নারীর প্রতি ভয়াবহ সহিংসতা অব্যাহত গতিতে বেড়েই চলছে বাংলাদেশে। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে এসব ঘটনার খবর প্রকাশ পাচ্ছে। এর সাথে হত্যা বা খুনের খবরও প্রতিদিন বর্ধিত হারে পাওয়া যাচ্ছে। কেন এমন ভয়াবহ বিপর্যয়, তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ‘রাজনৈতিক পরিচয় অপরাধ আড়াল করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হচ্ছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। অপরাধীরা বিশেষ কোটায় জামিনে মুক্তি পাচ্ছে। শেষে একবারে অভিযোগ থেকে খালাস পেয়ে যাচ্ছে। অপরাধগুলো যারা করছে তাদের বড় গলা রয়েই যায়। ফলে বর্ধিত হারে এমন বর্বরতা চালাতে উৎসাহ পাচ্ছে দুষ্কৃৃতকারী, ধর্ষক, নিপীড়করা। অপরপক্ষে ভুক্তভোগীরা বিচার না পেয়ে অপমান বঞ্চনায় হীনবল হয়ে লাঞ্ছিত জীবন যাপন করছে।’

সম্প্রতি ধর্ষণসহ বাংলাদেশে নারীর প্রতি নানাবিধ সহিংসতায় জাতিসঙ্ঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, দ্রুত একের পর এক ভয়াবহ নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই। দেশব্যাপী যখন নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন চলছে তখনও কিন্তু, নারী নির্যাতন বন্ধ হয় নাই। বরং অব্যাহভাবেই চলছে। মনে হচ্ছে এইটি এক ভয়াবহ ব্যাধিতে পরিনত হয়েছে।

ধর্ষক-গুন্ডা-দুর্নীতিবাজ-লুটেরা-অপরাধী ও তাদের রাজনৈতিক-প্রশাসনিক পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে কঠোর দমন অভিযানের কোন বিকল্প নাই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে পুলিশ, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, গোয়েন্দা সংস্থার নাকের ডগায় সারা দেশে এলাকায় এলাকায় সংঘবদ্ধ গুন্ডাবাহিনী, সংঘবদ্ধ ধর্ষকবাহিনী, সংঘবদ্ধ অপরাধীবাহিনী গড়ে উঠেছে। এ ব্যাপারে পুলিশ-আইন প্রয়োগকারী সংস্থা-গোয়েন্দা সংস্থা, এলাকার রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধিরা দায় এড়াতে পারে না, তাদেরও এসকল বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে এবং জবাব দিহির আওতায় আনতে হবে।

সরকারকেই এই সংঘবদ্ধ গুন্ডাবাহিনী, ধর্ষকবাহিনী, অপরাধীবাহিনীকে দমনের দায়িত্ব নিতে হবে। তুই রাজাকার বলে যেভাবে আওয়াজ তুলে রাজাকারদের সামাজিকভাবে বর্জন করা হয়েছিল ঠিক সেভাবেই তুই ধর্ষক, তুই গুন্ডা, তুই দুর্নীতিবাজ`, তুই লুটেরা বলে ধর্ষক, গুন্ডা, দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের সামাজিকভাবে বর্জনের জন্য সারাবছর ধরে দেশের প্রতিটি এলাকায় আন্দোলন চালু রাখতে হবে।

ধর্ষক, গুন্ডা, দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের ঠিকানা রাজনৈতিক দল আর তাদের রক্ষাকারী কোনো নেতা হতে পারে না। হৈ চৈ হলে, জানাজানি হলে, ভাইরাল হলে গ্রেফতার, বহিস্কার, দায়-দায়িত্ব অস্বীকার করে আর বাহবা পাওয়া যাবে না। শুধু ভাইরাল হলেই ব্যবস্থা গ্রহণ আর চাপা রাখতে পারলে অপরাধীকে রক্ষা করার নীতি পরিহার করুন। জনগনের বাহবা পেতে হলে আর একজন নারী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের স্বীকার হওয়া, আর একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ সংগঠিত হবার আগেই ধর্ষক, গুন্ডা, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, অপরাধীদ আর তাদের সংঘবদ্ধ বাহিনীগুলিকে এখনই রাজনৈতিক দল থেকে বের করে দিতে হবে।

করোনা মহামারীর চেয়ে বড় আকারে মহামারী হিসাবে দেখা দিয়েছে ধর্ষন, দুর্নীতি, লুটপাট। সুশাসন ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা ছাড়া করোনা, ধর্ষন, দুর্নীতি, লুটপাট এই চার মহামারী মোকাবেলা করা যাবে না। সুশাসন ও আইনের শাসনের দাবিতে রাজপথে গণসংগ্রাম গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নাই।

সবকিছুর প্রথমে নারীর পরিচয় তিনি একজন মানুষ। সমাজ এখনও অনেকক্ষেত্রে নারীকে মানুষ হিসেবে গণ্য করতে চায় না! তারপরই একজন নারী কারও মা, কারও বোন। এই কারও মা, বোন, মানুষ সত্ত্বা নারীকে মানুষ হিসেবেই মানুষের শ্রদ্ধা করা উচিত, গণ্য করা উচিত, মান্য করা উচিত—এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

একজন নারী একজন মা, পৃথিবীর কোনো কিছু মায়ের সঙ্গে তুলনা হয় না। যারা একজন মা আর বোনকে অন্য চোখে দেখে, ধর্ষণের মানসিকতা মনের মধ্যে লালন করে বেড়ায়— তার কোনো পরিচয় হয় না। সে পুরুষ না কি, তার চেয়ে বড় তিনি কখনোই মানুষ নন। তার একমাত্র পরিচয় সে ধর্ষক।

আমি সচেতন মানুষ হিসেবে আমার দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এই ধরণের ঘৃণিত অপরাধের বিরুদ্ধে আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি, ভবিষ্যতেও করে যাব। এমনকি আমি মাঠে ময়দানে সভা সমাবেশেও লেখালেখির মাধ্যমে ধর্ষণের মতো জঘন্য বিষয়টিকে প্লট হিসেবে বেছে নিয়েছি।
দেশে মহামারির চেয়েও ভয়ংকরভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ধর্ষণের মতো জঘন্যতম অপরাধ। এর কারণ ওইসব মানুষরূপী নরপশুদের নৈতিক অবক্ষয়, মাদকের বিস্তার, ধর্ষণসংশ্লিষ্ট আইনের সীমাবদ্ধতা, বিচার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতা। দল, মত, ক্ষমতা উর্ধ্বে গিয়ে ধর্ষণকারীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত চাই। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

।। মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার ।।
[ লেখক : বিশেষ প্রতিবেদক শ্যামল বাংলা ডট নেট ও শ্যামল বাংলা টিভি, সাবেক কাউন্সিলরঃ বিএফইউজে-বাংলাদেশ, সদস্য-ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ( ডিইউজে) ও প্রকাশকঃ জ্ঞান সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ]