১৪ পদ খালি রেখে কংগ্রেসের প্রায় এক বছর পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত কমিটিতে ঠাঁই হয়েছে ২০১ জনের। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর সদস্য সংখ্যার আকারে এটি সবচেয়ে বড় কমিটি। এই কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন কয়েকজন সংসদ সদস্য, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, বিভিন্ন জেলা থেকে ওঠে আসা নতুন মুখ, সিসি কমিটির সদস্য ও সাবেক কমিটির বেশ কয়েকজন। কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন কয়েকজন সাংবাদিকও।

নতুন কমিটিতে বাদ পড়েছেন যুবলীগের গত কমিটির বিতর্কিত নেতারা। পাশাপাশি বয়স ৫৫ বছরের বেশি হওয়ায় বাদ পড়েছেন ৭০ জনের বেশি।

যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ২৭ জন প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে ২২ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচটি পদ ফাঁকা রয়েছে। এই ২২ জনের মধ্যে রয়েছেন— অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ, মঞ্জুর আলম শাহীন, আবু আহমেদ নাসিম পাভেল, শেখ সোহেল উদ্দিন, ডা. খালেদ শওকত আলী, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, স্বতন্ত্র আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, মো. রফিকুল ইসলাম (সাতক্ষীরা), হাবিবুর রহমান পবন (লক্ষ্মীপুর), সাবেক সংসদ সদস্য মো. নবী নেওয়াজ (ঝিনাইদহ), সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী, মো. এনামুল হক খান (ময়মনসিংহ), ড. সাজ্জাদ হায়দার লিটন (সিরাজগঞ্জ), মো. মোয়াজ্জেম হোসেন (ঢাকা), সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার (বরগুনা), সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ (কুষ্টিয়া), ইঞ্জিনিয়ার মৃনার কান্তি জোয়ার্দার (খুলনা), তাজউদ্দিন আহমেদ (পিরোজপুর), সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং (ময়মনসিংহ), মো. জসিম মাতুব্বর (পিরোজপুর), আনোয়ার হোসেন (যশোর) ও এম শাহাদত হোসেন তাসলিম (কুমিল্লা)।

কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন পাঁচজন। তাঁরা হলেন— বিশ্বাস মতিউর রহমান বাদশা (বরিশাল), সুব্রত পাল (কিশোরগঞ্জ), মো. বদিউল আলম (চট্টগ্রাম), ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম (গোপালগঞ্জ) ও মো. রফিকুল আলম জোয়ার্দার (রাজশাহী)।

সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন নয়জন। তাঁরা হলেন— কাজী মো. মাজহারুল ইসলাম (নরসিংদী), ডা. হেলাল উদ্দিন (শরীয়তপুর), ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ (মাদারীপুর), মো. জহির উদ্দিন খসরু, মো. সোহেল পারভেজ (নরসিংদী), আবু মুনির মো. শহিদুল হক রাসেল (চট্টগ্রাম), মশিউর রহমান চপল (মুন্সীগঞ্জ), অ্যাডভোকেট মো. শামীম আল সাইফুল সোহাগ (পটুয়াখালী) ও প্রফেসর ড. মো. রেজাউল কবির (ঢাকা)।

প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি জয়দেব নন্দী (খুলনা)। দপ্তর সম্পাদক হয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ (গোপালগঞ্জ)।

গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদকের পদ পেয়েছেন জহিরুল ইসলাম মিল্টন (সিরাজগঞ্জ), অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন (ফরিদপুর), শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার আলী আসিফ খান রাজিব (গোপালগঞ্জ), আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়্যেদুল হক সুমন (হবিগঞ্জ), আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কাজী সরওয়ার হোসেন (নড়াইল), ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেন পাভেল (রংপুর), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. শামীম খান (বরগুনা), তথ্য ও যোগাযোগ (আইটি) বিষয়ক সম্পাদক মো. শামসুল আলম অনিক (গাজীপুর), সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব মুস্তাফিজ (ফরিদপুর), স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. ফরিদ রায়হান (ঢাকা), তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মীর মো. মহি উদ্দিন (চট্টগ্রাম), জনশক্তি ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক শাহীন মালুম (নারায়ণগঞ্জ), ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক নিজাম উদ্দিন চৌধুরী পারভেজ (মুন্সীগঞ্জ), পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হারিস মিয়া শেখ সাগর (চাঁদপুর), শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুল হাই (নোয়াখালী), কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা (গোপালগঞ্জ), মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুল মুকিত চৌধুরী (হবিগঞ্জ), ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা খলিলুর রহমান সরদার (বরিশাল) ও মহিলা বিষয়ক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন অ্যাডভোকেট মুক্তা আক্তার (শরীয়তপুর)।

উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আদিত্য নন্দী, উপ-দপ্তর সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ নবীরুজ্জামান বাবু, উপ-অর্থ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম দুর্জয়, উপ-শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও পাঠাগার সম্পাদক কাজী খালিদ আল মাহমুদ টুকু, উপ-আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. এনামুল হোসেন সুমন, উপ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক সফেদ আশফাক আকন্দ তুহিন, উপ-ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মো. আলতাফ হোসেন, উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মো. রাশেদুল হাসান সুপ্ত, উপ-তথ্য ও যোগাযোগ (আইটি) সম্পাদক এন আই আহমেদ সৈকত, উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক ফজলে রাব্বি স্বরণ, উপ-স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সম্পাদক ডা. মাহফুজুর রহমান উজ্জল, উপ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শেখ মো. মিছির আলী, উপ-জনশক্তি ও কর্মসংস্থান সম্পাদক শামসুল কবির রাহাত, উপ-ক্রীড়া সম্পাদক মো. আব্দুর রহিম, উপ-পরিবেশ সম্পাদক মো. সামসুল আলম পাটোয়ারি, উপ-শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক মো. ফিরোজ আল-আমিন, উপ-কৃষি ও সমবায় সম্পাদক মোল্লা রওশন জামিল রানা, উপ-মুক্তিযোদ্ধা সম্পাদক মো. গোলাম কিবরিয়া শামীম, উপ-ধর্ম সম্পাদক হরে কৃষ্ণ বৈদ্য, উপ মহিলা সম্পাদক সৈয়াদা সানজিদা শারমীন।

সদস্য পদ রয়েছে ৭৫টি। এরমধ্যে কয়েকটি পদ ফাঁকা রাখা হয়েছে। বাকি পদগুলো ঘোষণা করা হয়েছে।

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল জানান, আমাদের সাংগঠনিক নেত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা কমিটি জমা দিয়েছিলাম। অনুমোদনের পর আজ বিকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভাই আমাদের কাছে সেই অনুমোদিত কমিটি হস্তান্তর করেছে।

এর আগে ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসে সংগঠনটির সভাপতি পদে আসেন শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসেন মাঈনুল হোসেন খান নিখিল। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণার এক বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয়া হলো।

স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর যুবকদের সংগঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে যুবলীগ গঠন করেন তার ভাগ্নে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনি। ১৯৭৪ সালে যুবলীগের প্রথম কংগ্রেসে তিনিই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

সর্বশেষ ২০১২ সালে ষষ্ঠ কংগ্রেসে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান শেখ মনি ও শেখ সেলিমের ভগ্নিপতি ওমর ফারুক। তারপর ছয় বছর নির্বিঘ্নে কাজ করে এলেও গত বছর ক্যাসিনোকাণ্ডে বড় ধাক্কা খান ওমর ফারুক; সেই সঙ্গে সমালোচনায় নাকাল হয় যুবলীগ। এরপর সংগঠনটির অনেকেই ক্যাসিনোকাণ্ডসহ নানা অভিযোগে কারাগারে আছেন। অনেকেই সংগঠন ত্যাগ করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

প্রায় সাত বছর আগে ২০১৩ সালের প্রথম দিকে চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশিদ পূর্ণাঙ্গ কমিটি করেছিলেন। সেই কমিটির নেতাদের অনেকেই ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত থাকাসহ নানা অপরাধে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেখতে ক্লিক করুন