পদের নাম মাদ্রাসার ক্ষেত্রে সহকারী মৌলভি এবং স্কুলের ক্ষেত্রে সহকারী শিক্ষক (ধর্ম )। দুই পদবি প্রাপ্ত ব্যক্তিই মূলত মাধ্যমিক পর্যায়ের ধর্মীয় শিক্ষক। পার্থক্য শুধু এখানেই যে,তাদের দু’জনের একজন চাকরি করেন স্কুলে এবং অপরজন চাকরি করেন দাখিল মাদ্রাসায় অথবা তদূর্ধ্ব কোন মাদ্রাসায়। এদের পদ মূলত এক,চাকরিতে প্রবেশের যোগ্যতা এক, চাকরির পরীক্ষার সিলেবাস এক,এমনকি নিবন্ধন পরীক্ষার 000প্রশ্ন ও সময়ও এক। অর্থাৎ এরা এক নিবন্ধনে,এক প্রশ্নে নিবন্ধিত হন। তাহলে প্রশ্ন হলো এতো একের ভিড়ে ভিন্নতা কোথায়?

মূল পার্থক্য হলো ১০ম গ্রেড প্রাপ্তি নিয়ে। স্কুলের সহকারী শিক্ষকগণ (ধর্ম) যরা কামিল/সমমান পাশ তারা ১০ম গ্রেড এর বেতন প্রাপ্ত হন কিন্তু এমপিও নীতিমালার ত্রুটির কারণে মাদ্রাসার সহকারী মৌলভিগণ যারা কামিল/সমমান পাশ তারা ১০ম গ্রেড প্রাপ্ত হচ্ছেন না। এতে যেমন এসব বঞ্চিত শিক্ষকগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি ভুগছেন নানা জটিলতায়।

এখন দেখে নেওয়া যাক কোন এমপিও নীতিমালায় কী আছে।

এখানে শুধু ১০ম গ্রেড প্রাপ্তির অংশটুকু উল্লেখ করছি।

১.বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ( স্কুল ও কলেজ) এর জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা, ২০১৮ এর “বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়োগ, যোগ্যতা,অভিজ্ঞতা ও বেতনস্কেল ” এর “বিদ্যালয়” অংশের ২০ নম্বর ক্রমিকে সহকারী শিক্ষক (ধর্ম) যারা ১০ম গ্রেড পাবেন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে বলা হয়েছে-

“১,ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে-

ক.ফাজিল/সমমান ডিগ্রি ও বিএড ডিগ্রি/সমমান।

অথবা কামিল/সমমান ডিগ্রি।

অর্থাৎ কামিল বা সমমান পাশ শিক্ষকগণ ১০ম গ্রেডে বেতন পাবেন।

এবং ফাজিল বা সমমান পাশ শিক্ষকগণ ১১তম গ্রেডে বেতন পাবেন।

(যাদের কামিল/মাস্টার্স /সমমান/বিএড/এমএড ডিগ্রি নেই।)

২.বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা, ২০১৮ তে-

যেসব সহকারী মৌলভি ১০ম গ্রেডে বেতন পাবেন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে ক্রমিক নম্বর ১৮ তে বলা হয়েছে –

” (১) বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড হতে ফাজিল / স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে সমমান ডিগ্রি সহ বিএমএড/বিএড/সমমান।

অথবা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়/ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মাদ্রাসা সমূহ হতে ফাজিল বা সমমান ডিগ্রি সহ বিএমএড/বিএড/সমমান।

অথবা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় / স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের থিওলজি অনুষদ,আরবি ও ফিকাহ বিভাগ হতে অনার্স ডিগ্রি সহ বিএমএড/বিএড/সমমান।

খেয়াল করুন এখানে কামিল/মাস্টার্স /সমমান এমন কোন শব্দ নেই। আবার প্রতিটির ক্ষেত্রে বিএমএড/বিএড/সমমান উল্লেখ আছে।

অর্থাৎ কামিল /সমমান পাশ সহকারী মৌলভিগণ ১১ তম গ্রেডে বেতন পাবেন।

এবং ফাজিল বা সমমান পাশ সহকারী মৌলভিগণও ১১তম গ্রেডে বেতন পাবেন।

(যাদের কামিল/মাস্টার্স /সমমান/বিএড/এমএড ইত্যাদি ডিগ্রি নেই।)

ফলে কামিল বা সমমান পাশ সহকারী মৌলভিগণ বিএড/ সমমান কোর্স না করলে ১০ম গ্রেড প্রাপ্ত হবেন না।

একজন কমিল/সমমান পাশের জন্য ১০ম গ্রেডে বেতন পাবেন এবং অন্যজন ১১তম গ্রডে বেতন পাবেন এটা হতে পারে না।

এবার দেখাযাক কামিল/সমমমান পাশ সহকারী মৌলভিগণ ১০ম গ্রেড না পেলে কী কী সুবিধা হতে বঞ্চিত হবেন।

প্রথমতঃ প্রতিমাসে ৩৫০০ টাকা বেতন কম পাবেন। (সামান্য বেতনের এ চাকরিতে মাসে ৩৫০০টাকা কম পাওয়া একেবারে কম কথা নয়)।

মূল বেতনের ৫% হারে ইনক্রিমেন্ট হলে এ পার্থক্য প্রতিবছর আরও বৃদ্ধি পাবে।

দ্বিতীয়তঃ বাৎসরিক বোনাস আনুপাতিক হারে কম পাবেন।

তৃতীয়তঃ বিএমএড/বিএড/এমএড করার জন্য ১ বছর (নিয়মিত) বা ২ বছর (অনিয়মিত) সময় লাগে।

(অধিকাংশ ক্ষেত্রে চাকরির প্রথম বছরে বিএড করার জন্য প্রতিষ্ঠান ছুটি দেন না ফলে বিএড শেষ করতে কমপক্ষে তিন/চার বছর লেগে যায়।)

চতুর্থতঃ বিএমএড/বিএড/এমএড করতে কমবেশি ৫০,০০০ টাকা খরচ হয়।

পঞ্চমতঃ খুবই গুরুত্বপূর্ণ,স্কুলের সহকারী শিক্ষক (ধর্ম) এমপিও নীতিমালার ১১.৫ অনুযায়ী এমপিও ভুক্তির ১০ বছর শেষে ৯ম এবং ১৬ বছর পূর্ণ হলে ৮ম গ্রেডে উন্নিত হবেন।

কিন্তু মাদ্রাসার সহকারী মৌলভিগণ (কামিল/সমমসন পাশ) ১১তম গ্রেডে যোগদান করে দুই/তিন/চার বছর পর বিএড/এমএড করে ১০ম গ্রেড প্রাপ্ত হবেন।এবং এখান থেকে ১০ বছর পর ৯ম গ্রেডে উন্নিত হবেন।

অর্থাৎ ৯ গ্রেডে উন্নিত হতে এই বঞ্চিত সহকারী মৌলভিগণের সময় লাগবে ১০ বছরের পরিবর্তে কমপক্ষে ১২ বছর/১৩ বছর / তারও বেশি।

এদিকে ১২ জুলাই ২০২০ তারিখের অর্থ মন্ত্রণালয়ের, অর্থ বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত স্পষ্টিকরণ চিঠিতে বিএড স্কেলকে একটি উচ্চতর গ্রেড হিসেবে ধরা হয়েছে।

মাদ্রাসার ক্ষেত্রেও যদি উক্ত নির্দেশনা প্রযোজ্য হয় তবে এই সহকারী মৌলভিগণ ৯ম গ্রেডেই অবসরপ্রাপ্ত হবেন, ৮ম গ্রেড প্রাপ্ত হবেন না।

কেননা এ শিক্ষকগণের ২ টি উচ্চতর গ্রেড শেষ হয়ে যাচ্ছে।

এতে শুধু তাদেরকে একধাপ নিচেই অবসরে যেতে হবে না বরং অবসর পরবর্তি সুবিধাদিও কম পাবেন।

যা অত্যন্ত অমানবিক।

আমি মনে করি দুটি পদেরই বেতন ও সকল সুবিধাদি এক হওয়া উচিৎ।

তাই অবিলম্বে মাদ্রাসার এমপিও নীতিমালা সংশোধন করে স্কুলের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার অনুরূপ করে উক্ত সমস্যার সমাধান করা হোক।

এস.এম.মিনহাজ কাদির
সহকারী মৌলভি
গৌরীনাথপুর দাখিল মাদ্রাসা।
মহেশপুর, ঝিনাইদহ।