রাজধানীর আদাবরে হাসপাতাল কর্মচারীদের মারধরে নিহত পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে বুধবারেও পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ নিহতের সহপাঠি, বন্ধু বান্ধব ও স্বজনরা নিহতের বাসায় ভীড় জমিয়েছেন। এএসপি আনিসুল করিম শিপন হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের বিচারের দাবীতে এদিন মানব বন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

ডিএমপি রমনা জোনের উপ পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ পুলিশের নিহত সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে বুধবার সকালে গাজীপুরে আসেন। তিনি শহরের বরুদা এলাকায় নিহতের বাসায় যান। তিনি নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন ও খোঁজ খবর নেন এবং শান্তনা দেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় নিহতের স্ত্রী, বাবা ও ভাই বোনসহ স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এসময় পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপন হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আইজিপি’র হস্তক্ষেপ কামনা করেন নিহতের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফাইজুদ্দিন আহমেদ ও বড় ভাই রেজাউল করিম সবুজ। পাশাপাশি স্ত্রী সন্তানসহ নিহতের অসহায় পরিবারের পাশে থাকার জন্য অনুরোধ জানান তারা। এসময় নিহতের বাবা ও বড়ভাই ছাড়াও বোন শামসুন্নাহার সুমন ও ডা. উম্মে সালমা এবং স্ত্রী শারমিন সুলতানাসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ডিএমপি’র উপ পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সময় এএসপি আনিসুল করিম হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দেন।

তিনি বলেন, ভিডিও ফুটেজ এবং এ পর্যন্ত তদন্তে যা পাওয়া গেছে তা থেকে প্রমাণ হয় এটি একটি জঘন্যতম হত্যাকান্ড। এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম আইনী প্রক্রিয়ায় এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে ১১জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১০জনের ৭দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। অপর জন হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াজ অসুস্থ্যতার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি সুস্থ্য হয়ে উঠলে তার রিমান্ডের জন্য আমরা আবেদন করবো।

তিনি আরো বলেন, পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনকে যেভাবে একটি অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, এটি কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা নয়। তারা কোন চিকিৎসা জানে না, সে ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞান বা ধারণাও নেই। তাদের কোন লাইসেন্স নেই। যারা চিকিৎসার নামে নির্যাতন করেছে, তারা কেউ চিকিৎসক নন। তারা শুধু ওয়ার্ড বয় ও স্কুল কলেজের ছাত্র। শুধু পুলিশের বেলায় নয়, যেকোন সাধারণ মানুষকে নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ সবসময় কাজ করছে। আমরা পুলিশের মেধাবী সদস্য শিপনের মৃত্যু হয়তো ফিরিয়ে দিতে পারবো না, তবে পুলিশের প্রতিটি সদস্য নিহত শিপনের পরিবারের সঙ্গে আছে এবং থাকবে। আমরা শিপনের পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি। শুধু পুলিশ সদস্য বলে কথা নয়, তার মতো যাতে আর কোন বাবা মায়ের বুক খালি না হয় সেজন্য দৃষ্টান্ত মূলক বিচার হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। আমরাও চাই পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপন হত্যার দৃষ্টান্ত মূলক বিচার হোক।

এসময় তার সঙ্গে নিহতের ব্যাচমেট পুলিশের ৩৫জন কর্মকর্তাসহ সহকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান, গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রীনা পারভীন ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান আজমল ভুইয়াসহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এসময় উপস্থিত ছিলেন। পরে তিনি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে যান। সেখানে তারা নিহতের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং কবর জিয়ারত ও দোয়া করেন।

এর আগে গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার নিহত এএসপি আনিসুল করিম শিপনের বাসায় যান এবং স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানান। এসময় তার সঙ্গে গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রাসেল শেখ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) শহীদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আমিনুল ইসলামসহ পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে নিহত পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনের হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের বিচারের দাবীতে বুধবার সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ও নিহতের বাসার পার্শ্ববর্তী হাড়িনাল সড়কে পৃথক মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এসময় তারা বিক্ষোভ করে। বুধবার সকালে গাজীপুর শহরে নিহতের সহপাঠি, বন্ধু বান্ধব ও এলাকাবাসী এ মানবন্ধন পালন করে।

প্রসঙ্গতঃ পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপন বরিশাল মহানগর পুলিশে (বিএমপি) সহকারি পুলিশ কমিশনার পদে কর্মরত ছিলেন। গত সোমবার তাকে চিকিৎসার জন্য রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে হাসপাতালের কর্মচারীদের নির্যাতনে তিনি নিহত হন। তার বাসা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বরুদা এলাকায়। তবে তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সম্মানিয়া ইউনিয়নের আড়াল গ্রামে। তার স্ত্রী ও সাফরান নামের চার বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। এসময় কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান, গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রীনা পারভীন মানববন্ধনে অংশ নেন।

ছবির ক্যাপশন ঃ