ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বাদী হয়ে চরভদ্রাসন থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন ফরিদপুর জেলা নির্বাচন অফিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো. নওয়াবুল ইসলাম।

আদালতে এ মামলার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা জানিয়েছেন মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। আর চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজনীন খানম বলেছেন, মামলাটি তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মামলার আর্জিতে বাদী নওয়াবুল ইসলাম জানান, গত ১০ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে কেন্দ্রভিত্তিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করায় জেলা প্রশাসক অতুল সরকারকে মোবাইল ফোন করে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন কৈফিয়ত তলব ও সমর্থিত প্রার্থী পরাজিত হলে মহাসড়ক অবরোধসহ নানা প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন ও অশোভন আচরণ করেন। একই সঙ্গে নির্বাচনের দিনে একটি ভোটকেন্দ্রের বুথের সামনে জালভোট দেওয়া ও ধুমপান করার সময় একজন পোলিং এজেন্টকে আটকের পর চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন সুলতানা, ভাঙ্গার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল আমিন ও কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেদের সুস্থ মানসিকতাসম্পন্ন মানুষের পক্ষে উচ্চারণ অনুপযোগী অত্যন্ত অশালীন ভাষায় গালিগালাজ, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং হুমকি দেন বলেও অভিযোগ আনা হয়।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নওয়াবুল ইসলাম জানান, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণ লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা দায়েরের কথা বলা হয়। সে মোতাবেক মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

চরভদ্রাসন থানার ওসি নাজনীন খানম বলেন, এমপি মুজিবুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মামলার বিষয়ে সাংসদ মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন জানান, মামলার বিষয়টি তিনি জেনেছেন। এ বিষয়ে তিনি আদালতে লড়বেন বলে জানান।

গত ১০ অক্টোবর ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাফেজ মো. কাউসারকে সমর্থন দেন নিক্সন। নির্বাচনের সময় তিনি চরভদ্রাসনের ইউএনও জেসমিন সুলতানাকে ফোন করে তার এক কর্মীকে আটকের বিষয়ে জানতে চান এবং ভাঙ্গা থানার এস্যিলান্ডকে উদ্দেশ করে গালাগাল করেন। এ ছাড়া নির্বাচনের দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে সমাবেশে নিক্সন চৌধুরী জেলা প্রশাসক অতুল সরকারকে উদ্দেশ করে বক্তৃতা করেন। এ দুটি বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ব্যাখ্যা দেন সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী। সে সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চরভদ্রাসনের ইউএনওর সঙ্গে তার ফোনালাপ ‘সুপার এডিট’ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়া হয়েছে এবং ইউএনওর সঙ্গে তার কথোপকথন মিথ্যা। তাছাড়া তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে মামলা হলে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ডিসির বিরুদ্ধেও মামলা হবে।

এদিকে ফরিদপুরের সাংবাদিকদের কাছে ফোনালাপের ঘটনা সত্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা প্রকাশ হয়েছে তার দাড়ি, কমা পর্যন্ত ঠিক আছে বলে দাবি করেন চরভদ্রাসন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন সুলাতানা।

এদিকে তাকে নিয়ে ইউএনওকে ফোনে গালাগাল করেছেন নিক্সন চৌধুরী সেই ব্যক্তিকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার নাম এসএম লুৎফর রহমান রানা। তিনি মাদারীপুর জেলার কালকিনি পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি বিধিমালা অমান্য করে নির্বাচনে একজন প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট হওয়া ও কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে অসদাচরণ, জালভোট প্রদানের চেষ্টার অভিযোগ এনে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বুধবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বরখাস্তের চিঠি পাঠানো হয়।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করে এসিল্যান্ড আল আমিন বলেন, এসএম লুৎফর রহমান মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী। সরকারি চাকরিজীবী হয়েও তিনি উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে জালভোট দেওয়ার চেষ্টা করেন ও একজন প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ছিলেন। নির্বাচনের দিন চরযোদ্ধা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় এবং নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রাখতে তাকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়। এ সময় তিনি সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরীকে ফোন করে কথা বলেন। পরক্ষণেই সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী ধৃত ব্যক্তিকে ছেড়ে দিতে বলেন। পরবর্তীতে চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন করে গালাগাল করেন।

জেলা প্রশাসক এসএম লুৎফর রহমানের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এসএম লুৎফর রহমানকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের কথা জানান।