রাজধানীর আদাবরে হাসপাতাল কর্মচারীদের মারধরে নিহত পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনের পদোন্নতি বিভাগীয় বা মানসিক সমস্যার কারণে হয়নি, এমনটা সঠিক নয়। ভিন্ন কারণে তার পদোন্নতি হয়নি। চাকুরিতে কারো পদোন্নতি আগে হয়, কারো পরে হয়, এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটা আইনী প্রক্রিয়া। আইনী প্রক্রিয়ার কারণে তার পদোন্নতি হচ্ছিল না, পরবর্তীতে যথাসময়ে পদোন্নতি হয়ে যেতো। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান নিহত এএসপি শিপনের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে গাজীপুরে এসে শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান।

তিনি বলেন, নিহত পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনের স্ত্রীকে সম্মানজনক পেশায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন।

বিকেলে তিনি বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পুলিশের নিহত সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনের গাজীপুর শহরের বরুদা এলাকার বাসায় যান। তিনি নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন ও খোঁজ খবর নেন। এসময় পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় নিহতের স্ত্রী, বাবা ও ভাই বোনসহ স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাদেরকে শান্তনা ও আনিসুল করিম হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দেন দেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এসময় নিহতের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফাইজুদ্দিন আহমেদ, বড় ভাই রেজাউল করিম সবুজ বোন শামসুন্নাহার সুমন ও ডা. উম্মে সালমা এবং স্ত্রী শারমিন সুলতানাসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরে তারা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে যান। সেখানে তারা নিহতের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং কবর জিয়ারত ও দোয়া করেন।

ডিআইজি হাবিবুর রহমান আরো বলেন, আমাদের দেশে পুলিশের জন্য নিজস্ব কোন মানসিক হাসপাতাল নেই। পুলিশ সদস্যরা যে কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেন। একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে এএসপি আনিসুল করিম শিপন চিকিৎসা নিতে সরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে তিনি কমফোর্ট মনে করেন নি। তাই তিনি আদাবরের ওই হাসপাতালে গিয়ে ছিলেন। কিন্তু সেখানে কিভাবে তিনি নিহত হয়েছেন তা ভিডিও চিত্র দেখে সবাই অবহিত হয়েছেন। এ ভিডিও চিত্রের বাস্তবতা রয়েছে। সেখানে কিভাবে আনিসুলকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে তা ভিডিও চিত্রে রয়েছে।

এসময় তার সঙ্গে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির, র‌্যাব-৪’র সিও মোজাম্মেল আহমেদ, বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারী ও নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম, নরসিংদীর পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদারসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গতঃ পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপন বরিশাল মহানগর পুলিশে (বিএমপি) সহকারি পুলিশ কমিশনার পদে কর্মরত ছিলেন। গত সোমবার (৯ নবেম্বর) তাকে চিকিৎসার জন্য রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে হাসপাতালের কর্মচারীদের নির্যাতনে তিনি নিহত হন। তার বাসা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বরুদা এলাকায়। তবে তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সম্মানিয়া ইউনিয়নের আড়াল গ্রামে। তার স্ত্রী ও সাফরান নামের চার বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।