নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় আবাদি জমি থেকে বালু উঠাতে গিয়ে তিনটি ইটের কক্ষের সন্ধান পাওয়া গেছে। উপজেলার জাহানপুর ইউনিয়নের উত্তর জাহানপুর গ্রামে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের অনেক নিদর্শন দেখে এটি ‘মধ্যযুগের নির্দশন’ বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

জানাগেছে, উপজেলার উত্তর জাহানপুর গ্রামে হেলাল মেম্বারের বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ মিটার পূর্বদিকে আবাদি জমি থেকে গত কয়েক বছর ধরে বালু উঠাচ্ছেন স্থানীয়রা। উপজেলার পাগল দেওয়ান বিজিবি মোড় ও পাগল দেওয়ান পীরের মাজার থেকে শুরু করে উত্তর দিকে ধামইরহাট-জয়পুরহাট আঞ্চলিক মহাসড়কের নানাইচ বাজার হয়ে দক্ষিণ দিকে বিস্তীর্ণ এলাকার ভিটে-মাটি খুঁড়ে উৎকৃষ্ট মানের বালুর সন্ধান পাওয়া যায়।

জমির মালিকরা এসব বালু ১৫-২০ বছর ধরে বিক্রি করে আসছেন। এরমধ্যে ৭২ শতক সরকারের জমিটি নানাইচ গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর কাছে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়। তার চার মেয়ে ও স্ত্রী পলিমাটি খুঁড়ে চাষাবাদের জন্য জমিটি তৈরি করছিলেন। বালু উঠানোর জন্য খনন করতে গিয়ে তাদের জমিতে পলিমাটির নিচে তিনটি ইটের কক্ষ বেরিয়ে আসে। যেখানে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের অনেক নিদর্শন পড়ে থাকতে দেখা যায়। এসব দেখে অনুমান করা যায়, এটি অনেক (মধ্যযুগ) পুরোনো। মৃত মোহাম্মদ আলীর মেয়ে জমির মালিক ময়না বেগম বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে এ জমিতে চাষাবাদ করছি। জমি একটু উঁচু হওয়ায় পানির সমস্যা হয়। এ কারণে ঠিকমতো ধান ও রবিশস্যসহ কোনো ফসলই ভালো হতো না। জমি একটু নিচু করতে গত কয়েকদিন থেকে খনন করা হচ্ছে। জমি ২-৩ ফুট নিচু করতেই ইটের গাঁথুনী বেরিয়ে আসছে।’

জাহানপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক ও লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমরা ছোট থেকে দেখেছি, যুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনী এর আশেপাশে অনেক বাঙ্কার খনন করেছিল। তবে ইট এবং তার গাঁথুনী দেখে মনে হচ্ছে, এ স্থাপনা অনেক পুরোনো।’

বৃদ্ধ মমতাজ হোসেন বলেন, ‘একসময় এখানে ঝোপ-জঙ্গল ছিল। আমরা শুনেছি, এখানে কোনো একসময় নবাবের ছাউনি ছিল। আমার বাড়ির পাশে একটি জলকুয়াসহ ছোট ছোট ভাঙা (মাটির) হাঁড়ি-পাতিলের অংশবিশেষ দেখেছি।’

গত কয়েক বছর ধরে ধামইরহাটের পুরাতত্ত্ব ও নদীর ইতিবৃত্ত নিয়ে কাজ করছেন পাগল দেওয়ান ফাজিল মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ প্রভাষক আ.ন.ম আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখানে এমন একটি স্থাপনার অবস্থান কখনোই অনুমান করা যায়নি। তবে ইটের গঠন-প্রকৃতি নির্ণয়ে স্থাপনাটি মধ্যযুগের বলেই মনে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘১৭৭৭ মেজর রেনেল তার ম্যাপে এখানে ‘যবুনা’ নামে একটি নদী চিহ্নিত করেন। নদীটি বাংলা ১১৯৪ সালে অর্থাৎ ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দে তিস্তার মহাপ্লাবনের উৎসমুখে (সে সময়ের তিস্তা নদীর সোনাহার নামক স্থান) পলি জমা হয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি আবিষ্কৃত হওয়া এ স্থাপনা যবুনা নদীর পূর্ব শাখার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ছিল। ঠিক উত্তর দিকে ১ কিলোমিটার উজানে যবুনা দুটি শাখায় বিভক্ত হওয়ায় নদীর এ ত্রি-মোহনায় টোল আদায় বা অন্য কোনো কারণে এমন স্থাপনা থাকা অসম্ভব কিছু নয়।’

আবিষ্কৃত স্থাপনা সম্পর্কে ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গণপতি রায় বলেন, ‘যেহেতু বিষয়টি আমি এখনো অবগত নই। তাই সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখবো।’

অনাবিষ্কৃত স্থাপনাটি সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের নজরে আনার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন সচেতন মহল।