লক্ষীপুরের রামগতিতে পারিবারিক কবরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িতি হলেন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু। আজ মঙ্গলবার রামগতির রব রোডে নিজেদের নতুন বাড়িতে চতুর্থ জানাজা শেষে বাবুকে তার পারিবারিক কবরাস্থানে দাফন করা হয়েছে।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ জানান, বৃষ্টি ও সড়ক খারাপ থাকায় ঢাকা থেকে শফিউল বারী বাবুর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স রামগতিতে মরহুমের পুরাতন বাড়িতে পৌঁছায় বিকেল সাড়ে ৫টায়। মরহুমের মরদেহ আসছে এ খবরে আগে থেকেই জনতার ঢল নামে। মরহুমের পুরাতন বাড়ি থেকে স্থানীয় আবদুল হাদী কলেজ মাঠে তার মরদেহ নেওয়া হয়। সেখানে ৬ টা ১০ মিনিটে বিপুল সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণে তার তৃতীয় জানাজা হয়। দাঁড়ানোর জায়গা না পাওয়ায় যেসব মানুষ কলেজ মাঠের জানাজায় অংশ নিতে পারেনি তাদেও দাবির মুখে সন্ধ্যা ৭ টা ১০ মিনিটে চতুর্থ জানাজা হয়। এরপর রব রোডের নতুন বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে শফিউল বারী বাবুকে দাফন করা হয়।

এর আগে আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ৪৫ নিউ ইস্কাটন বিএম-এর গলিতে মরহুমের প্রথম জানাজা, নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মরহুমের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে শফিউল বারী বাবুর মরদেহ মোহাম্মদপুর আল মার্কাজুলে গোসল করানো হয়। আজ সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রথম জানাজা হয়। এরপর নয়াপল্টনে দ্বিতীয় জানাজা শেষে মরহুমের লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স বাবুর জন্মস্থান লক্ষীপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলের নেতৃত্বে লাশবাহী এ্যাম্পুলেন্সের সঙ্গে যান সংগঠনের একদল নেতাকর্মী।

আজ ভোরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শফিউল বারী বাবু মৃত্যু হয়। স্বেচ্ছাসেবক সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল বলেন, ‘প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত সোমবার দুপুরে বাবুকে প্রথমে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পরে রাত দেড়টায় তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে চিকিৎসকরা তার মৃত্যু ঘোষণা করে।’

বিএনপির পক্ষ থেকে দেয়া শোক বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে, শফিউল বারী বাবু ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

৫১ বছর বয়সী ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিউল বারী বাবু স্ত্রী, ছোট এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বাবু স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য জনপ্রিয় এই নেতার মৃত্যুতে নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। দলের সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কান্না করতে দেখা যায়।

সংগঠনের সভাপতির মৃত্যুতে সারাদেশের জেলা, মহানগর, থানা, উপজেলা ও পৌরসভা কমিটির উদ্যোগে খতমে কোরআন ও দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে স্বেচ্ছাসেবক দল। এ ছাড়াও সংগঠনের শীর্ষ নেতার মৃত্যুতে সাংগঠনিকভাবে পৃথকভাবে ৩ দিনের শোক ঘোষণা করেছে সংগঠনটির ঢাকা মহানগর উত্তর।

শফিউল বারী বাবুর মৃত্যুতে পৃথক বার্তায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্মমহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা আকন কুদ্দুসুর রহমান,তাইফুল ইসলাম টিপু,সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, এলডিপির একাংশের মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম, এবি পার্টির আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী ও সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি, ৯০’র ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতারা।

আজ সকালে নয়া পল্টনে কার্যালয়ের সামনে শফিউল বারী বাবুর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতৃবৃন্দ তার কফিনের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। দলীয় কার্যালয়ের সামনে বাবুর মরদেহ নেয়ার পর তার কফিন বিএনপির পতাকা দিয়ে ঢেকে দেন দলটির মহাসচিব।

জানাজার আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে শফিউল বারী বাবুর জানাজায় উপস্থিত হতে হবে এটা আমরা কল্পনাও করিনি। বাবু বিএনপির একটা প্রাণ ছিলেন। সারাদেশে অসংখ্য নেতা-কর্মী তার হাতে তৈরি হয়েছে। অঙ্গসংগঠনের মধ্যে তার মতো ত্যাগী, মেধাবী, বুদ্ধিমান, লেখাপড়া জানা নিবেদিত প্রাণ নেতা খুব কম আছে। বাবুকে হারিয়ে আমরা আমাদের একটা অমূল্য সম্পদকে হারালাম।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপির এই সৈনিক, শহীদ জিয়াউর রহমানের এই সৈনিক, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এই সৈনিক, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এই সৈনিক কখনো পেছনে ঘুরে তাকায়নি। আন্দোলনে, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে তার ভূমিকার কোনো তুলনা হয় না। আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল ও প্রয়াত বাবুর বড় ভাই সাহেদুল বারীকে শফিউল বারীর অবদানের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে।