গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের জন্য রাজস্ব ও উন্নয়নসহ ৫ হাজার ৭ কোটি একুশ লাখ আটাশ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এ বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৬৭ কোটি ১১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। বাজেটে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের জন্য উদ্বৃত্ত রাখা হয়েছে ৪৪০ কোটি ৯লাখ ৫০ হাজার টাকা। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ১৩৮ কোটি ৬৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। রবিবার জেলা শহরের নগরভবন মিলনায়তনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্য বিধি মেনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বাজেট ঘোষণা করেন গাসিক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।

বাজেট ঘোষণার আগে সিটি কর্পোরেশনের সকল কাউন্সিলদের নিয়ে গাসিক মেয়র এক সভায় মিলিত হন। ওই সভায় ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট চুড়ান্ত করা হয়। সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মজিবুর রহমান কাজলের সঞ্চালনায় সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম এবং অর্থ ও সংস্থাপন সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর আব্বাস উদ্দিন খোকন। পরে উপস্থিত কাউন্সিলরগণ ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট চুড়ান্ত করেন।

বাজেট বক্তৃতায় মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়নি। তহবিলের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব তহবিল হতে রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং রাস্তা মেরামত করার জন্য সরকারি থোক বরাদ্ধ ও রাজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন জোনের প্রধান সংযোগ সড়ক প্রশস্তকরণসহ নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পে ৩ হাজার ৮২৮ কোটি টাকার রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। অত্র প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। জনগণের চলাচলের জন্য বিভিন্ন রাস্তা প্রশস্ত করতে গিয়ে অনেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে প্রায় ৬০ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ক্ষতিগ্রস্থদের অনুদান বাবদ এক’শ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। গাজীপুরের প্রায় দেড় হাজার মসজিদের খতিব, ইমামদের জন্য বছরে ১৪ হাজার টাকা করে সম্মানী প্রদানেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ২০২০-২০২৩ অর্থ বছরের বাজটে হাসপাতালের জন্য অ্যাম্বুলেন্স ক্রয়ে ৫ কোটি টাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে ৫০ কোটি টাকা, নগরীর আটটি জোনে কবরাস্থান নির্মাণের জন্য ৫০ কোটি টাকা, গুণিজনদের সম্মাননা বাবদ ৫ কোটি টাকা এবং সাংবাদিকদের পেশাগত উন্নতি ও সার্বিক মঙ্গলার্থে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বাজেট বক্তৃতায় গাসিক মেয়র আগামি তিন বছরের জন্য (২০২০-২০২৩) একটি ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরেন। এর মধ্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের আটটি জোনের বিদ্যমান রাস্তা প্রশস্তকরণ, ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প (২৫০২০-২০২৩) এর জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা, নগরীর জন নিরাপত্তায় এল.ই.ডি. সড়ক বাতি স্থাপন করণের জন্য ৬০০ কোটি টাকা, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য সারফেস ওয়াটার রিটেনশন পন্ড, ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টসহ একটি সমন্বিত পানি সরবরাহের নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পে ৮ হাজার ৫’শ কোটি টাকা, আরবান ডেভেলপমেন্ট প্ল্যাণ (টিএপিপি) প্রকল্পে ২৯ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পে এক হাজার ৫৭৩ কোটি ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাংলাদেশে আয়তনের দিক দিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন সর্ব বৃহৎ সিটি কর্পোরেশন। গাজীপুরকে সবার জন্য বসবাসযোগ্য একটি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তুলতে চাই। সে লক্ষ্যে আমি কাজ করে যাচ্ছি। আমি আমার সততা থেকে এক ইঞ্চি নড়ব না। কেউ অন্যায় বা দূর্নীতি ও অনিয়ম করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।