করোনাভাইরাসের থাবায় আতঙ্কিত সারা বিশ্ব। মানুষের জীবনযাত্রায় এর প্রভাব পড়ছে। তবে, আমরা অনেকে যে কোনও ব্যাপারে সহজেই সতর্ক হই না, যতক্ষণ না সেটা আমাদের নিজেদের ঘরে ঢুকে আমাদের চোখে-কানে সুড়সুড়ি না দেয়।

দেরিতে হলেও বাঙালি হাত ধোয়া শিখেছে। যে বাঙালিকে টয়লেট ব্যবহারের পরে হাত ধোয়া শেখানোর জন্য মিনা কার্টুন বানাতে হয়েছে, সে বাঙালি এখন করোনার ভয়ে যখন তখন হাত ধুতে ধুতে হাতের রেখাই পাল্টে ফেলেছে। এটা আশার খবর। তবে কয়েকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে, কেউ কেউ অধিক সতর্ক হয়ে ফলমূল শাকসবজি পর্যন্ত ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে ফেলছেন। এ যেন সেই ডেটল খেয়ে পেট জীবাণুমুক্ত করার মতো অবস্থা!

প্রথমেই দেখে নেই ডিটারজেন্টে কী আছে

১. অ্যালকোহল ইথোক্সিলেট: এটা কাপড়ের তেল জাতীয় দাগ সরায়।
২. অ্যালকাইল (অ্যালকোহল) ইথোক্সি সালফেট বা অ্যালকাইল সালফেট: এটা কাপড়ের দাগ সরায়।
৩. অ্যামাইন অক্সাইড: এটাও দাগ সরায়।
৪. কার্বোক্সিমিথাইল সেলুলোজ: এর কাজ হলো কাপড়ের যে রঙ সরানো হলো সেটা যেন আর না লাগে কাপড়ে।
৫. সাইট্রিক এসিড: এটি কাপড়ের বাজে গন্ধ দূর করে।
৬. সাইক্লোডেক্সট্রিন: এটাও কাপড়ের দুর্গন্ধ সরায়।
৭. ডাইইথাইল ইস্টার ডাইমিথাইল অ্যা মোনিয়াম ক্লোরাইড: ধোয়ার সময় কাপড়ের ফেব্রিক্স যেন মসৃন থাকে, এ কারণে ব্যবহার করা হয়।
৮. ইথানল: এটাও অ্যা লকোহল। এটি সলভেন্ট হিসেবে কাজ করে।
৯. ইথিলিন ডাইএমাইন ডিসাসিনেট: এটা চিলেটিং এজেন্ট ও বিল্ডার।
১০. হাইড্রোজেন পার অক্সাইড: এটা আসলে ব্লিচিং এজেন্ট।
১১. লিনার এলকাইলবেনজিন সালফোনেট: এটাও কাপড়ের দাগ দূর করে।
১২. মনোইথাইল অ্যামাইন, ২-অ্যামাইনোইথানল বা ইথানোলামাইন: এটাও অ্যালকোহল। মূলত: এটা পিএইচ ব্যালান্স ঠিক রাখে।
১৩. সোডিয়াম পারকার্বোনেট: এটাও ব্লিচিং এজেন্ট।
১৪. পলিইথিলিন গ্লাইকলস, পলিইথিলিন অক্সাইড বা পলিঅক্সিইথিলিন: এটা পিচ্ছিলকারক হিসেবে কাজ করে।
১৫. পলিভিনাইল অ্যালকোহল: এটা ডিটারজেন্টের সুগন্ধিকারক হিসেবে ব্যবহার হয়।
১৬. প্রোপাইলিন গ্লাইকল: এটা সলভেন্ট ও এনজাইম হিসেবে ব্যবহার হয়।
১৭. সোডিয়াম কার্বোনেট: বিল্ডার
১৮. সোডিয়াম ডিসিলিকেট: বিল্ডার
১৯. সোডিয়াম হাইড্রোক্লোরাইড: ব্লিচিং এজেন্ট
২০. সোডিয়াম ট্রাইফসফেট: বিল্ডার
২১. টেট্রা এসিটাইল ইথিলিন ডাইঅ্যামাইন: ব্লিচিংয়ের কাজ ছাড়াও এটা ব্লিচিং একটিভেটর এবং অক্সিডাইজিংয়ের কাজ করে।
২২. টাইটানিয়াম ও টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড: এটার জন্যই ডাটারজেন্টের রঙ সাদা হয়।
২৩. জিংক ফিথালোসায়ানিন সালফেট: এটি ফটোব্লিচিং এজেন্ট।

আপনাদের কাছে অনুরোধ, দয়া করে উপাদানের নামগুলো পড়বেন। শখ করে একটা ডিটারজেন্টের উপাদান দেখতে গিয়ে এগুলো পাওয়া। এখন আসি, এগুলো খেলে কি হবে বা হতে পারে? সেটা বোঝা খুব কঠিন কিছু না। পাকস্থলির রস এসিডিক আর ডিটারজেন্টের অধিকাংশ উপাদানই অ্যালকালাইন। ফলে পেটে অস্বস্তি থেকে শুরু করে বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া, পেটব্যাথা সবই হতে পারে।

তাহলে কিভাবে জীবাণুমুক্ত করবেন?
এখনও পর্যন্ত এই তথ্যের কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র পাওয়া যায়নি যে খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমে করোনা ছড়ায়। কাজেই স্বাভাবিক নিয়মের মতো খুবই সাধারণভাবে ট্যাপের রানিং কোল্ড ওয়াটারে সবজি ধুয়ে ফেলুন। ব্যস, হয়ে গেল। যা কিছুই ওতে থাকুক না কেন, ৯০-৯৯%ই চলে যাবে। শাক-সবজি রান্নার সময় যে তাপমাত্রা আমরা ব্যবহার করি তাতে করোনা কেন, করোনার বাপ-দাদা চৌদ্দগুষ্টি মরে ভূত হয়ে যাবে।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, সবজি কেনা ও সংরক্ষণের প্রসেসিংয়ে কোনো সমস্যা হতে পারে কিনা? হ্যাঁ পারে। এটাই আসলে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি বাজারে বা সুপার শপে যাওয়ার আগে নিজে মাস্ক এবং গ্লাভস পরে সুরক্ষিত হয়ে নিবেন। সবজির ঝুড়ি ডিজইনফেকটেন্ট দিয়ে মুছে পরিষ্কার করে নিবেন। সুপার শপে ঢোকার পর একটু সময় খরচ করে ট্রলিটা ডিজইনফেকটেন্ট দিয়ে মুছে নিবেন।

শপে থাকা অন্যান্যদের সাথে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখবেন। সেলসম্যান বা অন্যান্যরা গ্লাভস এবং মাস্ক পরেছে কিনা খেয়াল করুন। বাজার শেষে বাসায় ফিরে নিজের পোশাক পরিবর্তন করবেন, সাবান পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুবেন ভালো করে। সম্ভব হলে গোসল করে ফেলবেন।

যে ফলমূল কাঁচা খাবেন
ভিনেগার দ্রবণে ১০-২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে পারেন। সিঙ্ক পানি দিয়ে ভরে এক কাপ সাদা ভিনেগার দিয়ে দেবেন। অনুপাত হলো ৮:১। যদিও ভিনেগার রেজিস্টার্ড ডিজইনফেকটেন্ট না, তবে এতে থাকা এসিটিক এসিডের কারণে কীটনাশক চলে যাবে কিছু। ৯৮% ব্যাকটেরিয়া চলে যাবে। কিছু ভাইরাসও যাবে। কিন্তু কোভিড-১৯ যাবে কিনা তা জানা যায়নি।

তবে এটা বোঝা গেছে যে, এই ভাইরাস জীবিত হোস্ট পছন্দ করে, মৃত নয়। আর তাই, কেবল রানিং কোল্ড ওয়াটারে ধুয়ে ফেলাই যথেষ্ট। অধিক সতর্ক থাকতে চাইলে ভিনেগারের দ্রবণ ব্যবহার করতে পারেন। লবণ পানি বা খাবার সোডা কেবল কিছু পেস্টিসাইড বা কীটনাশক সরাতে সাহায্য করবে, এর বেশি কিছু নয়।
এখন কথা হলো, করোনাভাইরাসের চলার পথ হচ্ছে হাত থেকে মুখ হয়ে শ্বাসতন্ত্র বা সরাসরি নাক হয়ে শ্বাসতন্ত্র। খাদ্যতন্ত্রের মাধ্যমে যেহেতু এটি বিস্তার লাভ করে না, কাজেই এটা নিয়ে ততটা উদ্বিগ্নতার তেমন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। আমাদের কেবল মনে রাখতে হবে হাত, নাক, মুখ এই তিন রুট সুরক্ষিত রাখার কথা। এজন্য মাস্ক ব্যবহার, প্রয়োজনে গ্লাভস ব্যবহার এবং আশেপাশের যে সারফেসে আমরা হাত দিচ্ছি সেটা পরিষ্কার রাখা জরুরি। ঘরে থাকুন, সতর্ক থাকুন, নিরাপদে থাকুন।

সূত্র: মেডিভয়েস