গাজীপুরে অগ্রণী ব্যাংকের শ্রীপুর শাখার গ্রাহকের হিসাব (একাউন্ট) থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় ব্যাংকের ওই শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল হালিমকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আত্মসাতকৃত টাকার মধ্যে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা উদ্ধার করে গ্রাহকের হিসাবে জমা দেওয়া হয়েছে।

সাময়িক বরখাস্তকৃতরা হলেন- অগ্রণী ব্যাংকের শ্রীপুর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মো. নজরুল ইসলাম, ক্যাশ অফিসার বদরুল হাসান সনি ও মো. দেলোয়ার হোসেন।

বদরুন্নাহার (সঞ্চয়ী হিসাব নং-৭৪২৯), জুয়েনা বেগম (স.হি. নং-১৭৪৮০) ও আফতাব উদ্দিন (হিসাব নং-১৯৭২৫) সহ অগ্রণী ব্যাংকের শ্রীপুর শাখার একাধিক গ্রাহক জানান, ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকসহ কয়েক কর্মকর্তা পরষ্পর যোগসাজশে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে চেক বইয়ের পাতা হাতিয়ে নেন। পরে জালিয়াতির মাধ্যমে সেসব চেকের মাধ্যমে ওইসব গ্রাহকের হিসাব থেকে বিভিন্ন সময়ে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। সম্প্রতি গ্রাহকরা তাদের হিসাবে কম টাকা জমা দেখতে পেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন। বিষয়টি জানাজানি হয়ে জালিয়াত চক্রের সদস্যরা আত্মসাতকৃত টাকার মধ্যে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা গ্রাহকের হিসাবে কয়েক ধাপে জমা দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত একাধিক গ্রাহকের হিসাবে তাদের জমাকৃত মোট টাকার গড়মিল রয়েছে। এসব গ্রাহকরা তাদের টাকা উদ্ধারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্ণা দিয়ে বেড়াচ্ছেন।

ব্যাংকের ওই শাখার গ্রাহক জুয়েনা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সৌদী আরবে চাকুরি করেন স্বামী ও ছেলে। তারা সেখান থেকে এ ব্যাংকে আমার একাউন্টে (স.হি. নং-১৭৪৮০) টাকা পাঠান। গত ১৩ জুলাই তথ্য জানতে গিয়ে একাউন্টে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা কম পাওয়া যায়। বিষয়টি ম্যানেজারকে জানানো হলে এ ঘটনার জন্য ক্যাশ অফিসার বদরুল হাসান সনিকে দায়ী করা হয়। পরবর্তীতে গত ১৪ জুলাই ৫ লাখ টাকা এবং ১৫ জুলাই ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা আমার একাউন্টে জমা করেন অভিযুক্ত কর্মকর্তা সনি। প্রায় একই অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী অন্য গ্রাহকরা।

এব্যাপারে ব্যাংকের ওই শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন জানান, সোমবারেও কয়েক গ্রাহক তাদের একাউন্টে জমাকৃত টাকার গড়মিলের তথ্য ও অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। ব্যাংকের এ শাখার গ্রাহকদের হিসাব থেকে কি পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে তা নিশ্চিত হতে অডিট করা হচ্ছে। তবে কারো একার পক্ষে ব্যাংকের গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা সম্ভব নয়। ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার বদরুল হাসান সনির কাছ থেকে এ পর্যন্ত এক কোটি ৩০ লাখ টাকা উদ্ধার করে গ্রাহকের হিসাবে জমা দেওয়া হয়েছে।

জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ প্রসঙ্গে সাময়িক বরখাস্তকৃত প্রিন্সিপাল অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, গ্রাহকদের স্বাক্ষর নকল করে ক্যাশ অফিসার বদরুল হাসান সনি চেক বই উত্তোলন করেছেন। পরবর্তীতে নিবন্ধন না করে নকল স্বাক্ষর দিয়ে চেকের পাতার মাধ্যমে গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা উঠিয়ে তিনি আত্মসাৎ করেছেন। নিজের কম্পিউটারের আইডি লক হওয়ার কথা বলে সনি কৌশলে আমার আইডি ও কম্পিউটার করে নিজেই অথারাইজেশন দিয়ে গ্রাহকের একাউন্টের টাকা উঠিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। একইভাবে তিনি ক্যাশ অফিসার দেলোয়ার হোসেনের আইডি ব্যবহার করেছেন। সম্প্রতি বিষয়টি ধরা পড়লে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এরপ্রেক্ষিতে অডিট কার্যক্রম শুরু হয়।

এব্যাপারে ক্যাশ অফিসার বদরুল হাসান সনি অন্য কর্মকর্তাদের আইডি ব্যবহারের কথা অস্বীকার করে বলেন, ব্যাংকের গ্রাহকদের হিসাব থেকে একার পক্ষে টাকা উঠিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। টাকা তুলতে ভেরিফিকেশনের জন্য চারজনের স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয়। গ্রাহকের হিসাব থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করে সনি জানান, নজরুল ইসলাম আমার সিডি ইনচার্জ হিসেবে উত্তোলনকৃত টাকার ভাগ আমার কাছ থেকে নিয়েছেন।

অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের গাজীপুর জোনাল অফিসের উপ-মহা ব্যবস্থাপক শামীম আরা সুলতানা গণি জানান, সম্প্রতি ব্যাংকের শ্রীপুর শাখার গ্রাহকদের একাউন্টে সঞ্চিত টাকার হিসেবে গড়মিলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরপ্রেক্ষিতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ওই শাখা পরিদর্শণ করেছেন। ইতোমধ্যে ওই শাখার অগ্রণী ব্যাংকের শ্রীপুর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মো. নজরুল ইসলাম, ক্যাশ অফিসার বদরুল হাসান সনি ও মো. দেলোয়ার হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল হালিমকে ঘটনার ব্যাখ্যা তলব করে ঢাকায় বদলী করা হয়েছে। গ্রাহকদের একাউন্টের টাকার গড়মিল নিশ্চিত করতে অডিট টিম গঠণ করে তদন্ত করা হচ্ছে। গ্রাহকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হন সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। গ্রাহকদের টাকা রিফান্ড করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তদন্তের পর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।