জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। এখনো তিনি লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন।গত সাতদিনে জাতীয় পার্টির (জাপা)চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ২৮ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। গত আট ঘণ্টায় দেওয়া হয়েছে ৮ ব্যাগ রক্ত, পেট থেকে ২০০ মিলিলিটার পানি বের করা হয়েছে।

শুক্রবার (০৫ জুলাই) সকালে তাকে ডায়ালাইসিস করা, বিকেলে আবার ডায়ালাইসিস করা হবে। তার অনেক সমস্যা রয়েছে যেগুলো কৃত্রিমভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আরও রক্তের প্রয়োজন আছে। আগের চেয়ে তিনি ভালো আছেন তবে শঙ্কামুক্ত না।শুক্রবার বাদ জুমায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে পল্লীবন্ধুর সুস্থতা কামনায় দোয়া শেষে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।

জিএম কাদের বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতিকে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকেল ৪টা ১০মিনিট থেকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। ফুসফুসের সংক্রমণ কিছুটা কমলেও শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। আবার কিডনি কিছুটা কাজ করলেও তার শরীর থেকে বর্জ্য বের হচ্ছিল না। তাই সম্মিলিত সামরিক (সিএমএইচ) হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে (হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ) লাইফ সাপোর্ট দেন।দলের চেয়ারম্যান এরাশাদের জন্য দোয়া চাইছেন জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ অন্যরা। ছবি: শাকিল আহমেদতিনি বলেন, ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে পল্লীবন্ধুর সব প্রতিবেদন মেইল করেছেন সিএমএইচের চিকিৎসকরা। তবে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা এমন শারীরিক অবস্থায় তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়াকে সমর্থন করেননি।

জিএম কাদের আরও বলেন, আজ (শুক্রবার) সকাল ১১টায় আমাদের চেয়ারম্যানকে দেখতে যেয়ে দেখি তাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে, সুস্থ দেখাচ্ছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার শরীর পেটে জমে থাকা পানি (২০০ মিলি) বের করা হয়েছে। তাছাড়া ডায়ালাইসিস করা হয়েছে আবার শুক্রবার বিকেল বা সন্ধায় আবারও ডায়ালাইসিস করা হবে। এখন কিছুটা সুস্থ দেখাচ্ছে তবে এটাকে শঙ্কামুক্ত বলা যাবে না, আশঙ্কাজনকভাবে আছেন। তবে এখন যেভাবে তার শরীর রয়েছে এমনটা থাকলে হয়তো তার কৃত্রিম চিকিৎসার প্রয়োজন পড়বে না, দ্রুত সুস্থ হয়ে আবারও ফিরবেন।

এর আগে মসজিদে আগত মসুল্লিদের কাছে দোয়া চান জিএম কাদের।তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে তার অনেক অবদান আছে, তিনি অসুস্থ, তার জন্য সবাই দোয়া করবেন। জুমার নামাজ শেষে এরশাদের রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন মসজিদের পেশ ইমাম মিজানুর রহমান।

এসময় উপস্থিত ছিলেন জাপার মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙা, সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকেলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে (কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র) নেওয়া হয়। পরে সন্ধ্যায় দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, এরশাদের অধিকাংশ অঙ্গপ্রত্যঙ্গই কাজ করছে না।দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকা এরশাদের শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হলে গত ২২ জুন তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

দলীয় ও পারিবারিক সূত্র জানায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ দীর্ঘদিন ধরে রক্তের রোগ মাইলোডিসপ্লাস্টিক সিনড্রোমে ভুগছেন। ৯০ বছরের বেশি বয়সী এরশাদের অস্থিমজ্জা পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন উৎপাদন করতে পারছিল না।

তবে, বৃহস্পতিবার এরশাদের অবস্থার অবনতি ঘটলে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ সিনিয়র নেতারা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। কিন্তু সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে বলা হয়, সেখানে নিয়ে যাওয়ার মত শারীরিক অবস্থা নেই এরশাদের।