গাজীপুরে গত ২৪ঘন্টায় ১১ জনসহ রবিবার পর্যন্ত মোট ২৩জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে কাপাসিয়া উপজেলার ৯ জন, গাজীপুর সদর ও মহানগর এলাকার ৯ জন এবং কালীগঞ্জ উপজেলার ৫জন রয়েছেন। এদিকে জেলা সিভিল সার্জন ও তার অফিসের ১৩জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১৭০জনকে রবিবার হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে বলে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, ঠান্ডা ও জ্বরের উপসর্গ থাকায় সিভিল সার্জন অফিসের নৈশ প্রহরী আসাদুজ্জামানকে ১৭দিন তার গ্রামের বাড়ি কাপাসিয়ায় হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উল্লেখযোগ্য লক্ষণ না থাকায় বুধবার তিনি অফিসে ফিরে আসেন। তবে তার দেহে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হতে শুক্রবার তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকার আইইডিসিআর-এ পাঠানো হয়। শনিবার তার ওই নমুনা রিপোর্টে করোনা পজেটিভ আসে। তাকে তাৎক্ষণিক ভাবে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিটি অফিসে অন্যান্যদের সংস্পর্শে আসায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সিভিল সার্জন এবং তার অফিসের ইপিআই সুপারিন্টেনডেন্ট, জেলা সেনিটারি ইন্সপেক্টর (ডিএসআই) ও প্রধান অফিস সহকারি (ইউডিএ) সহ ১৩জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। সরকারি বাসাতে কোয়ারেন্টাইনে থেকেই সিভিল সার্জন কাজ করছেন। এ ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হতে তাদেরও নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তবে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা সবাই সুস্থ্য আছেন।

গাজীপুরের সিভিল সার্জন মোঃ খায়রুজ্জামান জানান, গাজীপুরে গত ২৪ঘন্টায় ১১জনের শরীরে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত (রবিবার) মোট ২৩জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। নতুন আক্রান্ত ১১জনের মধ্যে কাপাসিয়ার উপজেলার ৬জন ও কালীগঞ্জ ৫ জন। তাদেরকে কুর্মিটোলা ও গাজীপুরের হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। করোনা ভাইরাস আক্রান্তরা রোগীরা যাদের সংস্পর্শে আসেন তাদেরও সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। এজন্য আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসায় সিভিল সার্জন এবং তার অফিসের ওই ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ১৭০ জনকে গত ২৪ ঘন্টায় শনাক্ত করে হোম কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত মোট ২৯৪৪জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এরমধ্যে ২৫৮৩ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন।

কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা আব্দুস সালাম সরকার জানান, কাপাসিয়া উপজেলার দস্যু নারায়নপুর এলাকার ছোঁয়া এগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড কারখানায় একজনের দেহে শুক্রবার এ ভাইরাসের সংক্রমন ধরা পড়লে ১২০জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখে কারখানাসহ গ্রামটি লকডাউন করা হয়। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে ৭৬ জনের স্যাম্পল সংগ্রহ করে আইইডিসিআর’এ পাঠানো হলে রবিবার ৬জনের দেহে করোনা ভাইরাস পজেটিভ হয়। তবে এ ৬জনের মধ্যে কারো দেহে করোনার উল্লেখযোগ্য লক্ষণ দেখা যাযনি। আক্রান্ত এ ৬ জনকে কারখানার তিন তলার একটি নির্দিষ্ট কক্ষে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে রবিবার পর্যন্ত ওই কারখানার ৭জনসহ এ উপজেলায় মোট ৯জনের দেহে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে। এদিকে, রবিবার ওই ফিড কারখানার অবশিষ্ট ৩৫ জন শ্রমিক ও প্রথম আক্রান্ত ব্যাক্তির পরিবারের ৫ সদস্য এবং উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৩০জনসহ ৭০জনের নমুনা সংগ্রহ করে রবিবার ঢাকার আইইডিসিআর’এ পাঠানো হয়েছে। সোমবার কারখানার অপর ১৯ জন শ্রমিকের নমুনা ঢাকায় পাঠানো হবে।

কালীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শিবলী সাদিক জানান, তার উপজেলার নতুন আক্রান্ত ৫জনের মধ্যে একজন স্থানীয়। অন্য চারজন সম্প্রতি নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী এবং ঢাকা থেকে কালীগঞ্জে আসেন। শনিবার পর্যন্ত কালীগঞ্জ উপজেলার ৪০জনের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হলে ৫জনের দেহে করোনা সংক্রমন পজেটিভ হয়।

সিভিল সার্জন আরো জানান, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় শনিবার সন্ধ্যা হতে গাজীপুর জেলাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করেছেন জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গাজীপুর জেলাকে অবরুদ্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এসময়ে সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বানও জানান তিনি। কিন্তু ওই লকডাউন ঘোষণার প্রথম দিনে (রবিবার) গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অনেকেই নানা অজুহাতে ঘর থেকে বাইরে বের হয়েছে। এমনকি এদিন মহানগরীর কয়েকটি গামের্ন্টস কারখানার লক্ষাধিক শ্রমিক তাদের বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য এক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বা কোন নিয়ম কানুন পালিত হয়নি। এতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুকি রয়েছে।