কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীর চারটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অগ্নিকাণ্ডে আরও চার মরদেহ উদ্ধার কারা হয়েছে। এনিয়ে নারী ও শিশুসহ ১১ জন মারা গেছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২ হাজার। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহমদ নিজাম উদ্দিন এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সোমবার (২২ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ৮-ডব্লিউ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও অন্তত দশ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাদের বসতঘর পুড়ে গেছে। আগুনে সম্পূর্ণ বাড়ি ঘর পুড়ে যাওয়ায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা গৃহহারা হয়েছে।

আগুনের ঘটনায় দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারকে প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হরেছে বলে জানান চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। আগুনে পুড়ে যাওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আজ সকালে পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা জানান, সোমবার (২২) মার্চ বিকেল ৪টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ৮নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন পার্শ্ববর্তী অন্য ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যার আগেই আগুন একে একে ৮ নম্বর ওয়েস্ট ৮, ১০ সর্বশেষ ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছড়িয়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কক্সবাজার, উখিয়া, রামু ও টেকনাফ থেকে ৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। এসময় দমকল বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনী, পুলিশ, এপিবিএন এর সদস্য রেডক্রিসেন্টের টিম ও স্থানীয় গ্রামবাসী যোগ দেয়। সোমবার রাত ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

তিনি জানান, আগুনে রোহিঙ্গাদের ১০ হাজারেও বেশি ঘর পুড়ে গেছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধরা হলেও এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। এছাড়াও পুড়ে গেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিও অফিস ও পুলিশ ব্যারাক।

অগ্নিকাণ্ডে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লাগোয়া বাংলাদেশি বাসিন্দাদের দুই শতাধিক বাড়ি ঘর পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহমদ নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অন্তত ১০ থেকে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা এখন অনেকটা গৃহহীন। একইভাবে দুই শতাধিক বাংলাদেশি পরিবারের বসতবাড়ি পুড়ে গেছে।

উখিয়ার বালুখালী ৮নং এপিবিএন’র অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মো. শিহাব কায়ছার জানিয়েছেন, ‘আগুনে বালুখালীতে অবস্থানরত ৪নং এপিবিএনের ব্যারাক আংশিক পুড়ে গেছে। তবে অস্ত্র ও মূল্যবান আসবাবপত্র নিরাপদে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আগুনে রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি ঘর ছাড়াও বেশকিছু এনজিও অফিস, স্কুল-মাদরাসা পুড়ে গেছে।

আইএসসিজি এর কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ তাফহিম জানিয়েছে, কুতুপালং বালুখালী এলাকার রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সরকারি ও মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো একসঙ্গে কাজ করেছে। কিন্তু এখনই সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতির উপর বিস্তারিত তথ্য দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি এর তীব্রতা অনেক। হতাহতের এবং ক্ষয়ক্ষতির খবর যাচাই করা হচ্ছে।

তিনি জানান, ক্যাম্প ভিত্তিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তৈরি একটি সিটের হিসাব অনুসারে বালুখালির ক্যাম্প ৮-ইতে ঘরের সংখ্যা ৬ হাজার ২৫০ আর লোকসংখ্যা ২৯ হাজার ৪৭২ জন, ৮-ডব্লিউ ক্যাম্পে বাড়ি ৬ হাজার ৬১৩টি আর লোকসংখ্যা ৩০ হাজার ৭৪৩ জন, ক্যাম্প ৯-এ বাড়ি ৭ হাজার ২০০টি আর লোকসংখ্যা ৩২ হাজার ৯৬৩ জন এবং ক্যাম্প ১০-এ বাড়ি ৬ হাজার ৩২০টি আর লোকসংখ্যা ২৯ হাজার ৭০৯ জন।

তিনি উল্লেখ করেন, অগ্নিকাণ্ডে এই চারটি ক্যাম্পের অধিকাংশ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এটিই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, আগুনের সূত্রপাত নিয়ে এখনো তেমন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি।

তিনি জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে রোহিঙ্গাদের কাছে জানতে চাইলে তারাও নানা তথ্য দিয়ে আসছে। এমনকি রোহিঙ্গারাই একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করে আসছে। তিনি বলেন, তদন্তে বেরিয়ে আসবে আসল ঘটনার তথ্য।