২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট। রাষ্ট্র ক্ষমতা তখন স্বাধিনতাবিরোধী পাকিদোষরদের হাতে! চারিদিকে যখন এক টানা গ্রেনেড বিস্ফোরিত হচ্ছে, ছুটে আসছে স্নাইপার রাইফেলের লক্ষ্যভেদী গুলি, তখন কয়েকজন মানুষ নিজেদের জীবনের পরোয়া না করে নেত্রীকে ঘিরে তৈরি করেছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্ভেদ্য দেয়াল! এই ছবিগুলোতে যে চারজনকে দেখা যাচ্ছে, তারা হলেন স্কোয়াড্রন লিডার মামুন, মোহাম্মদ হানিফ, মোফাজ্জল হোসেন মায়া ও নজিবউদ্দিন আহমদ। এরমধ্যে ঢাকার সাবেক মেয়র হানিফের শরীর সবচেয়ে বেশি স্পিন্টারে ঝাঁজরা হয়েছিল, তীব্র যন্ত্রণায় ধুঁকে ধুঁকে মানুষটা মারা গিয়েছিলেন ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর!

ওরা সেদিন কতটা প্রস্তুত হয়ে এসেছিল তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন জনাব Sawkat Khan তাঁর কথাটাই তুলে ধরলাম – ল্যান্সকর্পোরাল (অব.) মাহবুব নেত্রীকে গাড়ির দরজার ভেতরে জোর করে প্রবেশ করাচ্ছিলেন। নেত্রী ওঠতে চাচ্ছিলেন না, তিনি নেতা কর্মীদের এভাবে রেখে যেতে রাজি ছিলেন না। মাহবুবকে জোর খাটাতে হয়েছিল। নেত্রীকে যে-ই ভেতরে ঠেলে ঢুকিয়ে দিলেন, তখনই একটা হাই ভেলোসিটি স্নাইপার রাইফেলের বুলেট মাহবুবের মাথার পেছন দিয়ে ঢুকে মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়। ওটা মাহবুব না থাকলে নেত্রীর গায়েই লাগতো। পর পর আরো কয়েকটা বুলেট তার গায়ে লাগে। যেগুলো একে-৪৭ এর ছিলো। শেখ হাসিনার বুলেটপ্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্জের চাকাগুলো টিউবলেস বা বুলেটপ্রুফ ছিলো না। সেটা জেনেই গাড়ির টায়ার বসিয়ে দেয়া হয়েছিল শ্যুট করে। চালক সেই ফ্ল্যাট টায়ার নিয়েই গাড়িটাকে উড়িয়ে নিয়ে গেছেন সুধা সদনের দিকে। নরমাল পিস্তল বা রাইফেলের গুলি হলে বুলেটপ্রুফ গ্লাসে ততোটা স্পট ফেলতে পারতো না রানিং অবস্থাতে। কিন্তু স্নাইপারের ভারি বুলেট প্রমাণ করে কতোটা প্রিপ্ল্যান্ড অবস্থায় এসেছিলো তারা। স্নাইপার ছিলো তাদের ব্যাকআপ হিসেবে।

এই কোয়ালিটির শ্যুটার জঙ্গি বাহিনী থেকে ওঠে আসেনি। এটা সরকারি বাহিনীর দক্ষ মার্কসম্যানের স্টেডি হাতের কাজ। জিপ গাড়ির জানালার যে পজিশনে বুলেট হিট করে, স্পট দেখলেই বোঝা যায়, তাদের উদ্দেশ্য। পাশে এবং পেছনের দিক থেকে কয়েকটা পজিশন থেকে শ্যুট করা হয়েছিল। ‘৮৮-তে লালদিঘীর জনসভায় যেভাবে নেতা কর্মীরা বলয় তৈরী করে নেত্রীর জন্য জীবন দিয়েছিলেন, ঠিক একইভাবে ২০০৪ সালেও নেতা কর্মীরা জীবন দিয়েছেন। রক্ত পিপাসুদের রক্তের নেশা আজও লকলক করছে!

আজকের বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের উচিৎ শেখ হাসিনাকে ঘিরে সেদিনের সেই মানববর্ম বানানো অকুতোভয় ব্রেইভহার্টদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকা, তাদের এই অবদান মনে রাখা। সেদিন এই মানুষগুলো না থাকলে, শেখ হাসিনার কিছু হয়ে গেলে আজ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী উগ্র ধর্মান্ধ শয়তানদের চারণভূমি এবং গৃহযুদ্ধে জর্জরিত একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হত। নিজের স্বার্থের এক চুল বাইরে গেলে এবং সমালোচনা করতে হয় বলেই যারা সরকারের সমালোচনার নামে নোংরামি করেন, অপপ্রচার চানান নিয়মিত, মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে হয় আপনাদের সেই যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্রক্ষমতায় উগ্র ধর্মান্ধ থাকা বাংলাদেশটা একবার ঘুরিয়ে আনি। কি করতেন আপনারা সে বাংলাদেশে?

সরকার ভুল করলে তার গঠনমূলক সমালোচনা করা যেতেই পারে কিন্তু উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়া অপরাধের শামিল। দেশের কল্যাণে অবদান রাখতে না পারলে অন্তত স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি, জঙ্গিদের উৎসাহ দিয়ে কিছু বলা অন্যায় । এটা ঘোর অপরাধ। এসব থেকে সতর্ক থাকতে হবে।

বাংলাদেশ থেকে সকল অপশক্তি/অশুভ তৎপরতা নিপাত যাক। ঘুষ, দুর্নীতি, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস সহ সকল অপশাসনের অবসান হোক।

নিরাপদ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াক, এগিয়ে চলুক বাংলাদেশ এটাই প্রত্যাশা। জয় বাংলা।

ছবি কৃতজ্ঞতা- শরীফুল হাসান সুমন
তথ্য কৃতজ্ঞতা- সৈকত ভৌমিক
রাতিন রা’আদ