আগামী বছর জানুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিতব্য ঢাকাস্থ টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহন করবে ৩ চিল্লার সাথী নোয়াখালীর জেলার চাটখিল উপজেলার ষাটোর্ধ্ব মাহ্ফুজুল হক। তাই সাথী ভাইদের সাথে প্রথম বারের মতো চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ৩ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া গ্রামে চলমান তিনদিন ব্যাপী আলমী শূরার তাবলিগী সাথীদের জোড় ইজতেমায় এসেছন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়ি থেকে এসে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বিদের গুরুত্বপূর্ণ বয়ান ও নফল নামাজ, তাসবিহ তাহলিল, জিকির-আসগারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এভাবে শুধু মাহ্ফুজুল হক নন, শীত উপেক্ষা করে লাখো মুসল্লি উপস্থিত হয়েছেন আলমী শূরার তাবলিগী সাথীদের জোড় ইজতেমা ময়দানে। এছাড়া বিশ্বের নানা দেশ থেকে ইজতেমায় এসেছেন বিদেশি মেহমানও।

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সা’দ আহমাদ কান্ধলভী ও মাওলানা যোবায়ের আহমেদ পন্থীদের মধ্যে ৫ দিনের জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা পর সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাটহাজারীর চারিয়া গ্রামে প্রথম বারের মত শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ইজতেমার অনুষ্ঠানিকতা।

সরেজমিনে ইজতেমাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, ইজতেমার প্রথম দিন শুক্রবার হওয়ায় জুমার নামাজ আদায় করতে ধর্মপ্রাণ লাখো মুসল্লির ঢল নামে। সকাল থেকে দলে দলে জড়ো হতে শুরু করেন ইজতেমা মাঠে। দুপুর জোবায়ের দেড়টায় শুরু হওয়া জুমার নামাজের ইমামতি করেন ঢাকার কাকরাইল মসজিদের খতিব ও তাবলীগে জামাত বাংলাদেশের প্রধান মুরব্বি মাওলানা হাফেজ যোবায়ের আহমেদ। এতে প্রায় লাক্ষাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করে। ইজতেমায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্থানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিদেশি অংশ নিয়েছেন। বয়ান মঞ্চের পিছনে কাছে প্রবেশ পথের বাম পাশে আলাদাভাবে জায়গা করা হয়েছে বিদেশি মেহমানদের থাকার ব্যবস্থা। এতে ৮টি জমাতে মোট ১৫০জন বিদেশেী মেহমান ইতিমধ্যে অবস্থান করছে ইজতেমাস্থলে।

ইজতেমা কমিটির সদস্য পাহারাদার ও জিম্মদার মেখল মাদ্রাসার সিনিয়ির শিক্ষক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজী এ প্রতিবেদককে বলেন, এ জোড় ইজতেমায় দেশের ১৫টি জেলার ১চিল্লা, ৩চিল্লা ও সাল দেয়া আলমী শূরার তাবলিগী সাথীরা প্রায় ৭০জন আমিরের নেতৃত্বে আলেম-ওলামা ও তাবলিগে তিন চিল্লা সম্পন্নকারীরা এবং স্থানীয় বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্রসহ লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা স্বতঃফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। এতে ইজতেমা মাঠের সার্বিক প্রস্তুতি এবং ইজতেমা উপলক্ষে দাওয়াত ও তাবলিগের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মূলত এ জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়া বিশ্ব ইজতেমার সফলতার জন্য পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালে ১ ডিসেম্বর (শনিবার) সকালে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে ৫ দিনের জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মাওলানা সা’দ আহমাদ কান্ধলভী ও মাওলানা যোবায়ের আহমেদ পন্থীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা পর সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম বারের মত হাটহাজারীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইজতেমার মূল মাঠে অবস্থানের জন্য উত্তর-দক্ষিণ প্রায় ১২ লক্ষ বর্গফুট খোলা জায়গায় বিশালাকৃতির প্যান্ডেলসহ আশেপাশে প্রায় ৫ লাক্ষাধিক মুসল্লির অবস্থান নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় লাক্ষাধিক মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। তবে আজ শনিবার ও রবিবার আরো বেশি মুসল্লি অংশ নিতে পারে বলে তিনি মনে করছেন।

জানা গেছে, শুক্রবার ফজরের নামাজের পর ঢাকার কাকরাইলের মুরব্বি মাওলানা আব্দুল বার এর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে তিনদিন ব্যাপী জোড় ইজতেমার অনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। এ বয়ান ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে। এরপর শুরু হয় মুসল্লিদের মধ্যে তালিম। এ সময় প্রতিটি গ্রুপে ২৫-৩০ জন করে তালিমে অংশ নেন। জুমার নামাজের পর আলমী শুরার তাবলিগ জামাতের চট্টগ্রাম জিম্মাদার ও হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহাদ্দিস আল্লামা মুফতী জসিমুদ্দীন বয়ান করেন। এছাড়া আছর, মাগরিব ও এশার নামাজের পর তাবলিগ জামাতের শীর্ষ স্থানীয় মুরব্বিরা ইমান, আমল, আখলাক, ইহকাল ও পরকালসহ ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে বয়ান করেন।
এদিকে ইজতেমার নিরাপত্তায় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে এমনটা দাবী করে হাটহাজারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাসুদ আলম এ প্রতিবেদককে জানান, এ পর্যন্ত কোনো অপ্রীতির ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। ইজতেমাস্থলে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে ইজতেমার সার্বিক চিত্র পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। মুসল্লিদের যাতায়াত নির্বিঘœ করতে হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ রাখা হয়েছে। যারা অত্যান্ত সক্রিয়ভাবে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।