নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্টে হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের সঙ্গে থাকা সেই নারীর পরিচয় মিলেছে। মামুনুল হকের সঙ্গে থাকা সেই নারীর নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা (২৭)।

তিনি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কামারগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. ওলিয়ার রহমান মিয়ার মেজো মেয়ে। ওলিয়ার রহমান কামারগ্রাম ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।

মামুনুল হক ওই নারীর নাম আমেনা তৈয়াবা বললেও ওই নারী নিজেকে জান্নাত আরা বলে পরিচয় দেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও গণমাধ্যমে প্রচারের পর দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে এখন ঝর্ণাকে নিয়ে চলছে আলোচনার ঝড়।

তবে জান্নাতের আগে বিয়ে হয়েছে, দুটি সন্তান আছে- এ কথা সবাই জানলেও মামুনুল হকের সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ের কোনো খবরই জানেন না এলাকাবাসী।

ঝর্ণার বাবা ওলিয়ার রহমান ও মা শিরীনা বেগম সাংবাদিকদের জানান, তাদের মেয়ে জান্নাত আরা ঝর্ণার ৯ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল হাফেজ শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তার বাড়ি বাগেরহাটের কচুড়িয়া এলাকায়। তাদের আব্দুর রহমান (১৭) ও তামীম (১২) নামে দুজন ছেলেসন্তান রয়েছে।

ওলিয়ার রহমান জানান, পারিবারিক কলহের জেরে আড়াই বছর আগে শহীদুল্লাহর সঙ্গে ঝর্ণার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তারপর দুই বছর আগে পরিবার থেকে পাত্র দেখে মেয়েকে বিয়ে দেয়ার কথা বললেও ঝর্ণা বলতেন তার বিয়ে হয়ে গেছে। তার জন্য আর কোনো পাত্র দেখতে হবে না।

তার বাবা আরো জানান, ঝর্ণা কাকে বিয়ে করেছে সে কথাটি পরিবারকে জানায়নি কখনো। শুধু একবার ভিডিওকলে তার দ্বিতীয় স্বামীকে দেখিয়েছিল; কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি সেই ব্যক্তি মাওলানা মামুনুল হক ছিলেন।

প্রথম স্বামী হাফেজ শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদুল্লাহর সঙ্গে জান্নাত আরা ঝর্ণার পরিবারের কোনো যোগাযোগ আছে কিনা- জানতে চাইলে তারা জানান, ডিভোর্সের পর শহীদুল্লাহর সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ রাখেননি তারা।

ওয়ালিয়ার রহমানের (ঝরনার পিতা) প্রতিবেশী ও কামারগ্রাম আদর্শ ডিগ্রি কলেজের ভাইস-প্রিন্সিপাল ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান সাইক্লোন জানান, ঝরনার পিতা ওয়ালিয়ার ভাই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সহজ সরল মানুষ। কট্টর আওয়ামীপন্থী নেতা, তার মেয়ের আগে বিয়ে হয়েছে। তার দুই ছেলেও আছে, পরে বিয়ে হয়েছে কিনা জানি না। তবে তার পরিবারও সম্ভবত জানে না। জানলে গ্রামবাসীতো অন্তত জানতো।

গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোনায়েম খান বলেন, ‘ঝর্নার বাবা ওলিয়ার রহমান সহজ-সরল মানুষ। কামারগ্রাম চার নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি তিনি। তার মেয়ের আগে বিয়ে হয়েছে। সেই ঘরে দুই ছেলে আছে। পরে বিয়ে হয়েছে কি না তা আমাদের জানা নেই। গ্রামের কেউ দ্বিতীয় বিয়ের কথা জানেন না।’

সোনারগাঁওয়ের রয়্যাল রিসোর্টের কক্ষ ভাড়ার সময় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নিজের নাম সঠিক লিখলেও তার সঙ্গীনির নাম লুকিয়েছেন। সেই নারী নিজের নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা লিখলেও মামুনুল রিসোর্টের নথিতে তার উল্লেখ করেছেন আমেনা তাইয়্যেবা। তবে তাইয়্যেবা তার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর নাম।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা শুনতে পেরেছি তার (মামুনুল) আসল স্ত্রীর নাম আমেনা তাইয়্যেবা। বিষয়টির তদন্ত করছি।’

শনিবার বেলা দুইটার দিকে সাদা রঙের একটি গাড়ি নিজেই চালিয়ে রিসোর্টটিতে যান মামুনুল। ভাড়া করেন এক্সিকিউটিভ ডিলাক্স (সেমি সুইট) কক্ষ। এই কক্ষগুলোর ভাড়া এমনিতে ১০ হাজার টাকা। সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আর ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ যুক্ত হয়। তবে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ ডিসকাউন্ট করে মামুনুল হককে সাত হাজার টাকায় ভাড়া দেয়। হেফাজত নেতা ১২ ঘণ্টার জন্য ভাড়া করে যান ৫০১ নম্বর কক্ষটি। সেখানে এক ঘণ্টা অবস্থানের পর মামুনুল খাবারের অর্ডার করেন। এরপর সাড়ে পাঁচটার দিকে শুরু হয় হাঙ্গামা।

স্থানীয় যুবকরা মামুনুলকে ঘিরে ঘরে যখন একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন তখন তিনি ওই নারীর পরিচয় দেন আমেনা তাইয়্যেবা। বলেন তার শ্বশুরবাড়ি খুলনায়, শ্বশুরের নাম জাহিদুল ইসলাম। তবে তার এই বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে সেই মেয়ের বক্তব্যে। তিনি নিজের নাম বলেন জান্নাত আরা ঝর্ণা। বাবার নাম লেখেন ওলিয়র রহমান। বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়।

মামুনুল যখন বেকায়দায় পড়েন, তখন তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে হেফাজতে ইসলামের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তারা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে জড়ো করে হামলে পড়ে রিসোর্টে। ব্যাপক ভাঙচুর করে ছিনিয়ে নেয় মামুনুল হককে।