‘ঐ দেখা যায় তাল গাছ, ঐ আমাদের গাঁ, ঐ খানেতে বাস করে কানা বকের ছা’ দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার গাঁয়ে এখন বকের ছানা থাকুক বা না থাকুক, প্রতিটি এলাকায় ঠিক এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে তাল গাছ। সেগুলোতে ঝুলছে কচি চাল। মৌসুমী এ ফলকে কেউ বলে তালের শাঁস আবার কেউ বলে তালের আঁটি।
বৈশ্বিক করোনা সংক্রম থামিয়ে রাখতে পারেনি মৌসুমী ফলের বাজার। ফুলবাড়ী উপজেলার হাট-বাজারে উঠেছে মৌসুমী কচি তাল। গ্রীষ্মের তপ্ত গরমে তৃষ্ণা নিবারনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তালের শাঁস।
পৌরবাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, কচি কচি তাল সংগ্রহ করে দোকান সাজিয়েছে বসেছে দোকানীরা। মৌসুমী ফল হিসেবে তালের শাঁসের বেশ চাহিদা থাকায় সিরিয়াল ধরছেন ক্রেতারা। চাহিদা মাফিক সময় মতো শাঁস কেটে সারতে পারছেন না বিক্রেতারা। প্রতি পিস তালের শাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকায়। সে হিসেবে একটি আস্তো কচি চাল ১৫-২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

পৌরবাজারের কালীবাড়ী গেটস্থ তালের শাঁস বিক্রেতা দুই সহোদর মো. শহীদ ইসলাম ও মো. রুবেল হাসান বলেন, তারা ছোট বেলা থেকেই বাবার সাথে এই মৌসুমে তাল বিক্রি করতেন। বর্তমানে তাদের বাবা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। তাই তারাই এখন বাবার মৌসুমী পেশাকে আকড়ে ধরে আছেন। প্রতিবছর তালের শাঁস বিক্রি করে সংসার চালান। নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে কচি চাল ক্রয় করে শাঁস বিক্রি করেন। প্রায় দেড় থেকে দুই মাস চলে এই তালের শাঁস বিক্রির কাজ। প্রতিদিন তারা ভিন্ন ভিন্ন স্থানে বসে প্রতিজন প্রায় ২০০ থেকে ৪০০ শাঁস বিক্রি করেন। এতে প্রায় ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। বাঁকি সময় তারা হোটেল করে সংসার চালান।

আরেক বিক্রেতার নূর ইসলাম বলেন, আমি বেকার ছিলাম, করোনাকালে পরিবারের আর্থিক সংকট দেখা দেওয়া তালের শাঁস বিক্রি করছি। চাহিদা থাকায় এতে বেশ লাভবান হচ্ছি। এতে আমার সংসারের খবর দিব্যি পার হচ্ছে। তালের শাঁস ক্রেতা গোলাম মোস্তাফা, বিলকিস আরা, সম্পা রানী ও লিটন সরকার জানান, মৌসুমী তালের শাঁস একটি সুস্বাদু ফল। তপ্ত গরমে তালের শাঁস খেতে বেশ আরামদায়ক। তাই এই ফলের চাহিদা বেশ। করোনাকালের এই ফল বেশ বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে বাচ্চারা খেয়ে তৃপ্ত হচ্ছে। তবে দুঃখজনক যে কবির লিখা কবিতার মতো এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাগিয়ে উকি মারে আকাশে এমন সারি সারি তাল গাছ আর চোখে পড়েনা। কালের বিবর্তনে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে তালের গাছ।

এটি বিভিন্ন রোগ থেকে দুরে রাখে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে। করোনাকালীন সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মৌসুমী ও সাইট্রাস জাতীয় ফলমূল বেশি করে খাওয়ার পরামর্শ দেন অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নূরুল ইসলাম।

আফরোজ জাহান সেতু, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি