শেষ কর্ম দিবসে কান্নার রোল পড়ে গেল। নিরব নিস্তব্ধ যেন সব! দূর থেকে একজন মালি এসে উপহার দিলেন তার বাগানের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও সুগন্ধি গোলাপটি। অনেকের চোখ ছলছল। অন্যদিকে, উপাচার্যের কনফারেন্স রুমে আয়োজন করা হয়েছে ‘সাফল্যের স্বর্ণগাঁথা ফিরে দেখা ৮ বছর’ শীর্ষক আলোচনা ও স্মৃতিচারণ সভা। সেখানে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সবাই অভুতপূর্ব সম্মাননা দেন তাঁকে। ফুল বিছিয়ে, লাল গালিচায়, কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে সকালে উপাচার্যকে বরণ করা হয়। এভাবেই কাটে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মাননানের মঙ্গলবার শেষ কার্য দিবসটি। দূর প্রযুক্তির মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসিম বানু। জুম ওয়েবিনারে যুক্ত হন বাউবি’র সারাদেশের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী। রেজিস্ট্রার ড. মহা. শফিকুল আলম এর সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ড. নাসিম বানু। সম্মাননাপত্র পাঠ করেন ডিন স্কুল অব এডুকেশন অধ্যাপক সুফিয়া বেগম।

২০১৩ সালের ২৪ মার্চ প্রথম মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. এম এ মাননান যোগদান করেন বাউবিতে। এরপর দ্বিতীয় মেয়াদে আবার চার বছরের জন্য নিয়োগ পান ২০১৭ সালের ২৪ মার্চে। মঙ্গলবার শেষ কর্ম দিবসেও তিনি বিকেল ৪টা পর্যন্ত অফিস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডীন, পরিচালক, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দের সাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময় করেন তিনি।

স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বাউবির ৩০ বছরের ইতিহাসে এটা বিরল। এমন দক্ষ ব্যবস্থাপক, প্রশাসক, শিক্ষাবিদ, মানবিক অভিভাবক আর কেউ আসেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট, অনিয়ম, দুর্নীতি, পদোন্নতি, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি নিয়ে যে অপবাদ ছিল তা প্রযুক্তি বান্ধব একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেছেন। বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছে দেয়া হয় নতুন বই। একই সঙ্গে বাউবি’র মৌলিক শিক্ষা সম্প্রসারণ, ওপেন টিভি সম্প্রচার, শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার, প্রশাসনিক নানা ভোগান্তি কমিয়ে এনেছেন নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে। রিসার্চে এনেছেন পরিবর্তন। পেপারলেস ভার্চুয়াল বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন এবং শিখিয়েছেন সবাইকে। শুধু দেশের বঞ্চিত, প্রান্তিক মানুষের জন্য নয়, বহির্বিশ্বেও অনেকগুলো স্টাডি সেন্টার খুলে শিক্ষা বঞ্চিতদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দেয়ার উদ্যোগকে যুগান্তকারী হিসেবে উল্লেখ্য করেন তারা। বাংলাদেশের শিক্ষা বিস্তারে ড. মাননানকে রোল মডেল হিসেবে উল্লেখ করেন বক্তাগণ।

সব শেষে অধ্যাপক মাননান উপস্থিত সকলের উদ্দেশে বলেন, গত আট বছরে অভিজ্ঞতা, পরিকল্পনা আর প্রচেষ্টার মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়াম-িত যে বিশ্ববিদ্যালয়টি আপনাদের হাতে তুলে দিলাম- আগামী দিনে তা আপনারা বিশ্ব পরিম-লে এগিয়ে নেবেন এটাই আমার স্বপ্ন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, সৃজনশীল ব্যবস্থাপনাবিদ ও শিক্ষাবিদ ড. এম এ মাননান ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টার্ন কেন্টাকি ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির তিনবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, তিনবার নির্বাচিত সিনেটর, ইন্সটিটিউট অব চার্টাড একাউন্টস এর পরিচালক, সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ছিলেন তিনি।

ব্যবস্থাপনা ও বাণিজ্যের কয়েকটি জনপ্রিয় গ্রন্থের লেখক ও শতাধিক গবেষণা প্রবন্ধের রচয়িতা তিনি। ইংল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দিল্লী, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ম্যানিলা থেকে প্রকাশিত হয়েছে কয়েকটি গবেষণা গ্রন্থ। আন্তর্জাতিক গবেষক/পরামর্শক হিসেবে তিনি সুপরিচিত।