নন্দিত কথা সাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ুন আহমদের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী রবিবার যথাযোগ্য মর্যাদায় গাজীপুরে পালিত হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এ দিবসটি এবার স্বল্প পরিসরে সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামের নুহাশ পল্লীতে শ্রদ্ধা ও ভালবাসার মধ্য দিয়ে পালন করা হয়।

কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রয়াত এ লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং তার দুই ছেলে নিশাদ ও নিনিত, শ^শুর প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলীসহ পরিবারের ক’সদস্য রবিবার সকালে গাজীপুরে আসেন। বেলা ১২টার দিকে তারা নুহাশ পল্লীতে হুমায়ুন আহমদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং কবর জিয়ারত করেন। এসময় প্রয়াত লেখকের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। অনুষ্ঠাণে অনন্য প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম, কাকলী প্রকাশণীর সেলিম আহমেদ, অন্বেষা প্রকাশনীর শাহাদাৎ হোসেন, কাঠপেন্সিল প্রকাশনীর এসকে চৌধুরী, অভিনেতা সিরাজুল কবির কমল, হিমু পরিবহনের ৪ সদস্যের প্রতিনিধি, নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ হুমায়ুন ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রয়াত লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন বলেন, গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে হুমায়ুন আহমেদের সমাধির পাশেই নির্মাণ করা হবে হুমায়ূন স্মৃতি যাদুঘর। যেহেতু নূহাশপল্লী একটি পারিবারিক সম্পদ। পারিবারিক সম্পত্তির মধ্যে এ রকম কিছু একটা করতে হলে পরিবারের সবার মতামত নিতে হবে। ওই জায়গাটিতে এখনো আমি অপারগ হয়ে আছি। আমি এখনো সবাইকে একত্র করতে পারিনি। পারিবারিক সমন্বয়হীনতার কারণে যাদুঘরটি নির্মান কাজ এখনো শুরু করা যাচ্ছে না। আমি চেষ্টা করছি পরিবারে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে যাদুঘরটি নির্মাণ করার জন্য। এসময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, যাদুঘর নুহাশপল্লীতেই হবে এটা নিশ্চিত করে বলছি। হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিচারণ করে শাওন বলেন, বর্ষাকে তিনি উদযাপন করতেন। আমরা বৃষ্টিতে ভিজি, আর তিনি বর্ষা উদযাপন করতেন। যা তার ভক্তরাও জানে।

মেহের আফরোজ শাওন সাংবাদিকদের আরো বলেন, প্রতিবছর বিভিন্ন এতিমখানার এতিমদের নিয়ে কোরানখানির ব্যবস্থা করা হতো। এবার তা সীমিত আকারে হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রতিবছরের এদিনটিতে দুপুরে এলাকার বিভিন্ন মাদ্রাসার এতিম শিশু ছাড়াও অতিথিদের খাওয়ার আয়োজন করা হতো। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে খাওয়ার আয়োজন করা হয়নি। কোরানখানি ও আপ্যায়ন করতে যে টাকা ব্যয় হতো সে টাকাগুলো করোনাকালে কর্মহীন হয়ে পড়া মধ্যবিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্ত অসহায় দু’শ পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। গত প্রায় একমাস ধরে বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে খুঁজে এসব পরিবারকে নির্বাচন করা হয়।

অনন্য প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিশ্বমানের একটি ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা ছিল লেখকের বড় স্বপ্ন। তা এখনও বাস্তবায়ন করা যায়নি। সৃষ্টিশীল কর্মের মাধ্যমে এদশের সকল ভক্ত ও অনুরাগীদের হৃদয়ে কথাশিল্পী হুমায়ুন আহমেদ চিরকাল বেঁচে থাকবেন।

নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, দিবসটি উপলক্ষ্যে সকাল থেকে কোরানখানির আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া স্যারের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। তবে করোনা পরিস্থিতির কারনে এবারের অনুষ্ঠাণে পরিবারের সদস্য, লেখক, ভক্ত অনুরাগীদের উপস্থিতি ছিল সীমিত। দর্শণার্থীদেরও অংশগ্রহণ ছিল অনেক কম। ছিল না অন্যান্য বারের মতো বড় পরিসরে মানুষ খাওয়ানো ও ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা। লোক সমাগম কম থাকলেও সন্ধ্য পর্যন্ত নুহাশ পল্লীতে হুমায়ুন ভক্তদের আগমন অব্যহত ছিল। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষ্যে নেত্রকোনায় হুমায়ুন আহমেদের শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠে হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

জনপ্রিয় এ লেখক হুমায়ুন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নবেম্বর নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। তাঁর ডাক নাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোটো ভাই। সবার ছোটো ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক। ২০১১সালে তার অন্ত্রে ক্যান্সার ধরা পড়ে। পরের বছরের মাঝামাঝি সময় তার অন্ত্রে অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ইন্ফেকশন হয়ে ২০১২সালের ১৯জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমেরিকায় নিউইর্য়কের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর হুমায়ূন আহমেদকে তার নিজের প্রতিষ্ঠিত গাজীপুরের নুহাশ পল্লীর লিচু তলায় দাফন করা হয়।

প্রসঙ্গত, জনপ্রিয় এই উপন্যাসিকের বিচরণ ছিল নাটক-চলচ্চিত্রেও। ১৯৭১সনে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকসেনারা তাকে হত্যার জন্য গুলি ছুড়লেও অলৌকিক ভাবে তিনি বেঁচে যান। হুমায়ুন আহমেদ শুধু সাহিত্য রচনা করেননি। তিনি নাটক ও সিনেমায় এ সাহিত্য রূপ দিয়েছিলেন। তার প্রথম টিভি নাটক “এইসব দিনরাত্রি” বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, গৌরীপুর জংশন, নৃপতি, বহুব্রীহি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, শ্রাবণ মেঘের দিন, জোছনা, জননীর গল্প প্রভৃতি।