প্রবাসীরা রেমিট্যান্সযোদ্ধা নাকি পরিবারের বোঝা! জীবিকার তাগিদে প্রবাসে রয়েছে ১ কোটিরও বেশি বাংলাদেশি। পরিবারের সুখের আশায় তারা শত কষ্ট মাথা পেতে সহ্য করছে। নিজের সুখ জলাঞ্জলি দিয়ে প্রতিনিয়ত দূর-পরবাসে পাড়ি জমান এসব মানুষেরা। কেউ সুখী হয় কেউ আবার দুঃখে ভরা জীবন পার করে। এসব গোল্ডেন বয়দের বাংলাদেশ বিমানবন্দর থেকে শুরু করে লাশ দেশে আসতে পদে পদে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

চাইলেই সুখ মিলবে এমনটা কিন্তু নয়। তবু জীবনের সঙ্গে অবিরত যুদ্ধ চালায় ভাগ্য উন্নয়নের জন্য রেমিট্যান্সযোদ্ধারা। লক্ষ্য থাকে সবাই মিলেমিশে সুখে থাকবে। দিন-রাত পরিশ্রম করে মাস শেষে যা বেতন পায় সবই দেশে পাঠিয়ে দেয়। নিজের কথা কিংবা ভবিষ্যতের কথা একবারও ভাবার সময় হয় না পরবাসীদের।

এই পরবাসীরাই বিদেশে অনেক কষ্ট করে দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখে। দুঃখের বিষয় দেশে ফিরে তারা পায় না মূল্যায়ন। এমনও আছে দেশে ফিরে মানবেতর জীবনযাপন করে। বাংলাদেশের উন্নতি ও অগ্রগতির প্রধান সোপান রেমিট্যান্স। দেশের বাইরে গতর খেটে লাল-সবুজের পতাকা সমৃদ্ধি বৃদ্ধির জোগান দিয়ে কী পাচ্ছে যোদ্ধারা।

প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্সে গড়ে ওঠা স্তম্ভে মজবুত হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত বুধবার প্রথমবারের মতো ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।

এই রেকর্ড অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এর আগে ৪ হাজার ৩০০ কোটি (৪৩ বিলিয়ন) ডলার ছাড়ায়। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর, করোনাকালে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা ছিল সর্বোচ্চ রিজার্ভ।

দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছাড়ালো ৪ হাজার কোটি ডলার। তারপরেও আমরা প্রবাসীরা সরকারের কাছ থেকে কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাই না। এমনকি বিমানবন্দরে অপমান অপদস্থ হতে হয় এক শ্রেণির অফিসারদের কাছ থেকে। বিমানবন্দর কন্ট্রাকের কথা নাইবা বললাম।

পরিবার-পরিজন ছেড়ে দূর প্রবাসে থেকে হাজার হাজার কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখে আমরা কোনো ধরনের সেবা পাচ্ছি না সরকার থেকে। রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের পরিবার কেন পাবে না সরকারি সুবিধা। তার মানে কি আমরা মুখে মুখে রেমিট্যান্সযোদ্ধা কাগজে কলমে দেশ ও পরিবারের বোঝা।

প্রবাসে বসবাসরত রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের দাবি প্রবাসীদের জন্য যেন সরকারি ভাতা চালু করা হয়। চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে গেলে যেন পরিবার নিয়ে কোনোমতে দুইটা ডাল ভাত খেয়ে বাঁচতে পারি। কারো কাছে যেন বোঝা হয়ে থাকতে না হয়।

রেমিট্যান্সযোদ্ধারা প্রবাসে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে গেলে পরিবারের বোঝা হয়ে থাকতে হয়। কারণ যারা প্রবাসী তারা বেশিরভাগই অল্পশিক্ষিত। পরিবারের হাল ধরার জন্য লেখাপড়া না করে বিদেশে পাড়ি জমান। যারা উচ্চশিক্ষিত তারা দেশে ফিরে যায় না বিদেশেই থেকে যায়।

অনেক রেমিট্যান্সযোদ্ধা অল্পশিক্ষিত হওয়াতে দেশে গিয়ে পায় না কোনো চাকরি, আবার অনেকের নেই কোনো কাজের অভিজ্ঞতা। না করতে পারে কৃষি খামারে কাজ, কারণ আমাদের দেশের সমাজের মানুষগুলো তাদেরকে নিয়ে উপহাস করে। এত বছর বিদেশ থেকে এসে কেন করো কৃষিকাজ?

আমাদের দেশে যদি একজন মানুষ রিকশা চালিয়ে পরিবারের দায়িত্ব নেয় তখন তাকে নিয়ে অনেকেই হাসাহাসি করে। শিক্ষিত হয়ে যদি কোনো ব্যক্তি কৃষিকাজ কিংবা অটোরিকশা চালায় তাহলে তাকে নিয়েও কটূক্তি করতে দ্বিধাবোধ করে না। হায়রে আমার সমাজ!

কিন্তু কলমের খোঁচায় উচ্চপদে চাকরি পেয়ে দুর্নীতি সুদ ঘুষ খেয়ে যারা কোটিপতি হয় তাদেরকে নিয়ে কেউ উপহাস করে না। এই হলো সোনার বাংলার মানুষের ইনসাফ। অল্প শিক্ষিত লোক প্রবাসে গিয়ে দেশে টাকা পাঠায় আর দেশের শিক্ষিত লোকেরা দুর্নীতি করে বিদেশে টাকা পাঠায়।

উন্নত দেশগুলোতে কেউ কোনো কাজকে ঘৃণা করে না। মালদ্বীপের সিটি কাউন্সিলের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ আগে বাইরে লোকেরা করতেন। এখন সেই কাজ করে মালদ্বীপের উচ্চশিক্ষিত কিংবা উচ্চবিলাসী পরিবারের লোকজন। সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দিয়েছে, যেন কেউ বসে না থাকে।

রাত দশটা থেকে বারোটা একটা দুইটা পর্যন্ত এই পরিচ্ছন্নতার কাজ করে আবার দিনের বেলায় অন্য জগায় চাকরি করে। তা নিয়ে মালদ্বীপে নেই কোনো কটূক্তি কিংবা আলোচনা-সমালোচনা। অথচ আমাদের দেশে যারা এই কাজগুলো করে তাদের আমাদের সমাজের মানুষগুলো মানুষই মনে করে না।

মোহাম্মদ মাহামুদুল