লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার কেতকীবাড়ী এলাকায় সমকামিতার জেরে ১০ম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) রাত ১০ দিকে উপজেলার কেতকীবাড়ী এলাকার নার্সারি পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ছাত্রী বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছে।
জানা গেছে, উপজেলার কেতকীবাড়ীর নার্সারি পাড়া এলাকার এজাদুলের মেয়ের (১০ম শ্রেণির ছাত্রী) সাথে একই এলাকার রফিকুল ইসলামের কলেজ পড়ুয়া মেয়ের মাঝে দীর্ঘদিন যাবত গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক। দুইজন ছাত্রী হবার সুবাদে এজাদুলের বাড়িতে রফিকুলের মেয়ের অবাধে যাতায়াত ও মেলামেশা ছিলো। এরি এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে শুরু হয় সমকামিতা। রফিকুলের কলেজ পড়ুয়া ঐ মেয়ের মাঝে হরমোনজনীত কারনে ছেলেদের মতো শারীরিক ও মানুষিক পরিবর্তন দেখা যায়। দুই ছাত্রীর চলাফেরা সন্দেহজনক হলে এনিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে কানাঘুষা শুরু হয়। ফলে বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের অবিভাবকগন বসে ঐ দুই ছাত্রীর মাঝে চলাফেরা ও কথাবার্তা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এ বিষয়টি কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি রফিকুলের কলেজ পড়ুয়া ঐ ছাত্রীটি।

এদিকে গত ২৯ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে প্রতিদিনের ন্যায় এজাদুলের স্কুল পড়ুয়া মেয়েটি পার্শ্ববর্তী বিছনদই এলাকায় আবু সায়েম (তোতা মাষ্টার) এর বাড়িতে প্রাইভেট পড়তে যায়। সেখান থেকে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফিরে আসার পথে রফিকুলের ঐ কলেজ পড়ুয়া মেয়ে (যার হরমোন পরিবর্তন হচ্ছে) আত্মহত্যার ভয় দেখি এজাদুলের মেয়েকে নিয়ে অজানা পথে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে এজাদুল রফিকুলের কলেজ পড়ুয়া ঐ মেয়ের মোবাইল নাম্বারে ফোনদিলে সে একেক সময় একেক স্থানের নাম বলে। বিষয়টি সন্দেহজনক হলে এজাদুল তার মেয়েকে উদ্ধারের জন্য ঐদিন সন্ধ্যায় হাতীবান্ধা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরে গোপন সংবাদে জানতে পেরে এজাদুলসহ কয়েকজন লালমনিরহাটের সদর উপজেলার মহিন্দ্র নগর এলাকার কলেজ পড়ুয়া ঐ ছাত্রীর বোনের বাড়ি থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। গতকাল রাতে বিষয়টি নিয়ে হাতীবান্ধা থানায় বসে আপোষ মিমাংসা করার চেষ্টা করে থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) এরশাদুল আলমসহ তদন্ত অফিসার (এস,আই) বজলুল করিম।

পরে থানা থেকে বাড়ি যাবার পর রাত ১০টার দিকে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীটি তার দাদীর ঘরের গলায় ফাঁস দেয়। মেয়েটিকে বাড়ির কোথাও দেখতে না পেয়ে সন্দেহ হলে পরিবারের লোকজন ঐ ঘরে গিয়ে তাকে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে থাকতে দেখে। তাৎক্ষণিক ভাবে তারা মেয়েটি উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অনেক চেষ্টা করার পর মেয়েটিকে বাঁচাতে সক্ষম হয়।

হাতীবান্ধা উপজেলা মেডিকেল অফিসার ডাঃ আনোয়ারুল হক বলেন, মেয়েটিকে নিয়ে আসার পর তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অনেক চেষ্টা করার পর মেয়েটির অবস্থা একটু উন্নতি হলে তাকে রংপুরে রেফার করা হয়। পরে মেয়েটির পরিবার মুচলেকা দিয়ে তাকে মেডিকেলে ভর্তি করান। মেয়েটি বর্তমান মেডিকেলেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে।

এবিষয়ে কথা বলার জন্য কলেজ পড়ুয়া ঐ ছাত্রীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন সুইচ অফ পাওয়া যায়। তবে ঐ ছাত্রীর বাবা রফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমার মেয়েটিকে চিকিৎসার জন্য দুই একদিনের মধ্যে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে।

হাতীবান্ধা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, বিষয়টি নিয়ে উভয় পরিবার ডেকে বুঝিয়ে তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয়। কলেজ পড়ুয়া ঐ ছাত্রীটির মাঝে শারীরিক ও মানুষিক পরিবর্তন দেখা দিলে তার পরিবারকে দ্রুত চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেয়া হয়। তবে বাড়ি যাবার পরে পরিবারের লোকজন স্কুল পড়ুয়া মেয়েটি গালমন্দ করলে সে আত্মহত্যা চেষ্টা করে বলে জানতে পারা গেছে।