লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, বুড়িমারীতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর পুড়িয়ে মারার ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদ, নিহতের পরিবার ও পুলিশের পক্ষ থেকে একাধিক মামলা করা হবে। এর আগে, ঘটনার প্রকৃত কারণ ও দোষীদের চিহ্নিত করতে আলামত সংগ্রহ, তদন্ত ও স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবদ চলছে। শুক্রবার (৩০) পাটগ্রাম থানায় আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ঐ যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় আলামত সংগ্রহ, তদন্ত কার্যক্রম এবং জিজ্ঞাসাবাদ জারি রেখেছে পুলিশ। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) মাগরিবের নামাজের আগে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের দরজা ভেঙে ওই যুবককে বের করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে লাশ নিয়ে বুড়িমারী প্রথম বাঁশকল এলাকায় জয় ট্রেডার্সের সামনে লালমনিরহাট-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়কের ওপর কাঠখড়ি ও পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।

পুলিশ জানায়, নিহত শহিদুজ্জামান জুয়েল (৫০) রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রি পাড়ার মৃত আবু ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক লাইব্রেরিয়ান। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন শহিদুজ্জামান জুয়েলের সঙ্গে থাকা সুলতান জোবায়ের (৪৫) নামের আরও এক ব্যক্তি। তিনি একই এলাকার শেখ আব্বাস আলীর ছেলে, পেশায় দলিল লেখক।

পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, শহিদুজ্জামান জুয়েলকে উত্তেজিত জনতা যখন ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষের দরজা ভেঙে বের মারধর শুরু করে, তখন পুলিশ তাকে রক্ষার জন্য এগিয়ে যায়। এসময় পুলিশ সদস্যরাও আহত হন। তবে শহিদুজ্জামান জুয়েলকে রক্ষা করা যায়নি। তবে তার সঙ্গে থাকা অপর ব্যক্তিকে পুলিশ উদ্ধার করে।

নিহত ব্যক্তিকে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি কারও কথাই শুনেনি। কোনোভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। পুলিশ হ্যান্ডমাইকে বারবার বলার পরেও তারা শান্ত হয়নি। এক পর্যায়ে তাকে পিটিয়ে হত্যার পর সড়কে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে মামলার প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখনও কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। তবে সবকিছু প্রক্রিয়াধীন। প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।

এদিকে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নও (র‌্যাব) ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-১৩-এর কর্মকর্তা অতিরিক্ত হাফিজুর রহমান হাফিজ। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর। তিনি বলেন, ‘প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বৃহস্পতিবার রাতে শহিদুজ্জামান জুয়েল ও জোবায়েরকে রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হাফিজুল ইসলাম। ঘটনার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আসরের নামাজ শেষে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দুই জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি আসেন। মসজিদের খাদেম জুবেদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে তাদের একজন মসজিদে প্রবেশ করে কোরআন-হাদিসের বই রাখার তাকে অস্ত্র আছে বলে তল্লাশি শুরু করেন। একপর্যায়ে মসজিদের সামনে থাকা ৫-৬ জন মুসল্লি মসজিদের প্রবেশ করে ওই ব্যক্তিকে এবং বারান্দায় থাকা অপর ব্যক্তিকে মারধর করেন। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই দুই ব্যক্তিকে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষের ভেতরে ঢুকে তালা লাগিয়ে রক্ষার চেষ্টা করি। তবে মুহূর্তে শত শত লোকজন জড়ো হতে থাকে। আমি ও স্থানীয় রফিকুল ইসলাম প্রধান নামে এক ব্যক্তি পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন কুমার মোহন্ত, ইউএনও কামরুন নাহার, উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুল ও বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম নেওয়াজ নিশাতকে ফোন করে ঘটনাস্থলে আসতে বলি।

তবে উত্তেজিত জনতা কারও কথা না শুনে পরিষদের দরজা-জানালা ভেঙে এক ব্যক্তিকে বাইরে বের করে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে লাশ নিয়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়কের বুড়িমারী প্রথম বাঁশকল এলাকায় কাঠখড়ি ও পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়।’ ঘটনার সময় ৫-৬ হাজার উত্তেজিত মানুষ ছিল, কারও কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না বলে জানান তিনি।