এক.

ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বেশ কতক পত্র পত্রিকা। একখানা সংবাদপত্র হাতে নিয়ে তাতে চোখ বোলাতে লাগলো সজীব। বড় বড় হেড লাইনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো।

‘শহরের নিউ মার্কেটে চাঞ্চল্যকর ডাকাতি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে চোখ আটকে গেলো সজীবের। প্রতিবেদনটির সংক্ষিপ্ত কথা হচ্ছে – গতকাল রাত দশটার সময় শহরের নিউ মার্কেটের অনুপম জুয়েলার্সের মালিক জিম রহমান দোকান বন্ধ করতে উদ্যত হয়েছেন ঠিক সেই মুহূর্তে একদল ডাকাত আতর্কিত হামলা চালিয়ে তার দোকান থেকে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা মূল্যের স্বর্ণে চুনী বসানো দামী হার চুরি করে পালিয়ে যায়। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ যে, উক্ত হারটি ডেপুটি কমিশনার (ডি.সি) সাহেব তাঁর একমাত্র মেয়ের জন্মদিনের উপহার স্বরূপ তৈরি করার জন্যে অনুপম জুয়েলার্সে দিয়েছিলেন। পুলিশ সাথে সাথে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেও মূল্যবান হারটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

প্রতিবেদনটা পরে চঞ্চল হয়ে ওঠলো তরুণ গোয়েন্দা সজীব। হঠাৎ কলিং বেলটা বেজে ওঠলো। এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো সজীব। প্রবেশ করলো তার অন্যতম বন্ধু ও তার সহকারী অমর।
অমর সজীবের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘কিরে, কি ব্যাপার আজ তোকে এমন কেন?’

সজীব বললো, ‘আজকের সংবাদপত্র পড়েছিস?’

কৌতুহলী কণ্ঠে অমর বললো, ‘পড়িনিতো, কেন কি ব্যাপার?’

সংবাদপত্র অমরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সজীব বললো, ‘পড়ে দেখ!’

অমর পড়তে লাগলো। পড়া শেষ হলে বিষ্ময় কণ্ঠে বললো, ‘আশ্চর্য তো! জেলা প্রশাসক সাহেবের মেয়ের হার চুরি….!’

অমর প্রশ্ন করলো, ‘এখন কি করবি ঠিক করেছিস?’

সজীব কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললো, ‘হাতে তো তেমন কাজ নেই। সরকারীভাবে আহবান না পাওয়া পর্যন্ত নিজ থেকেই তদন্ত চালিয়ে যাবো। চল, অনুপম জুয়েলার্সের মালিক জিম রহমান সাহেবের সাথে আলাপ করে আসি।’

সম্মতি জানালো অমর, ‘চল।’

ব্যক্তিগত মাইক্রো বাস নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো দু’জনে। নিউ মার্কেট এসে অনুপম জুয়েলার্সের দিকে এগিয়ে গেলো ওরা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মডার্ণ দোকান। গেটের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তরুণ গোয়েন্দা সজীবকে দেখে পুলিশ দ্বার ছেড়ে দাঁড়ায়। ওরা দু’জন ভেতরে প্রবেশ করে দোকানটির চারপাশ ভালো করে দেখে নিলো। আতর্কিত হামলায় শোচনীয় অবস্থা দোকানটার।

সজীবকে দেখে এগিয়ে এলেন অনুপম জুয়েলার্সের মালিক জিম রহমান। প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি?’

‘আমি সজীব, গোয়েন্দা। সখ করে কিছু কিছু গোয়েন্দাগিরি করে থাকি। আর এ আমার বন্ধু ও সহকারী অমর।’

জিম রহমান খুশী হয়ে বললেন, ‘বেশ, বেশ; আপনার আগমনে আনন্দিত হয়েছি। তা হঠাৎ কি মনে করে?’

‘গত রাতের ঘটনাটির সম্বন্ধে কিছু জানতে এসেছি। যদি কিছু তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন তবে কৃতার্থ হই। আশা করছি যথাসাধ্য আমাদের সহযোগিতা করবেন।’

‘বেশ যথাসাধ্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।’

‘আপনি কতদিন আগে ডি.সি সাহেবের কাছ থেকে স্বর্ণ ও চুনী পাথরের হারটি তৈরি করার অর্ডার পেয়েছিলেন?’

‘পাঁচ দিন আগে।’

‘ডেলিভারি দিন ধার্য হয়েছিলো কবে?’

‘ডেলিভারি দিন ধার্য হয়নি। পনেরো দিন পরে ডি.সি সাহেবের মেয়ে তুলি’র জন্মদিন। তার আগেই হারটি ডেলিভারি দেয়ার কথা ছিলো।’
একটুক্ষণ থেমে জিম রহমান আবার বলতে লাগলেন, ‘ঘটনার দিন রাত প্রায় আট টার সময় তুলি এসে বললো, হারটা দেখতে চায়। এরপর আয়রন সেফটা খুলে হারটা তাকে দেখালাম। হাতে নিয়ে খানিকক্ষণ নেড়ে চেড়ে দেখে জানালো, ডিজাইনটা পছন্দ হয়নি। এরপর অন্য এক ডিজাইন দিয়ে গেলো।’

‘তুলি কে এর পূর্বে কখনও দেখেছিলেন কি?’

‘না।’

‘তুলি আপনার কাছ থেকে বিদায় নেয়ার কতক্ষণ পর দোকানে ডাকাত পড়ে?’

‘প্রায় ঘন্টা দেড়েক পর।’

‘এ সময় কোনো ক্রেতা কি আপনার দোকানে ছিলো?’

‘হ্যাঁ। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শরীফ রহমান।’

‘তিনি কেন এসেছিলেন?’

‘কোথায় নাকি তাঁর নিমন্ত্রণ ছিলো। নিমন্ত্রণের উপহার স্বরূপ কম দামী একটা অলঙ্কার কেনার জন্যে।’

‘আচ্ছা, শরীফ রহমান কি তুলির হারটা দেখেছিলেন?’

‘হ্যা, দেখে বেশ প্রশংসা করছিলেন। এমন সুন্দর আর মূল্যবান হার।’

‘যখন আপনার দোকানে ডাকাত পরে, তখন কি শরীর রহমান দোকানেই ছিলেন?’

‘হ্যাঁ, সেই সময় তিনি দোকানেই ছিলেন। পরে গন্ডগোলে কোথায় যে গেলেন লক্ষ্য করিনি।’

‘এখন বর্তমানে দোকানে কেনা বেচা বন্ধ রেখেছেন, তাই না?’

‘হ্যাঁ, পুলিশ অফিসার অজয় শেখের নির্দেশে দোকানে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়না। এছাড়া তদন্তের সুবিধার্থে কোনো জিনিস নাড়া চাড়াও করিনা।’

অমর চারদিক ভালো করে সতর্ক দৃষ্টিতে দেখছিলো এবং কথাবার্তার প্রয়োজনীয় অংশ নোট করে নিচ্ছিলো।
জিম রহমান বললেন, ‘দেখুন বাবা সজীব। এ ব্যাপারে যখন নিজে থেকেই উৎসাহ দেখাচ্ছেন, তখন আমারও ইচ্ছে অপহৃত হারটা আপনি উদ্ধার করে দিন। আপনার তদন্তের ওপর যতটা ভরসা রাখা যায় পুলিশের ওপর তার কিছুই আশা করতে পারিনে।’

সজীব বললো, আমি সাধ্যমত চেষ্টা করবো।’

ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলো সজীব ও অমর। যাবার সময় গেটে মোতায়নকৃত একজন পুলিশকে সজীব বললো, ‘অনুগ্রহ করে অজয় শেখকে বললেন, আমরা এসেছিলাম।’

অনুপম জুয়েলার্স থেকে বেরিয়ে ওরা রওয়ানা দিলো বাসভবনের দিকে।

তরুণ গোয়েন্দা সজীব। অনার্স পড়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রাইভেট গোয়েন্দার কাজ করে সে। বাবা দূর্বৃত্তের হাতে প্রাণ হারান। মাও বেঁচে নেই। ছেলের ভবিষ্যতের জন্যে বাবা অনেক কিছু করে গেছেন। কয়েকটা বাড়ি, গাড়ি, ধন- সম্পদ অনেক কিছুই উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। দাদা ছিলেন জমিদার বংশের লোক। সজীবের বাবা ছিলেন একজন স্বনামধন্য সিআইডি পুলিশ অফিসার। সজীব ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে অনেক অভিযানে গেছে। শত বিপদেও বাবা ছেলেকে কাছ ছাড়া করেননি। সেই থেকে সজীব অসীম সাহসী এবং বুদ্ধিও খুব তীক্ষ্ণ। এতো কম বয়সী এই ছেলের সাহস আর তীক্ষ্ণ বুদ্ধি রীতিমতো লক্ষ্যনীয়।

ক্রমশ চলবে ___