* মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নতুন করে ইতিহাস বিকৃতির কথা বলছেন।
* মির্জা ফখরুল ’৭১ এর পরাজিত শক্তিকে হাওয়া দিয়ে উস্কে দিচ্ছেন।
* বিএনপি’তে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা বহু আগেই রাজাকার আলবদরদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের ঐতিহাসিক ভাষন দিয়েছিলেন। এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। তাঁর ৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম, যেখানে বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও জাতির পিতার জন্ম শতবর্ষ পালন করছি। যে জাতির পিতার জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হতো না, অথচ তার জন্মদিবস পালনেও অনেকের অনীহা। তার কথা বলতেও অনীহা। আজ যে উৎসব হচ্ছে এটাতে অনেকের মনে ঈর্ষার আগুন জ¦লছে। বাংলাদেশ ও জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান এক এবং অভিন্ন। এটাকে আলাদা করে দেখার কিছু নেই। বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে কল্পনা করা যায় না। এখনো অনেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকার করতে পারে নাই। যারা স্বাধীন বাংলাদেশে বাস করবেন অথচ বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করবেন না, তারা তো বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বীকার করেন বলে মনে হয় না।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষের চেতনায় উন্নত রাষ্ট্র গড়ার। একটি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তিনি। সেই সোনার বাংলা গড়ার জন্যই আমরা ’৭১ এ যুদ্ধ করেছিলাম। বহু ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। অথচ ’৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেই স্বপ্নকেও হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সেই কালো অধ্যায় থেকে দেশকে মুক্ত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নত রাষ্ট্র গঠনের জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও দক্ষতায় বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশে^র কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত হয়েছে। এ উন্নয়নের ধারাকে আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই সোনার বাংলা গড়তে হলে আমাদের আরো অনেকদুর যেতে হবে। তিনি স্বাধীনতার এই সুবর্ণজয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শনে দীক্ষিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার আহবান জানান।

বুধবার গাজীপুরস্থ ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠাণে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আহ্সান উল্লাহ মাস্টার অডিটোরিয়ামে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ’৬৯ সালের ২২ মার্চ শেখ মুজিব কারাগার থেকে মুক্তির পরদিন ২৩ মার্চ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে শেখ মুজিবুর রহমানকে তৎকালীন ডাকসু ভিপি জাতীর বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেন। তখন থেকেই তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই সমাবেশে প্রায় ১০ লাখ লোকের সমাগম ঘটে।

মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নতুন করে ইতিহাস বিকৃতির কথা বলছেন। তিনি বলেছেন, একদিনের ভাষনে কখনও দেশ স্বাধীন হয় না। তিনি সঠিক কথা বলেছেন। আমরাও বলি এক ভাষণে দেশ কখনো স্বাধীন হয় না, এক হুঁইসেলের বাঁশিতে কখনো কিছু ঘটে না। দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনতার জন্য জাতিকে প্রস্তুত করেছিলেন। ’৪৮সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে তিনি এ জাতিকে উজ্জীবীত করেছিলেন, সচেতন করেছিলেন, জাগ্রত করেছিলেন, মানুষের মাঝে স্বাধীনতার আকাঙ্খা জাগিয়ে তুলেছিলেন। তারপরই তিনি জনতার ম্যান্ডেট নিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনে একদিকে ছিল বাঙ্গালীর উপর পাকিস্থানীদের ২৩ বছরের নির্যাতন নিপীড়নের ইতিহাস। অপরদিকে ছিল বাঙ্গালী জাতির মুক্তির আন্দোলনের ইতিহাস। এছাড়াও ছিল এ দেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধে আমাদের কি করণীয় তার দিকনির্দেশণা। অথচ ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে জিয়া ওই ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল।

জনগনকে বাদ দিয়ে সরকার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে, মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্যের জবাবে হানিফ বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াসীরা পালন করবেন এটাই স্বাভাবিক। আপনারা তো বহু আগেই রাজাকারের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। আপনাদের দলের মধ্যে দুই একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তারাও বহু আগেই মুক্তিযুদ্ধের কথা ভুলে ওই চেতনাকে বিসর্জন দিয়ে ’৭১ এর রাজাকার আলবদরদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। আপনাদের কাছে তো এই স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী ভাল লাগার কথা নয়। অথচ আজ আপনি উস্কে দিচ্ছেন। এটা আমার কাছে অবাক লাগে। আবার আপনারা নতুন করে শুরু করেছেন। ’৭১ এর পরাজিত শক্তি ধর্ম ব্যবসায়ীরা যারা ’৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে ভারত বিদ্বেষী করে ফায়দা লুটার চেষ্টা করেন তারা আবার সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। মির্জা ফখরুলও গতকাল বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তাদেরকে হাওয়া দিয়েছেন, উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী আমাদের ইতিহাসের একটি স্মরণীয় অধ্যায়। কিংবদন্তি এই মহান নেতা বাঙালি জাতির অধিকার ও মুক্তির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। তাঁর সারাজীবনের স্বপ্ন ছিলো সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানো এবং সোনার বাংলা গড়ে তোলা। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও দর্শন অন্তরে লালন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রকৌশলী সমাজসহ সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান।

অনুষ্ঠানে বিশ^বিদ্যালয়ের পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ) অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. গনেশ চন্দ্র সাহা ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী, সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু নঈম শেখ, অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শামছুদ্দিন, ডুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. তাইবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী বিনয় ব্যানার্জী এবং কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. মোক্তার হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সহকারী অধ্যাপক মো. মাজহারুল ইসলাম ও সহকারী অধ্যাপক রোকসানা আক্তার। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডীন, বিভাগীয় প্রধান, পরিচালক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।