রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ভুয়া নাসিম রিয়েল এস্টেটের মালিক ইমাম হোসেন নাসিম (৬৬) এবং তার স্ত্রী হালিমা আক্তার সালমাকে (৩২) অস্ত্র মামলায় তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ শুক্রবার (২ অক্টোবর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মইনুল ইসলাম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। আদালতে সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-৪ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আক্তারুজ্জামান আজ তাদেরকে আদালতে হাজির করেন। একইসঙ্গে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এসময় আসামিপক্ষের আইনজীবী জহিরুল হক শামীম রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষ বিরোধিতা করে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এর আগে গত বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রূপনগর আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তৃতীয় স্ত্রী হালিমা আক্তার সালমাসহ নাসিমকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪।

পরের দিন বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যা বের মিডিয়া সেন্টারে র্যাতব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, নাসিম অসংখ্য মানুষের সঙ্গে জমি বিক্রির নামে প্রতারণা করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অনেকে আইনের আশ্রয় নিলেও আদালত থেকে জামিন নিয়ে তাদের হুমকি দিতো সে। সে অফিসে সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করে আত্মগোপনে তা ব্যবহার করতো। র‌্যাব জানায়, নাসিম ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত একটি কোম্পানির ঠিকাদারির কাজ করে এলেও মূলত ২০০২ সাল থেকে অভিনবভাবে প্রতারণামূলক কৌশলের মাধ্যমে নিজেকে কথিত নাসিম রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিক পরিচয় দিয়ে সাইনবোর্ড টানানো শুরু করে। ক্ষেত্রবিশেষে অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে সাভারের কাউন্দিয়া এলাকায় অন্যের জমি ও খাসজমি দখল করে আবাসিক শহর গড়ে দেওয়ার নামে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের সঙ্গে বায়না করে এবং প্রত্যেকের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে নেয়। এছাড়া ২৫০ জনকে ভুয়া রেজিস্ট্রেশন দিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে নেয়। এভাবে সে প্রায় ২৮০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। এর পাশাপাশি সে ২০০৫ থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে ভিন্ন ভিন্নভাবে মানুষের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করে।

এ পর্যন্ত তার মালিকানাধীন ১৬টি প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলো হচ্ছে— ১. নাসিম রিয়েল এস্টেট লি., ২. নাসিম ডেভেলপার লি., ৩. নাসিম অ্যাগ্রো ফুড লি., ৪. নাসিম বাজার, ৫. এসবি ফাউন্ডেশন, ৬. ডা. বেলায়েত হোসেন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ৭. নাসিম পার্সেল ও কুরিয়ার সার্ভিস, ৮. সাপ্তাহিক ইমারত অর্থ. ৯. নাসিম শিপ বিল্ডার্স, ১০. নাসিম ইঞ্জিনিয়ারিং ও কনসালটেন্সি, ১১. নাসিম ট্রেডিং লিমিটেড ১২. সাহানা আই হাসপাতাল, ১৩. বাংলা নিউজ ১৬, ১৪. নাসিম ড্রিংকিং ওয়াটার, ১৫. নাসিম সুগার ও ১৬. নাসিম বেভারেজ।

র‌্যাব বলছে, আসামি নাসিম অভিনবপন্থা অবলম্বন করে দীর্ঘদিন যাবৎ সাধারণ জনগণের কাছে প্রতারণা করে নিজেকে বিভিন্ন সময় রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিক পরিচয় দিতো। সে অস্ত্র দেখিয়ে জমি দখল করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল। নামে-বেনামে ৩২টি সিমকার্ড ব্যবহার করে সবার ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে প্রতারণার কাজ পরিচালনা করতো নাসিম। এছাড়া সে ৪টি ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করতো।
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় নাসিম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রতারণা, ভূমিদস্যুতা, মাদক ও জাল টাকা মামলার প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে শতাধিক মামলা করেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় প্রতারণা মামলার ৫৫টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে প্রতারণা সংক্রান্ত অসংখ্য জিডি ও অভিযোগ রয়েছে। নাসিম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, প্রতারণার আরও চারটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আসামিরা দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য ইয়াবা ও বিদেশি মদ সংগ্রহ করে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার ডিলার ও খুচরা মাদক কারবারীদের কাছে বিক্রি করে আসছিল। এছাড়াও তারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জাল নোটের ব্যবসা পরিচালনা করতো।

গ্রেপ্তারের সময় নাসিমের কাছ থেকে একটি ৭.৬৫ মিলিমিটার বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, তিন রাউন্ড গুলি, এক লাখ ৩৫ হাজার জাল টাকা, এক হাজার ৪০০ পিস ইয়াবা, ২ বোতল বিদেশি মদ, ৪টি ওয়াকিটকি সেট, ৬টি পাসপোর্ট, ৩৭টি ব্যাংক চেক বই জব্দ করে র‌্যাব।