রতি ডজন ডিম বিক্রি করছেন ১২০-২৬ টাকা। অথচ এক সপ্তাহ আগেও খুচরা দোকানগুলোতে ১০৫ টাকা ডজন ডিম পাওয়া গেছে। এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দামও কেজিতে বেড়েছে পাঁচ থেকে আট টাকা। বর্তমানে বাজারে প্রতিকেজি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা।

সূত্রাপুর বাজারের ডিম ব্যবসায়ী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বাজারে এখন ডিমের চাহিদা অনেক। কারণ মাছ মাংসের দাম বেশি। ফলে খামারিরা চাহিদা অনুযায়ী ডিম সরবরাহ করতে পারছেন না। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া বর্ষার মৌসুমে ডিমের উৎপাদনও কমে যায়। গত সপ্তাহে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি করেছি ১১৫ টাকা, এর আগের সপ্তাহে ছিল ১১০ টাকা, ঈদের আগে ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা। এখন বিক্রি করছি ১২০ টাকা ডজন।

এদিকে ডিমের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। বাজারে ডিম কিনতে আসা হারুন দেওয়ান বলেন, বাজারে দামের কথা বলে কোনো লাভ নেই। কে শুনে কার কথা। কয়েক সপ্তাহ ধরেই ডিমের দাম বাড়ছে। গত সপ্তাহে এক ডজন ডিম কিনেছি ১১৫ টাকায়। কিন্তু সপ্তাহ না ঘুরতেই এখন ১২০ টাকা ডজন হয়েছে। বাজারে কোনো কিছু দামের নিয়ন্ত্রণ নেই। যখন তখন ব্যবসায়ীরা যে কোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এটি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কারো কি কোনো উদ্যোগ আছে। এর আগে গরুর মাংসের দাম হুহু করে বেড়ে গেলো। কিন্তু কেউ কোনো পদক্ষেপ নিলো না। এখন পরিস্থতি এমন হয়েছে সাধারণ মানুষ আর কিছু খেয়ে পড়ে বাচঁতে পারবে না।

পেঁয়াজ ব্যবসায়ী শমসের আলী বলেন, পেঁয়াজের ফলন খুব ভালো হয়েছে। যে কারণে অন্যবারের তুলনায় এতোদিন পেঁয়াজের দাম বাড়েনি। তবে দেড় মাস পর ঈদুল আজহা তাই অনেক ব্যবসায়ী বাজারে পেঁয়াজ ছাড়ছে না। তারা বেশি লাভের আসায় পেঁয়াজ মজুদ করছে। মজুদের ফলে আড়তে পেঁয়াজের সরবরাহ কম তাই দাম বাড়ছে। এটা প্রতি বছরই করে থাকে বড় বড় পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা। আমি ছোট ব্যবসায়ী পুঁজি কম তাই যখন যে দাম পাই সে দামেই বিক্রি করি। শুক্রবার বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা।

বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজার ভেদে শসার বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, দেশি পাকা টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও আমদানি করা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। ঢেঁড়সের কেজি ৪০ টাকা, পটল ৩০ টাকা, ঝিঙ্গা ৪০ টাকা, পেঁপের দাম ৪০ টাকা। বরবটির ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া করলা, কাঁকরোল, উস্তা, বেগুন, গাজর, বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। বেগুনের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতিকেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। শাকের মধ্যে লাল, কলমি, ডাটা, পাট, মুলা শাক প্রতি আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। আর পুঁই শাক, লাউ শাক বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা আঁটি।

এছাড়া খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, লবণ ৩০ থেকে ৩৫, পোলাউ চাল ৯০ থেকে ৯৫। প্রতিকেজি খোলা আটা ২৭ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, খোলা ময়দা ২৮ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা। প্রতিকেজি চিনি ৫২ টাকা, ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, খেসারি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, মসুর ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, বুট ৩৮ থেকে ৪০ টাকা।সবজির দাম অপরিবর্তিত থাকলেও কিছুটা দাম বেড়েছে আলুর। সপ্তাহের ব্যবধানে গোল আলুর দাম কেজিতে বেড়েছে ২ টাকা। গত সপ্তাহের যেসব বাজারে গোল আলু ২০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে, এখন সেখানে ২২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

সবজি ব্যবসায়ী নুরুল আমিন বলেন, গত সপ্তাহে কিছু সবজির দাম বাড়লেও, শুক্রবার নতুন করে কোনো সবজির দাম বাড়েনি। বেশিরভাগ সবজি আগের দামে বিক্রি হচ্ছে।

তবে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিচ্ছে মুরগির মাংসের দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ১৪০ টাকা কেজি। একই সঙ্গে কমেছে দেশি ও কক ও লেয়ার মুরগির দাম। বর্তমানে প্রতিকেজি লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা দরে। পাশাপাশি প্রতি পিসে কমেছে দেশি ও ককের দাম। দেশি প্রতি পিস মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, যা ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। কক প্রতি পিস ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। মুরগির দাম কিছুটা কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির মাংস ও ডিমের দাম। গরুর মাংস বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫২৫ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি।

এদিকে কয়েক মাস ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া মাছের দাম এখনও বেশ চড়া। তেলাপিয়া মাছ আগের মতো বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। রুই মাছ ২৮০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং চিতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি।আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল ও অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম। বাজারে প্রতিকেজি নাজির ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর ২৮ নম্বর ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।