দীর্ঘদিনের নোংরা টয়লেট ও বিদ্যালয়ের মাঠ ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (১০ মার্চ) বিকালে উপজেলার কেতকীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এমনি একটি দৃশ্য সাংবাদিকের ক্যামেরায় বন্দী হয়।
জানাগেছে, উপজেলার কেতকিবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টয়লেটটি অত্যাধিক নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় দীর্ঘদিন যাবত তা ব্যবহার করতে পারছেনা ঐ স্কুলের শিক্ষার্থীরা। অবিভাবক ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্যগণ বিষয়টি প্রধান শিক্ষক ও দপ্তরিকে বারবার অবগত করলে তা আমলে নেয়া হয়নি। উল্টো মঙ্গলবার দুপুরে ঐ টয়লেটটিতে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক শাহ জয়নুল আবেদিনকে এবিষয়ে কিছু বলতে গেলে তা সমাধান না করে, বেত দিয়ে মেরে পিঠের চামড়া তুলে নেয়ার হুমকি দেন বলে শিক্ষার্থীরা জানান।
নিরুপমা হয়ে কয়েকজন অবিভাবক ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য বিষয়টি সাংবাদিকদের অবগত করলে মঙ্গলবার দুপুরে একদল সংবাদকর্মী ঐ বিদ্যালয়ে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান। সংবাদকর্মীরা বিষয়টি প্রথমে প্রধান শিক্ষককে অবগত করলে তিনি কোন সদুত্তর না দিয়ে চুপচাপ বসে থাকেন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিউল আমিনকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি শিক্ষা অফিসাকে তাৎক্ষণিক ঐ বিদ্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখে তা দ্রুত সমাধানের জন্য নির্দেশ দেন।

খবর পেয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষা অফিসার তাজিবর রহমান মঙ্গলবার দুপুর ৩টার দিকে কেতকীবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন বিদ্যালয় মাঠ অপরিস্কার ও শিক্ষার্থীদের টয়লেটে তালা লাগানো। শিক্ষা অফিসা প্রধান শিক্ষকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম নিজেই বিদ্যালয়ের মাঠ ঝাড়ু দেন এবং হারপিক ক্লিনার কিনে এনে টয়লেটের তালা খুলে তা পরিস্কার করেন।

বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের জন্য ব্যবহারীত টয়লেটটি অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত ও নোং৷ তারা কোনক্রমেই টয়লেটটি ব্যবহার করতে পারেন। ফলে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ের পায়খানা-প্রসাবের চাপ দিলে তাদের অনেক বেশি কষ্ট হয়। ফলে স্কুল ছুটির পরে বাড়িতে গিয়ে তাদের পায়খানা-প্রসাব সারতে হয়।
তারা আরও জানান, টয়লেটটিতে সবসময় তালা লাগানো থাকে। হেড স্যারকে এবিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি আমাদেরকে বেত দিয়ে পিঠিয়ে চামড়া তুলে নেয়ার জন্য ধমক দেয়।

বিদ্যালয়ের দপ্তরি ও নৈশপ্রহরী প্রাণ কৃষ্ণ বলেন, টয়লেটের পাইপ ব্লক হইছে বলে তা নোংরা ও অপরিস্কার।

এ বিষয়ে ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ জয়নাল আবেদিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, টয়লেটের তালা নাগানোর বিষয়ে তিনি জানেন না এবং টয়লেট পরিস্কার করার জন্য কোন সুইপার খুজে পাননা বলে তা নোংরা হয়ে আছে। বিদ্যালয়ের মাঠ অপরিস্কারের বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন বিদ্যালয় মাঠ প্রতিদিন পরিস্কার করা সম্ভব না।

ঔ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আকবর হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষক শাহ জয়নুল আবেদিনের নানান অনিয়ম-দুর্নীতি ও বিদ্যালয়ের নোংরা পরিবেশের বিষয় সমস্যা সমাধান করতে না পেয়ে আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসে কয়েকবার লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু আজও বোধি তা আমলে নেননি শিক্ষা অফিস।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে আমি নিজেই হতভম্ব। এভাবে একটি বিদ্যালয় চলতে পারেনা। তাই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহৃত টয়লেটটি অপরিস্কার দেখে আমি নিজেই পরিস্কার করেছি। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাগনকে বিদ্যালয় নিজের মনে করে তা পরিস্কার করতে এগিয়ে আসা উচিৎ।
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কয়েকটি লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঐ শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, আমি সবেমাত্র নতুন এসেছি। অফিসে গিয়ে এবিষয়ে খোজখবর নিয়ে তদন্তপুর্ব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।