রাইফেল। কখনো কাঁধে ঝোলানো, কখনো হাতে। বছরের পর বছর ধরে পুলিশের মাঠপর্যায়ের সদস্যদের এভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখে সবাই অভ্যস্ত। তবে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রাইফেল বয়ে বেড়ানোর অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশে। উন্নত বিশ্বের আদলে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের দেওয়া হবে ছোট পিস্তল। এ জন্য বাংলাদেশ পুলিশে সংযোজন করা হচ্ছে ট্যাকটিক্যাল বেল্ট। ছয় চেম্বারের আধুনিক এই ট্যাকটিক্যাল বেল্টেই থাকবে পিস্তল, হ্যান্ডকাফ, অতিরিক্ত ম্যাগাজিন, এক্সপেন্ডেবেল ব্যাটন, পানির পটসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের হাত থাকবে সম্পূর্ণ খালি। এতে বিপদগ্রস্ত মানুষের যে কোনো প্রয়োজনে দ্রুত সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে পারবে পুলিশ। আবার অপরাধীকে দ্রুত ঘায়েল করতে ট্যাকটিক্যাল বেল্টে থাকা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারবেন অনায়াসেই।

পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ট্যাকটিক্যাল বেল্টের মূল স্লোগান হলো ‘হ্যান্ডস ফ্রি পুলিশিং’ মানে হাত খালি রাখা। এতে বড় অস্ত্র বহনের ঝক্কিঝামেলা আর থাকবে না। এতে পুলিশের কাজে গতি আসবে, মনোবলও বাড়বে। একই সঙ্গে পুলিশকে দেখতেও আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী লাগবে।

আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনে প্রাথমিকভাবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) পুলিশ সদস্যদের মাঝে ১০ হাজার ট্যাকটিক্যাল বেল্ট সরবরাহ করবে পুলিশ সদর দপ্তর। এর পর পর্যায়ক্রমে পুরো পুলিশ বাহিনীর সব সদস্যকে এই ট্যাকটিক্যাল বেল্ট দেওয়া হবে। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ পুলিশকে আধুনিকভাবে গড়ে তোলার অংশ হিসেবে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি পুলিশে ট্যাকটিক্যাল বেল্টের মতো আধুনিক সরঞ্জাম যুক্ত করতে যাচ্ছেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জনবান্ধব পুলিশিংয়ের মূল কথা পুলিশকে কাছের ভাববে সাধারণ মানুষ। বিপদে ভরসা মনে করবে। এ জন্য উন্নত বিশ্বে পুলিশের অস্ত্র সাধারণত প্রয়োজন ছাড়া প্রদর্শন করা হয় না। আবার এমনভাবে পুলিশ সদস্যদের কাছে সংরক্ষণ করা হয়, যেন অপরাধীদের দমনে দ্রুত সেটি ব্যবহার করতে পারে। ট্যাকটিক্যাল বেল্টের কারণে অস্ত্র থাকবে হিডেন (লুকানো)। এতে সাধারণ মানুষের পুলিশের অস্ত্রের দিকে সহজে নজর না পড়ে। ট্যাকটিক্যাল বেল্টে ছয়টি চেম্বার থাকবে। এসব চেম্বারে প্রাথমিকভাবে থাকছে ছোট অস্ত্র, এক্সপেন্ডেবল ব্যাটন, ওয়্যারলেস সেট, ৫০০ মিলিলিটার পানির বোতল ও ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের জন্য পজ মেশিন। পরবর্তী সময়ে ট্যাকটিক্যাল বেল্টে বডি অন ক্যামেরা, টর্চলাইটসহ প্রয়োজনীয় আরও কিছু ফিচার যুক্ত করা হবে। ওয়্যারলেস সেটেও আসছে বড় পরিবর্তন। ওয়্যারলেস সেট এখন আর হাতে নিয়ে কথা বলতে হবে না। ট্যাকটিক্যাল বেল্টে যুক্ত ওয়্যারলেস সেটের জন্য কানে হেডফোন এবং পোশাকের কলার অথবা বোতামে থাকবে স্পিকার। কোমরের বেল্টে অস্ত্র ছাড়া বাকি সবকিছু থাকবে। আর পিস্তলের জন্য নির্ধারিত চেম্বারটি ডান পাশের ঊরু বরাবর পরবেন পুলিশ সদস্যরা। প্রাথমিকভাবে কনস্টেবল থেকে উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের ট্যাকটিক্যাল বেল্ট দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে এসব ট্যাকটিক্যাল বেল্ট। শুরুতে অপারেশনাল ফোর্স, ফুট ও মোবাইল প্যাট্রল টিম, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ট্যাকটিক্যাল বেল্ট প্রদান করা হবে। ডিএমপির সাত হাজার পুলিশ সদস্যকে এবং সিএমপির তিন হাজার পুলিশ সদস্যকে ট্যাকটিক্যাল বেল্ট প্রদান করা হবে। পরে ধাপে ধাপে সব মহানগর, জেলা পুলিশসহ সব ইউনিটের সদস্যদের ট্যাকটিক্যাল বেল্ট প্রদান করা হবে। তবে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটসহ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বড় অস্ত্রের ব্যবহারে পরিবর্তন আসবে না।

পুলিশ জানায়, ডিএমপিতে একই সময়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। আর সিএমপিতে এ সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, বর্তমানে মাঠপর্যায়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা চাইনিজ রাইফেল ব্যবহার করছেন। এটি বহন কষ্টসাধ্য। একই সঙ্গে কাঁধে ও হাতে বড় রাইফেল থাকায় সহজে হাত দিয়ে কিছু করা কঠিন হয়ে পড়ে তাদের। চাইনিজ রাইফেলের পরিবর্তে ‘তরাস’ পিস্তল দেওয়া হবে। তরাসের পাশাপাশি অন্য ছোট পিস্তলও দেওয়া হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের ইকুইপমেন্ট-২ শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) শহিদুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, আগামী ১৬ ডিসেম্বর ডিএমপি ও সিএমপির পুলিশ সদস্যদের মাঝে ট্যাকটিক্যাল বেল্ট প্রদানের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।