বিমানের অতীতের অভিজ্ঞতা সুখকর নয় উল্লেখ করে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহিবুল হক জানিয়েছেন বিমান বহরে ৭৭৭-২০০ যে দুটো বিমান লিজে নেয়া হয়েছিল তাতে মোট ১১০০ কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়েছে। প্রতি মাসে ভর্তুকি দিতে হয়েছে ১১ কোটি টাকা।গত মার্চ থেকে সেই দায় দেনা থেকে বিমান মুক্ত হতে পেরেছে। এ বিমান দুটি চালিয়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২২ কোটি টাকা আর খরচ হয়েছিল ৩৩০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট লোকসান ১১০০ কোটি টাকা।

রোববার (৪ অক্টোবর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৪তম বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা যায়।বৈঠকে সিনিয়র সচিব আরও উল্লেখ করেন, বিমান লিজ সংস্কৃতি থেকে একেবারে বেরিয়ে আসতে চাইছে। এ বছরে নতুন তিনটি ড্যাশ-৮ বিমান আসার কথা ছিল। তার মধ্যে দুটো এ বছরের মধ্যে বিমান বহরে যুক্ত হবে আর বাকিটা জানুয়ারিতে যুক্ত হবে বলে আশা করা যায়। এ বিমানগুলো ২৪ মিলিয়ন ডলার দিয়ে কেনা হয়েছে।

সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার বলেন, বিমানের লিজ প্রক্রিয়াটা তার কাছে স্পষ্ট নয়। এ প্রক্রিয়ার সময় বিষয়টা নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা করার প্রয়োজন ছিল বলে তিনি মনে করেন।প্রসঙ্গত, পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুটি উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর লিজ নেয় বিমান। এর একটি বিমানের বহরে যুক্ত হয় ২০১৪ সালের মার্চে এবং অন্যটি একই বছরের মে মাসে। এক বছরের কম সময় অর্থাৎ ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন।

দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় বাকি ইঞ্জিনটিও। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আবারও ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। গত ডিসেম্বরে নষ্ট হয় ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও। পরে ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। কোনো সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। সে কারণে লিজ নেয়া ও মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান উভয়কেই অর্থ দিতে হয় বিমানকে।

বৈঠকে সিনিয়র সচিব আরও বলেন, জুলাই মাসে বিমান ১৮৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে। তার আগের মাসে আয় ছিল ১৬৯ কোটি টাকার মতো। এ ছাড়া সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বিমান তার কোনো কর্মীকে ছাঁটাই করেনি। বেতন কিছুটা কাটছাঁট করে সব কর্মীকে ধরে রাখা হয়েছে। গত কয়েক বছর আগে কয়েকটি নতুন এয়ারক্রাফট কেনা হয়েছিল। এত কিছুর পরও বিমান সবগুলো কিস্তি পরিশোধ করেছে।এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের কাছ থেকে বিমান ১০০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল, যার মধ্যে মাত্র ৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বাকি টাকা খরচ হবে না মর্মে তিনি কমিটিকে অবহিত করেন।

এদিকে সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, বৈঠকে আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন) বিল, ২০২০, বাংলাদেশ ট্রাভেল এজিন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ২০২০-২১ সালের বাজেট ব্যবহার এবং বৈশ্বিক করোনা মহামারি প্রতিরোধে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।বৈঠকে আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন) বিল ২০২০ এর প্রয়োজনীয় সংশোধন সাপেক্ষে জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।

অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে আধুনিক ও যুগোপযোগী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের জন্য কমিটি বৈঠকে সুপারিশ করে।করোনা মহামারি প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে জনসচেতনতা বাড়াতে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করে কমিটি।কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তানভীর ইমাম, আশেক উল্লাহ রফিক এবং সৈয়দা রুবিনা আক্তার অংশ নেন। বৈঠকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবসহ মন্ত্রণালয় এবং সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।