কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে তা এখনো নিশ্চিত না হলেও শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় একটি গাইডলাইন তৈরি করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে একদিন অর্ধেক শিক্ষার্থী, আরেকদিন বাকি অর্ধেক শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস পরিচালনার কথা ভাবা হচ্ছে। শিশু শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার আগে, খোলা অবস্থায় নিরাপত্তা ও পাঠদান সময়ে শিক্ষার্থীদেরে উপসর্গ বা আক্রান্ত হলে করণীয় কী- এসব উঠে এসেছে সেই গাইডলাইনে। এছাড়াও রয়েছে পাঠ পরিকল্পনার কথা।

মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রেখে বিদ্যালয়ে পাঠদান পরিচালনায় করণীয় বিষয়ক নির্দেশনা তৈরি করা হচ্ছে। বিদ্যালয় খোলার আগে ও চলাকালীন করণীয় বিষয়ক বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এছাড়া প্রতিদিন কীভাবে ক্লাস পরিচালনা হবে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করে আলাদাভাবে তিনটি ক্যাটাগরিতে ৫০টির বেশি নির্দেশনা থাকবে। করোনাকালীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে এসব নির্দেশনা তৈরি করা হয়েছে।

নির্দেশনাগুলো চূড়ান্ত করতে মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম হোসেনের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে খসড়া থেকে কিছু সংযোগ-বিয়োজন করা হয়েছে। পরবর্তী আরেকটি সভা করে এটি চূড়ান্ত করা হবে। এরপর এ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর অনুমোদনের পর তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা করে এ সংক্রান্ত প্রচার-প্রচারণা শুরু করা হবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান পরিচালনা করা হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, সিডিসি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলো মেনে আমরা করোনা পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় পরিচালনায় দিকনিদের্শনা তৈরি করছি। সবাইকে সেসব মেনে চলতে হবে।

তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আগের মতো আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালিত হবে না। বিদ্যালয় খোলার ১৫ দিন আগে থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রস্তুতি শুরু করা হবে। ক্লাস চলাকালীন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের করণীয় ও প্রতিদিন কীভাবে ক্লাস পরিচালনা করা হবে সেসব বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে সচিব বলেন, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

খসড়া নির্দেশনায় দেখা গেছে, বিদ্যালয় খোলার সরকারি নির্দেশনা আসার পর ন্যূনতম ১৫ দিন আগে শিক্ষক, কর্মচারী এবং বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির (এসএমসি) সদস্যদের উপস্থিতিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করতে হবে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ক্লাস উপযোগী করে বিদ্যালয়ে পরিচ্ছন্ন করে তুলতে হবে। বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। স্কুলের গেটে বা প্রবেশের স্থানে হাত ধোয়ার জন্য সাবান ও পানির ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে প্রবেশ করবে। থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মেপে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করানো হবে।

পাঠ্যক্রম পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, আগের মতো ক্লাসে এক বেঞ্চে তিন-চারজন বসতে পারবে না, দূরত্ব বজায় রেখে পাঠদান করা হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এক বেঞ্চে দুজন শিক্ষার্থীকে বসাতে হবে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আগের মতো আর সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাস হবে না। একটি স্তরে সপ্তাহে দুই বা তিন দিন অথবা প্রতিদিন দু-তিনটি ক্লাস নেয়া হবে। তবে ক্লাস নেয়ার ক্ষেত্রে চতুর্থ শ্রেণিকে অধিক গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্যক্রম নির্বাচন করে কোন দিন কোন বিষয়ের ক্লাস নেয়া হবে তা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও এসএমসির সদস্যদের নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।

বিদ্যালয় চলাকালীন করণীয় হিসেবে বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ে আসতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক মুখে মাস্ক পরে আসতে হবে। বিদ্যালয়ে প্রবেশের সময় সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে উপচে পড়া ভিড় করে খেলাধূলা, আড্ডা-গল্প করতে পারবে না। সামাজিক দূরত্ব রেখে হাঁটাচলা করতে হবে। নোটিশ বোর্ডে বিদ্যালয় শিক্ষক, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যোগাযোগ নম্বর লিখে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। কেউ অসুস্থ হয়ে গেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহায়তায় তাকে চিকিৎসা দিতে বলা হয়েছে।