রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রামে পদ্মা নদীতে পাথর বোঝাই ইঞ্জিনচালিত বড় একটি ট্রলারের মাঝ বরাবর দুই ভাগ হয়ে ডুবে গেছে। এ সময় ট্রলারে থাকা ১০ শ্রমিকের মধ্যে চার শ্রমিক নিখোঁজ হন। শুক্রবার বিকেল ঘটনাটি ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নিখোঁজদের সন্ধানে এখনো তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

নিখোঁজ চার শ্রমিক হলেন সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর উপজেলার রুপবাটি ইউনিয়নের সোনাতোষা গ্রামের শাহজাহান শেখের ছেলে নুরুজ্জামান শেখ (৩০), একই গ্রামের আবুল শেখের ছেলে আব্দুল শেখ (২৮), আমজাদ শেখের ছেলে আলামিন শেখ (৩৫) ও আলতাফ প্রামাণিকের ছেলে মো. ফারুক প্রামাণিক (৩০)। এঁদের মধ্যে নুরুজ্জামান, আব্দুল ও আলামিন শেখ সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাই।

শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা ও মানিকগঞ্জ থেকে আসা ডুবুরি দল নিখোঁজ চার শ্রমিকের সন্ধান করছেন। রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপপরিচালক অভিযানের তদারকি করছেন। তবে প্রবল স্রোতের কারণে ডুবুরিরা পানির তলদেশে অবস্থান করতে পারছেন না। উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করছেন নিখোঁজ শ্রমিকদের পরিবার ও এলাকার লোকজন।

ট্রলার চালক ও মালিক ঝুনু প্রামাণিক (৫০) বলেন, কয়েক দিন আগে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে ট্রলারটি মেরামত করা হয়েছে। প্রায় ৬০ হাত লম্বা ট্রলারটি। গতকাল সকালে পাবনার কাজিরহাট থেকে ছোট পাথর বোঝাই করে রাজবাড়ীর গোদার বাজারের উদ্দেশে আসছিলেন তারা। ট্রলারে তিনিসহ ১০জন শ্রমিক ছিলেন। দুপুরের দিকে গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাওয়ালজানি পৌঁছালে হঠাৎ করে মট মট করে শব্দ হতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে ট্রলারের মাঝ বরাবর দ্বি-খণ্ডিত হয়ে সামনের অংশ ওপরের দিকে খাঁড়া হয়ে পাথরসহ নদীতে তলিয়ে যায়। এ সময় তিনিসহ পাঁচজন সাঁতরে নদীর তীরে উঠতে পারলেও বাকি পাঁচজন আটকা পড়েন। নদীতে থাকা জেলেরা শাহানুর নামের (৪০) এক শ্রমিককে টেনে তুলতে সক্ষম হন। বাকি চারজনের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

ট্রলার চালক বলেন, ধারণা করা যাচ্ছে ট্রলারের মাঝ বরাবর যখন ভেঙে দ্বি-খণ্ডিত হয় তখন নৌকার সামনের পাথর মাঝের দিকে চলে আসে। আর শ্রমিকেরা ওই পাথরের নিচে আটকা পড়ে যাওয়ায় বের হতে পারেনি।

নিখোঁজ আব্দুল শেখের বড় ভাই রফিক শেখসহ স্বজনেরা ট্রলারডুবির খবর পেয়ে দেবগ্রামে এসেছে। রফিক শেখ বলেন, ট্রলারে থাকা সবাই আত্মীয়স্বজন। পাথরের ট্রিপ পাওয়ায় তারা গত বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে একত্রে পাবনার কাজিরহাটের উদ্দেশে বের হয়। তারা কাজ পেলেই একত্রে ছুটে যায়। পরদিন শুক্রবার বিকেলেই ফোনে ট্রলার ডুবির খবর আসে।

নিখোঁজদের সম্পর্কে চাচা শুকলাল শেখ অভিযোগ করেন, এভাবে উদ্ধার কাজ চললে মনে হয় না নিখোঁজদের সন্ধান পাওয়া যাবে। তাঁদের সন্ধান বা ডুবন্ত ট্রলার উদ্ধারে আধুনিক কোনো ব্যবস্থা নেই।

গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার আব্দুর রহমান বলেন, শুক্রবার বিকেল থেকে উদ্ধার অভিযান চলছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে ফিরে যেতে হয়। আজ ঢাকা ও পাটুরিয়া থেকে পাঁচজন ডুবুরি আসার পর বেলা ১১টা থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। কিন্তু অতিমাত্রায় স্রোতের কারণে অভিযান ব্যাহত হচ্ছে।