মিরসরাইয়ে মাতৃত্বকালীন ভাতা নিতে পদে পদে টাকা দিতে হচ্ছে ভাতা গ্রহীতাদের। গত বৃহস্পতিবার (২৬সেপ্টেম্বর) থেকে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের মাধ্যমে ওই ভাতা বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু অফিস খরচের নামে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা অফিসের অফিস সহকারি হুমায়ন কবিরকে দিতে হচ্ছে জনপ্রতি এক’শ টাকা করে, আবার হিংগুলি ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা মেম্বার ফাতেমা বেগম ভাতা গ্রহীতাদের কাছ থেকে নিচ্ছে ৫’শ টাকা করে। এতে ভাতাভোগীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করতে দেখা যায়।

জানা গেছে, উপজেলা ১৬টি ইউনিয়নের প্রতি ইউনিয়নে ৭৯ জন নবজাতকের মাকে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের মাতৃত্বকালীন ভাতা বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিজন ভাতাভোগীকে মাসিক আট’শ টাকা করে এক বছরের এককালীন ৯ হাজার ৬’শ টাকা করে ভাতা দেয়া হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার উপজেলার করেরহাট ও হিংগুলী ইউনিয়নের ১৫৮ জন ভাতা ভোগীদের ব্যাংক থেকে ভাতা উত্তোলনের রশিদ বিতরণ করে মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের অফিস সহকারি হুমায়ন কবির। ওই দিন বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভাতা উত্তোলনের রশিদের জন্য হিংগুলী ইউনিয়নের প্রায় অর্ধ শতাধিক ভাতাভোগী রশিদের জন্য অপেক্ষা করে আছে। এসময় ব্যাংক থেকে ভাতা নেয়ার রশিদ সংগ্রহ করতে এক’শ টাকা করে জমা নিচ্ছেন অফিস সহকারি হুমায়ন কবির। এরপর ব্যাংক থেকে টাকা তুলে দিতে তৎপর হতে দেখা যায় হিংগুলি ইউনিয়নের ১, ২, ও ৩ নন্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার ফাতেমা বেগমকে।

আজমনগর গ্রামের ভাতাভোগী রেখা বেগম জানান, এক’শ টাকা দিয়ে তিনি ব্যাংক থেকে টাকা তোলার রশিদটি নিয়েছেন, ফাতেমা মেম্বারকে আগেই ৫’শ টাকা দিয়েছেন, এখন আবার টাকা দাবি করছেন। ভাতাভোগী তছলিমা জানান, মহিলা মেম্বার ফাতেমা মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য তালিকাভুক্ত করতে আগেই নিয়েছেন ৩’শ টাকা। এখন ভাতা তোলতে আরো ৫’শ টাকা চাইছেন। পশ্চিম হিংগুলি গ্রামের হোছনে আরা জানান, ফাতেমা মেম্বার ভাতা তোলার জন্য তার কাছে টাকা দাবি করেন, তবে তিনি এখনও টাকা দেননি। তবে মহিলা বিষয়ক অফিসে এক’শ টাকা দিয়ে রশিদ নিয়েছেন। শুধু তছলিমা, হোছনেআরা, রেখা বেগম নয় প্রতিজন ভাতাভোগী থেকে অফিসের কর্মকর্তা ও মেম্বারের বিরুদ্ধে টাকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের অফিস সহকারি হুমায়ন কবির ভাতাভোগীদের কাছ থেকে অফিস খরচের জন্য এক’শ টাকা করে নেয়ার কথা স্বীকার করেন। এ টাকা নেয়া কতটুকু বৈধ তার কোন উত্তর দেননি তিনি।

ভাতাভোগীদের অভিযোগ সম্পর্কে হিংগুলি ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য ফাতেমা বেগম টাকা চাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি তাদের টাকা পাইয়ে দিতে পরিশ্রম করছি। তাই তাদেরকে খুশি করে দুয়েক’শ টাকা দিতে বলেছি। কিন্তু কেউ এখনও টাকা দেয়নি। এছাড়া আগে যাদের কাছ থেকে নিয়েছি তা ইউনিয়ন পরিষদের খরচের জন্য নিয়েছি’।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মেহের আফরোজ জানান, তিনি মাত্র একদিন আগে মিরসরাইয়ে যোগদান করেছেন। তিনি টাকা লেনদেনের বিষয়ে কিছুই জানেন না। এবিষয়ে অবশ্যই খোঁজখবর নিবেন।

হিংগুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন হারুন জানান, ভাতাভোগীদের কাছ থেকে পরিষদের মহিলা সদস্য ফাতেমা বেগমের টাকা নেয়ার বিষয়ে কিছু জানেন না। কেউ টাকা নিলে তার বিচার হওয়া দরকার।

আকতার হোসেন, মিরসরাই, চট্টগ্রাম