জুরাইন কবরস্থানে বড় ছেলে কামরুজ্জামান কবি’র কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন কিংবদন্তি অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান। আজ শনিবার বাদ আসর সূত্রাপুর মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে, বাদ জোহর নারিন্দার পীর সাহেব বাড়ি মসজিদে এ টি এম শামসুজ্জামানের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বরেণ্য এই অভিনেতার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, নারিন্দার পীর সাহেব তার গোসলের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এ টি এম শামসুজ্জামানের মেয়ে কোয়েল আহমেদ বলেন, ‘বাবা নারিন্দার পীর সাহেবের মুরিদ ছিলেন। তার শেষ ইচ্ছা, নারিন্দার পীর সাহেব তার গোসল ও জানাজার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।’

এ সময় তিনি আরও জানান, এ টি এম শামসুজ্জামানকে এফডিসি বা শহীদ মিনারে নেওয়া হবে না। বাদ জোহর নারিন্দায় পীর সাহেবের বাড়িতে প্রথম জানাজা আর বাদ আসর সূত্রাপুর মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তার ইচ্ছে অনুযায়ী, জুরাইন গোরস্থানে বড় ছেলে কামরুজ্জামান কবি’র কবরের পাশে সমাহিত করা হয় একুশে পদকপ্রাপ্ত এই অভিনেতাকে। এদিকে, আজ শনিবার সকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার সূত্রাপুর নিজ বাসায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এ টি এম শামসুজ্জামান।

এর আগে, গত বুধবার তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি হন এ টি এম শামসুজ্জামান। হাসপাতালে তিনি ডা. আতাউর রহমান খানের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে তাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছিল।

১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন এ টি এম শামসুজ্জামান। সহকারী পরিচালক হিসেবে তিনি প্রথমে চলচ্চিত্রাঙ্গণে পা রাখেন। উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন তিনি। অভিনেতা হিসেবে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ১৯৬৮ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘এতটুকু আশা’ সিনেমার মাধ্যমে। এরপর ১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘নয়নমণি’ সিনেমায় খলনায়ক হিসেবে আলোচনা আসেন তিনি।

এ টি এম শামসুজ্জামান প্রথম কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছিলেন ‘জলছবি’ সিনেমার। এরপর অসংখ্য চলচ্চিত্রের কাহিনী, সংলাপ ও চিত্রনাট্য রচনা করেছেন তিনি। ২০০৯ সালে ‘এবাদত’ নামে প্রথম সিনেমা পরিচালনা করেন। যেখানে অভিনয় করেন রিয়াজ ও শাবনূর।

১৯৮৭ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘দায়ী কে’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান এ টি এম শামসুজ্জামান। আর ২০১৭ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি। এছাড়াও শিল্পকলায় অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত করা হয় এ টি এম শামসুজ্জামানকে।