মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানা পুলিশের এক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এর বিরুদ্ধে দুই ব্যবসায়ী থেকে ফেনসিডিল ব্যবসায়ী সাজিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে এক লক্ষ টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে বারইয়ারহাট বাজারের ফার্নিচার ব্যবসায়ী মা টিম্বার এন্ড ফার্নিচার দোকানের মালিক জামশেদ আলম ও নুর টিম্বারের মালিক নুর হোসেনকে করেরহাট শুভপুর ব্রীজে ডেকে নিয়ে যান তাদের পরিচিত ওহিদুর রহমান সুমন। পরবর্তীতে সেখানে সিভিল ড্রেসে থাকা জোরারগঞ্জ থানার এএসআই শওকত আলী ও তার সাথে থাকা পুলিশ কন্সস্টেবল তাদের দু’জনকে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে থানায় নিয়ে আসে। থানায় আনার পর তাদের কাছে ২ লাখ টাকা দাবী করেন শওকত আলী। রাতভর ধরকষাকষির পর ১ লাখ টাকার বিনিময়ে ছাড়া পান তারা। ঘটনার পরের দিন ১৬ সেপ্টেম্বর এই বিষয়ে মিরসরাই সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সামছুদ্দিন সালেহ আহমদ চৌধুরীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন জামশেদ আলম।
লিখিত অভিযোগে জামশেদ আলম উল্লেখ করেন, ১৫ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯ টায় করেরহাট ইউনিয়নের ওহিদুর রহমান সুমন আমাকে ফোন দিয়ে শুভপুর ব্রীজের ওখানে যাওয়ার জন্য বলে। আমি সাথে করে আমার বন্ধু নুর হোসেনকেও নিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে ওহিদুর রহমানের সাথে কথা বলার কিছুক্ষণ পর সিভিল ড্রেসে জোরারগঞ্জ থানার এএসআই শওকত ও তার সাথে ২-৩ জন পুলিশ কনস্টেবল আমাদের কাছে আসেন। তারা আমাদের শরীর চেক করে কিছু না পেয়ে ব্রীজের নিচেও চেক করেন। এসময় ব্রীজের নিচ থেকে ফেনসিডিলের একটি খালি বোতল উপরে নিয়ে আসেন। এএসআই শওকত আমাকে ও নুর হোসেনকে হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে থানায় এনে দোতলায় তার কক্ষে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে এএসআই শওকত আরো একটি ফেনসিডিলের বোতল দিয়ে ২টি ফেনসিডিল বোতল দিয়ে আমাদের ছবি তোলেন। ছবি তোলার পরে ফেনসিডিল ব্যবসায়ী হিসেবে চালান করে দেওয়ার ভয় দেখান তিনি। মামলা থেকে বাঁচতে হলে ২ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য বলেন এএসআই শওকত। পরবর্তীতে পুলিশ ১ লাখ টাকায় আমাদেরকে ছাড়তে রাজি হয়। তখন আমার পকেটে টাকা ৪১ হাজার টাকা ও নুর হোসেনের পকেটে থাকা ২৪ হাজার টাকা দিই। পরে পুলিশসহ রাত ১২ টার দিকে বারইয়ারহাট পৌর বাজারের মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করে দিই। বাকী ২০ হাজার টাকা আমার আরেক বন্ধু মেজবাহ উদ্দিন মিশু থেকে নিয়ে মোট ১ লাখ টাকা এএসআই শওকত আলীকে বুঝিয়ে দিই। টাকা দেওয়ার পর রাত ১ টায় সাদা কাগজে আমার ও নুর হোসেনের স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দেয়। পুলিশ যাওয়ার সময় শাসিয়ে দেন যেন এ বিষয়ে কেউ না জানে। জানলে তাদের জানমালের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
এদিকে বারইয়ারহাট পৌরবাজারের একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ এখন মাদকের সাথে জড়িত ক্রেতা ও বিক্রেতা থেকে মাসোহারা নিয়ে শেল্টার দিচ্ছে অপরদিকে নিজেরা ইয়াবা-ফেনসিডিল দিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করছে। পুলিশ এখন মাদক মামলা সাজিয়ে হরহামেশাই চাঁদাবাজি করছে। কিন্তু পুলিশের হয়রানির ভয়ে কেউ তাদের সাথে ঝামেলায় জড়াতে চায় না। এই ঘটনা এখন মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানার কিছু অসাধু পুলিশের নিয়মিত চাঁদাবাজির একটি চিত্র।
এবিষয়ে অভিযুক্ত জোরারগঞ্জ থানার এএসআই শওকত আলী বলেন, ‘জামশেদ আলম ও নুর হোসেন নামে দুই জনকে বেশি রাতে শুভপুর ব্রিজ এলাকায় ঘুরতে দেখে থানায় নিয়ে আসি। এরপর ওসি স্যারের সাথে কথা বলে আবার তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এজন্য কোন টাকাপয়সা লেনদেন হয়নি। আমাকে হয়রানি করতে তারা মিথ্যা অভিযোগ তুলছে’।
জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, এএসআই শওকতের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা শুনেছি। এবিষয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপারের (মিরসরাই সার্কেল) নিকট একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। সহকারী পুলিশ সুপার থানায় এসে বিষয়টি তদন্ত করছেন।
মিরসরাই সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সামছুদ্দিন সালেহ আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যবসায়ী থেকে ১ লাখ টাকা আদায়ের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের পর প্রাথমিকভাবে এএসআই শওকতকে জেলা পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগের তদন্ত চলছে, শীঘ্রই তদন্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে এএসআই শওকতের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
আকতার হোসেন, মিরসরাই, চট্টগ্রাম