যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় সংস্থাটির বরখাস্ত হওয়া সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাসুদসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আবদুল্লাহ আল মাসুদ ছাড়াও গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হচ্ছেন- সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ, সাইকো-সোশ্যাল কাউন্সিলর (প্রবেশন অফিসার) মুশফিকুর রহমান, শরীর চর্চা শিক্ষক ওমর ফারুক ও কারিগরী শিক্ষক শাহানুর আলম।

যশোরের পুলিশ সুপার মো. আশরাফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আজ শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, তিন কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার মামলায় কয়েকজনকে হেফাজতে নিয়ে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল শুক্রবার রাতে নিহত কিশোর পারভেজ হাসানের বাবা রোকা মিয়া যশোর কোতয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের অজ্ঞাত কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করেন। রোকা মিয়ার মামলায় ওই পাঁচ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা, যশোরের চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ পরিদর্শক রোকিবুজ্জামান।

যশোর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোমেন দাশ বলেন, তারা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হওয়ায় খুবই সতর্কতার সঙ্গে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই তিন কিশোরকে খুবই নির্মমভাবে পেটানো হয়। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে তাদেরকে পেটানো শুরু হয়। একেকজনকে পিটিয়ে আহত করে সহকারী পরিচালকের কক্ষে ফেলে রাখা হয়।

সূত্র জানায়, এর আগে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রধান নিরাপত্তা কর্মী কেন্দ্রে বন্দী এক কিশোরকে তার চুল কেটে দিতে বলেন। ওই কিশোর রাজি না হওয়ায় তাকে গালিগালাজ করেন নিরাপত্তা কর্মী। এ ঘটনায় বন্দী কিশোরের ওই নিরাপত্তা কর্মীর বিরুদ্ধে মামলাও করে। এরপর গত ৩ জুলাই বন্দী কয়েকজন কিশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রধান নিরাপত্তা কর্মীর ওপর হামলা করে তার একটি হাত ভেঙে দেয়।

এ হামলার এ ঘটনায় দায়ী ১৮ জনকে সিসি ক্যামেরার ভিডিওচিত্র থেকে শনাক্ত করে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে ওই ১৮ জনকে সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাসুদের কক্ষে ডেকে নেওয়া হয়। সেখান থেকে একেকজন করে ডেকে অপর একটি কক্ষে নিয়ে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়। কক্ষের জানালার গ্রিল দিয়ে হাত-পা বের করিয়ে বাইরে থেকে টেনে ধরে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা কয়েকজন বন্দী কিশোরের সহায়তা নেন।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যশোর জেনারেল হাসপাতালে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে তিনটি মরদেহ নেওয়া হয়। এরপর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আহত ১৪ কিশোরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল শুক্রবার সকালে আহত আরেকজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ওই কর্মকর্তা এসব কিশোরকে পিটিয়ে কেন্দ্রের অভ্যন্তরে চিকিৎসা দেবেন বলে চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু কিশোরদের মৃত্যু হলে তারা বিষয়টি আর চেপে রাখতে পারেননি। এ সময় তারা কিশোরদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রচার করেন। পুলিশকেও তারা প্রথমে এ কথা জানান।

তবে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে বৃহস্পতিবার শেষ রাত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে বুঝতে পারেন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা তাদেরকে মিথ্যা বলছেন। পরে ওই রাতেই ১০ জনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ পাঁচ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে হতাহতের ঘটনায় সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাসুদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।