গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় প্রেমিকাকে খুন করেছে প্রেমিক ও তার বন্ধু। হত্যার পর হাত-পা বেঁধে নিহতের লাশ বস্তাবন্দী করে সড়কের পাশের ডোবায় ফেলে দেয় তারা। চাঞ্চল্যকর এ খুনের ঘটনায় জড়িত থাকায় নিহতের প্রেমিকসহ দু’জনকে বৃহষ্পতিবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ঘটনার দুই সপ্তাহ পর এ চাঞ্চল্যকর এ খুনের রহস্য উম্মোচন করেছে পিবিআই। বিকেলে গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার বরইচুটি এলাকার মসজিদের ইমাম মোজাম্মেল হকের ছেলে নিহতের প্রেমিক আল আমিন হোসেন (২৮) এবং আল আমিনের বন্ধু একই থানার খোলারটেকি এলাকার শাহজাহান মোল্লার ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (২৮)। এদের মধ্যে আল আমিন প্রাইভেটকার চালক ও সাজ্জাদ বাস কাউন্টারের কর্মী।

পিবিআই এর পুলিশ সুপার জানান, গত ২৬ নবেম্বর কালিয়াকৈর উপজেলার টেকিবাড়ী চাঁনপুর বারবাড়িয়া এলাকার টেকিবাড়ী-চাঁনপুর সড়কের পাশের ডোবার কচুরী পানার ভিতর বস্তাবন্দি একটি অজ্ঞাত যুবতীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের হাত-পা বাঁধা ও গলায় ওড়না পেঁচানো এবং শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার তদন্তকালে পিবিআই গাজীপুর জেলা ইউনিটের একটি টিম আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিহতের পরিচয় সনাক্ত করে। তার নাম মোসাঃ নাজমা খাতুন (২৫)। সে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থানার চরদোরতা গ্রামের মৃত ওমর আলী শেখের মেয়ে। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত নিহতের প্রেমিক আমিন হোসেন (২৮) এবং তার বন্ধু সাজ্জাদ হোসেনকে (২৮) বৃহষ্পতিবার সকালে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের আদালতে হাজির করা হলে তারা চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি আদালতে প্রদান করে। পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডের সময় ব্যবহৃত প্রাইভেট কার, নিহতের ব্যবহৃত নাকফুল এবং মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে। এরপ্রেক্ষিতে ঘটনার প্রায় দু’সপ্তাহ পর চাঞ্চল্যকর নাজমা খাতুন খুনের রহস্য উন্মোচন হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, স্বামী পরিত্যাক্তা এক সন্তানের জননী নাজমা কালিয়াকৈরের ভাড়া বাসায় একা বসবাস করতেন। প্রায় আড়াই বছর আগে তার সঙ্গে প্রাইভেটকার চালক আল আমিনের পরিচয় হয়। এর জের ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের ও দৈহিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। সম্প্রতি নাজমা বিয়ের জন্য চাপ দিলে প্রেমিক আল আমিন নানা টালবাহানা করতে থাকে। বিয়ে না করায় আল আমিনের বাড়িতে গিয়ে উঠে নাজমা। পরে বিয়ের আশ^াস দিয়ে নাজমাকে ফেরত পাঠানো হয়। এলাকাবাসীর সামনে এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয় আল আমিন। এর জের ধরে গত ২৬ নবেম্বর সকালে বেড়ানোর কথা বলে নাজমাকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে সভারের কবিরপুর থেকে আল আমিন তার প্রাইভেটকারে উঠিয়ে পাশের সিটে বসায়। এসময় আল আমিনের বন্ধু সাজ্জাদ কারের পিছনের সিটে বসা ছিল। কিছুদুর যাওয়ার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সাজ্জাদ পেছন থেকে গাড়িতে থাকা গামছা দিয়ে নাজমাকে শ^াসরোধে হত্যা করে। পরে হাত-পা বেঁধে নিহতের লাশ একটি চটের বস্তায় ভরে সড়কের পাশের ডোবায় ফেলে পালিয়ে যায় তারা।