চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আল হাইআতুল উলয়া লিল জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল) পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এদিকে গত শনিবার সন্ধ্যায় হাটহাজারী মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত মজলিসে শুরার বৈঠকে শুরার নতুন নদস্য অন্তর্ভূক্তিসহ নানা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এছাড়া ওই বৈঠকে রোববার থেকে মাদ্রাসার ক্লাশ যথারীতি চলার সিদ্ধান্ত হলেও মাদ্রাসার শিক্ষকরা শ্রেণি কক্ষের ক্লাস পূর্ণ বন্টনের জন্য বন্ধ ছিল। অন্যদিকে মাদ্রাসা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করা মাদ্রাসাটির প্রাক্তন মহাপরিচালক সদ্য প্রয়াত দেশের প্রবীণ কওমী আলেম আল্লামা আহমদ শফির প্রস্থান মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক, ভক্ত ও অনুরাগীদের এখনও কাঁদিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া শুরা কর্তৃক নিয়োগকৃত মাদ্রাসার তিন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসারে হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিচালিত হবে। গতকাল শনিবার রাতে মাদ্রাসার মজলিসে শূরার এক জরুরী বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ তিন শিক্ষক হলেন-মুফতি আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ আহম্মদ ও মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহিয়া। মাদ্রাসার সাবেক সহকারি পরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে মাদ্রাসার প্রধান শায়খুল হাদিস ও শিক্ষা সচিব করা হয়েছে।

জানা গেছে, সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুতে রোববার পরীক্ষা শুরু হবে কিনা তা নিয়ে পরীক্ষার্থীদের সংশয় ছিল। তবে গত শনিবার হাইআতুল উলয়ার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা মুহাম্মাদ ইসমাইল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পূর্ব উল্লেখিত সময়ে পরীক্ষার অনুষ্ঠিত হবে।
এরই ধারাবাহিকতায় সারাদেশের ন্যায় হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রায় ১৪শ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এসব পরীক্ষার্থীরা মাদ্রাসার শিক্ষা ভবনের হল রুমে বসে পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষা শুরুর আগে শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীরা সদ্য প্রয়াত মাদ্রাসাটির প্রাক্তন মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফীর রুহের আত্মার মাহফেরাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করে। এরআগে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক ও প্রধান শায়খুল হাদিস এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী স্বশরীরে উপস্থিত থেকে পরীক্ষার্তী প্রবেশ পত্র সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করেন।

পরীক্ষা অংশ নেয়া মঞ্জুরুল হাসান নামে এক পরীক্ষার্থী এ প্রতিবেদককে জানান, পরীক্ষা শুরুর আগে আমরা সকলে বড় হুজুরের জন্য আল্লাহর কাঠে প্রার্থনা করেছি। যদিও তাঁর (হুজুর) চলে যাওয়া আমরা মেনে নিতে পারছি না। যেহেতু এটা একটি কেন্দ্রীয় পরীক্ষা, তাই আমাদেরকে বাদ্য হয়ে অংশ নিতে হয়েছে।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক ও হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল) পরীক্ষা ১০ বিষয়ের হবে। আজের পরীক্ষা ৩ ঘণ্টা ব্যাপী সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ৬টি বোর্ডের অন্তর্ভূক্ত বাংলাদেশের সবকটি দাওরায়ে হাদিস কওমী মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা হাইআতুল উলয়ার অধীনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষা শেষ হবে ২৯ সেপ্টেম্বর।

এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় ফটিকছড়ির নানুপুর মাদ্রাসার মুহতামিম ও হাটহাজারী মাদ্রাসায় শুরা কমিটির সদস্য মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরীল সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মজলিসে শুরার বৈঠকে শুরার নতুন সদস্য অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এরা হলেন মারকাজুল ইসলাম মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি আবদুল মালেক (ঢাকা), মাদানীনগর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা ফয়জুল্লাহ (ঢাকা), বাথুয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মুহাম্মদ শফি (হাটহাজারী), চারিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আবদুল্লাহ (হাটহাজারী) ও মাওলানা শাহাদাত হোসেন (রাঙ্গুনিয়া)। অন্যদিকে মাদ্রাসা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তথা ৬ দফা দাবীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করা হাটহাজারী মাদ্রাসাটির প্রাক্তন মহাপরিচালক সদ্য প্রয়াত দেশের প্রবীণ কওমী আলেম ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফির প্রস্থান মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক, ভক্ত ও অনুরাগীরা এখনও তাঁর মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেনা। দাফনের পর থেকেই তাঁর কবর জিয়ারত করা অব্যাহত রেখেছে ছাত্র, আলেম-ওলামা, জনসাধারণ ও পথচারী। এ সময় মুনাজাতে অনেকে চোখের অশ্রুসীক্ত হতে দেখা গেছে।

টাংগাইল থেকে আগত মুফতী সাইফুল ইসলাম জানান, আমি হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র। বড় হুজুরের কাছে বুখারী পড়ার স্বপ্ন ছিল। আমার স্বপ্ন আল্লাহ কবুল করেছেন। হুজুরের মৃত্যুর খবর শুনার পর ৭০জনের একটি কাফেলা নিয়ে জানাজায় এসেছি। অধিকাংশ সঙ্গীরা চলে গেলেও আমি রয়ে গেছি। এ হাটহাজারী আমার জীবন পরিবর্তনে বিশাল ভূমিকা রেখেছে। এ মায়া ছেড়ে চলে যেতে মন চাইছে না। বড় হুজুরের জন্য মনে কাঁদছে। শতবর্ষী এ মহান নেতা ও সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার বিয়োগ দেশের ধর্মীয় অঙ্গনে কতটা শূন্যতা তৈরি করেছে তা আদৌ পূরণ হবে কি না তা বুঝতে অপেক্ষা করতে হবে আমাদের।

প্রসঙ্গত, আল্লামা আহমদ শফী ছিলেন একাধারে দেশের সর্ববৃহৎ কওমী মাদ্রাসার প্রক্তন মহাপরিচালক, সম্মিলিত কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড হাইয়াতুল উলয়ার, বেফাকের চেয়ারম্যান এবং হেফাজতে ইসলামের আমির ছিলেন। দেশের ইতিহাসে একই সঙ্গে এতগুলি শীর্ষ পদে থেকে সুচারুরূপে দায়িত্ব পালন করা আল্লামা আহমদ শফী গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার গে-ারিয়ার আসগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।