আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ তে কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের দিয়ে জোরপুর্বক কাজ করানোর অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।তবে ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তাদের দিয়ে মাটি ভরাট করানো হচ্ছে বলে জানা ঐ নির্বাহী কর্মকর্তা।
জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ গ্রহন করা হয়। প্রকল্পে ভুমি ও গৃহহীনদের জন্য খাস জমি চিহ্নিত করে গৃহনির্মান করতে আদিতমারী উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১৩০টি পরিবারের গৃহ নির্মাণে পরিবার প্রতি ভ্যাটমুক্ত এক লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সভাপতি ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসারকে (পিআইও) সদস্য সচিব করে গঠিত ৫ সদস্যের উপজেলা আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর বাস্তবায়ন কমিটি কাজ শুরু করেন।

উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের ভেটেশ্বর গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য চিহ্নিত জমি নিচু হওয়ায় সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অর্থে মাটি ভরাট না করে ওই ইউনিয়নের কর্মসৃজন প্রকল্পের (৪০ দিনের কর্মসুচি) শ্রমিকদের দিয়ে ৬দিন ধরে জোরপুর্বক কাজ করানো হচ্ছে বলে শ্রমিক ও কর্মসৃজন প্রকল্প কমিটির অভিযোগ। ফলে কর্মসৃজন প্রকল্পের ঘোষিত রাস্তায় মাটি ভরাটের কাজ বাস্তবায়ন না হওয়ায় এসব রাস্তায় জনদুর্ভোগ তৈরী হয়েছে।

একই অবস্থা কমলাবাড়ি ইউনিয়নের চন্দনপাট পুরাণ বাজারে নির্মাণাধিন আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ তেও। সেখানে ৮দিন ধরে আশ্রয়ণের ঘরের ভিতর বালু ও মাটি ভরাটের কাজ করছেন কর্মসৃজন প্রকল্পের ৭১জন শ্রমিক। যতদিন কর্মসৃজন কাজ চলমান থাকবে ততদিন এসব শ্রমিককে আশ্রয়ণের কাজেই থাকতে হবে বলে ইউএনও’র বরাত দিয়ে জানান কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক সর্দার হাদিউল ইসলাম।
তিনি বলেন, রাস্তায় মাটি ভরাটের কাজে ছিলাম। গত ৭ দিন আগে ইউএনও স্যার জোর করে আশ্রয়ণের ঘরে মাটি ভরাটের জন্য শ্রমিকদের নিয়ে আসেন। যতদিন কাজ আছে ততদিন এখানেই করতে হবে।

চন্দনপাট পুরাণ বাজার আশ্রয়ণে কাজ করা কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক সুনতি বালা বলেন, প্রথম দিকে আশ্রয়ণের জায়গার জঙ্গল পরিস্কার করে দিয়েছি। এখন আশ্রয়নের ঘরে ভেটি বালু ও মাটি ভরাটের কাজ করছি। ইউএনও অফিসের কর্মচারী মিলন কুমার আমাদেরকে রাস্তার কাজ ছেড়ে জোর করে আশ্রয়ণের ঘরে কাজে লাগিয়েছেন। তিনি (মিলন) বলেছেন, “ইউএনও স্যারের নির্দেশ রাস্তায় নয়, আশ্রয়ণে আগে কাজ করতে হবে”। তাই আমরা আশ্রয়ণে ৮দিন ধরে কাজ করছি।

কর্মসৃজন প্রকল্পের সভাপতি পলাশী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মজিবর রহমান ও সদস্য সচিব আমজাদ হোসেন বলেন, রাস্তায় মাটি ভরাটের জন্য কর্মসৃজন প্রকল্প দেয়া হয়েছিল। শ্রমিকরা কয়েকদিন সেখানেই কাজ করেন। কিন্তু গত ৬দিন আগে ইউএনও সাহেব জোর করে শ্রমিকদের আশ্রয়ণের কাজে লাগান। আমরা বাঁধা দিলেও কোন কাজ হয়নি। ইউএনও স্বাক্ষর না দিলে কর্মসৃজন প্রকল্পে শ্রমিকদের বেতন হবে না। তাই শ্রমিকদের কল্যানে বাধ্য হয়েছি আশ্রয়ণে শ্রমিক পাঠাতে। ফলে রাস্তা সংস্কারের জন্য প্রকল্প দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। অপর দিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বরাদ্ধকৃত বাঁচানো অর্থ কারা ভোগ করবেন? প্রশ্ন তোলেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকার দলীয় নেতা বলেন, সভাপতি হিসেবে ইউএনও তদারকি কর্মকর্তা। সেই তদারকি কর্মকর্তা নিজেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ করছেন। ফলে নিম্নমানের কাজ হলেও তদারকির কেউ নেই। এছাড়াও সরকারী কর্মচারীকে অফিসের কাজ ফেলে আশ্রয়ণের নির্মান সামগ্রী সরবরাহের কাজে ন্যাস্থ করেছেন।

কর্মসৃজনের শ্রমিক দিয়ে আশ্রয়ণের ঘরে বালু ভরাট করা হচ্ছে। এসব যেন দেখার কেউ নেই।
উপজেলা আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ও কর্মসৃজন প্রকল্পের বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মফিজুল ইসলাম বলেন, আমি সদস্য সচিব হলেও ইউএনও স্যার সভাপতি হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছেন। কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে প্রকল্পের বাহিরে কোন কাজ করানোর নিয়ম না থাকলেও ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে কিছু কিছু আশ্রয়ণে করা হচ্ছে। ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা নির্দেশনা তুলে নিলে শ্রমিকদের কর্মসৃজন প্রকল্পে পাঠানো হবে।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে কর্মসৃজনের শ্রমিক দিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাঠে মাটি ভরাট করানো হচ্ছে। এসব শ্রমিক দিয়ে গৃহনির্মাণ কাজ বা নতুন ঘরে ভিতর বালু ভরাটের অনুমতি নেই। যদি করে থাকে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।