মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদকে গুলি করার ঘটনা দেড় মিনিটের মধ্যেই ঘটে। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে কী এমন ঘটেছিল, কেন গুলি করা হলো—সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে র‌্যাব। এ কারণেই ওসি প্রদীপসহ ঘটনার তিন মূল আসামিকে নিয়ে পৃথকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে র‌্যাবের তদন্ত দল। শুক্রবার (২১ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্র পরিদর্শন করে তারা। এ সময় ঘটনাস্থল তল্লাশি চৌকির সামনে দাঁড়িয়ে অভিযুক্ত তিন পুলিশ কর্মকর্তা নিজেদের মতো করে হত্যার ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে।

গত ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ও রিমান্ডে থাকা ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতকে পৃথকভাবে ঘটনাস্থলে নিয়ে ঘটনার বিবরণ শোনেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

দুপুর ১টার দিকে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারওয়ারের নেতৃত্বে একটি টিম অভিযুক্ত আসামিদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলের কাছে দাঁড়িয়ে অভিযুক্তদের কাছে ঘটনার আদ্যোপান্ত জানতে চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তরা নিজেদের মতো করে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন।

এ সময় অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তাফা সরওয়ার, র‌্যাবের আইন ও মিডিয়া উইং প্রধান লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ এবং সিনহা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিনিয়র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলামসহ র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারওয়ার বলেন, ‘আমরা সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজছি, কেন এই ফায়ারিংটা হয়েছিল? এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে কী এমন ঘটেছিল যে সিনহা গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন? কিংবা লিয়াকত যেটা বলছে, পিস্তল তাক করে ফেলেছিলেন—এই ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে কী এমন হয়েছিল? পিস্তল তাক করার মতো পরিস্থিতি আসলেই সৃষ্টি হয়েছিল কিনা, আর তিনিই বা কেন ফায়ার করলেন? আমাদের অনেক তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়েছে। আমরা এমনভাবে তদন্ত করতে চাই, যেন কোনোভাবেই কোনও নির্দোষ ব্যক্তি সাজা না পান এবং কোনও দোষী ব্যক্তি কোনোভাবেই ছাড় না পায়।’

তোফায়েল মোস্তফা বলেন, ‘রিমান্ডে থাকা আসামি, সাক্ষী ও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে তদন্ত অনেক এগিয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে তদন্তের স্বার্থে কিছু বলতে পারছি না। এখন কিছু বললে মামলার কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে।’

প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ। এ সময় পুলিশ সিনহার সঙ্গে থাকা সিফাতকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। পরে রিসোর্ট থেকে শিপ্রাকে আটক করা হয়। দুজনই বর্তমানে জামিনে মুক্ত। ওই ঘটনায় ওসি প্রদীপসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা এবং পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী প্রথমে কক্সবাজার জেলা কারাগার ও পরে আদালতের ৭ দিনের রিমান্ড আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব হেফাজতে রয়েছেন। সর্বশেষ বাংলাদেশ আর্মড পুলিশের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত সংস্থা র‌্যাব। কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ প্রত্যেক আসামিকে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।